রুদ্রবার্তা২৪.নেট: দাম্পত্য কলহের জেরে দুই মাস বয়সী শিশু সন্তানকে পানিতে ফেলে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার খাদিজা আক্তার পিংকি (১৯) নামে এক নারী। রোববার (৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নুরুন্নাহার ইয়াসমিনের আদালতে তিনি জবানবন্দি প্রদান করেছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) জেলা কার্যালয়ের পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ক্লু-লেস এই হত্যা মামলার দীর্ঘ সময় পর একটি চিরকুটের সূত্র ধরে তদন্ত শুরু করে পিবিআই। চিরকুটের মাধ্যমেই মামলার জট খোলা শুরু করে। পরে নিহত শিশুর মাকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের পর জিজ্ঞাসাবাদ করি। পরে তিনি শিশু সন্তানকে পানিতে ফেলে হত্যা করার কথা স্বীকার করেন।
পিবিআই এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, গত বছরের ১৯ এপ্রিল দিবাগত রাক ১২টার দিকে বন্দরের মাধবপাশা (কান্দিপাড়া) গ্রামের জাবেদ আলীর বাড়ি থেকে ইমাম হোসেন নামে দুই মাস বয়সী শিশু নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া যায়। পরে ২১ এপ্রিল সকাল সাতটার দিকে বাড়ির পাশে পুকুর ছেলে ওই শিশুর মরদেহ পাওয়া যায়। এই ঘটনায় নিহতের পিতা মো. রুবেল বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই সময় নিহতের মা খাদিজা আক্তার পিংকি জানান, ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় তার শিশু সন্তানকে কেউ চুরি করে নিয়ে যায়।
পুলিশ সদরদপ্তরের নির্দেশে মামলার তদন্তভার নেয় পিবিআই নারায়ণগঞ্জ জেলা কার্যালয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক সাইফুল আলম ৩০ জুলাই মামলার তদন্ত শুরু করেন। পরিদর্শক সাইফুল আলম জানান, তদন্তের এক পর্যায়ে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে আসামির বাসা থেকে সাত শব্দে লেখা একটি ছোট কাগজ উদ্ধার করা হয়। ওই কাগজে লেখা ছিল, ‘বাচা গড়ে গড়ে চুরি করমু সাবথাব’। এই কাগজের লেখার সাথে মিল খোঁজার জন্য পরিবারের লোকজনসহ আশেপাশের অনেকের নমুনা লেখা সংগ্রহ করা হয়। পরে ভুক্তভোগী শিশুর মা খাদিজার হাতের লেখার সাথে ওই লেখার মিল পাওয়া যায়। আদালতের মাধ্যমে নমুনা লেখা বিশেষজ্ঞ দ্বারা তুলনামূলক পরীক্ষা করেও মিল পাওয়া যায়।
রোববার আসামি খাদিজাকে পিবিআই কার্যালয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে পিবিআই বলছে, তার স্বামী রুবেল তাকে বার বার টাকার জন্য চাপ দিত। স্বামী তাকে উপার্জন করে সংসার চালানোর কথা বলতো। তাকে ভরণ-পোষণ দিতো না। এ নিয়ে পরিবারের লোকজনেরও উপহাস শুনতে হয়েছে তাকে। নানা ধরনের চাপের কারণে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে সে তার দুই মাস বয়সী ছেলেকে ঘরের পাশের পুকুরে ফেলে দেয়।
পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম বলেন, আসামি আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। পারিবারিক কলহের কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। তারা উভয়ই আলাদা বসবাস করতো। ওই শিশু তাদের একমাত্র সন্তান ছিল। এই ঘটনায় নিহতের পিতার কোনো সংযোগ বা সম্পৃক্ত পাননি বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।