সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৬ অপরাহ্ন

দশ দল এক বিশ্বকাপ

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৩, ১০.২৯ এএম
  • ৬৯ বার পড়া হয়েছে

সকালের মিষ্টি রোদ দুপুরের মধ্যগগনে উপস্থিত হয়ে ছড়িয়ে পড়লো দীর্ঘকায় গোলাকার ধাতব বস্তুটার গায়ে। মুহূর্তেই বিচ্ছুরণ, চিকচিক করে উঠলো বলের মতো গোলাকার অংশটা। সোনালী আলো ধাঁধিয়ে তুললো চারপাশ।

এই আলোর পরশ পেতেই চার বছর অন্তর ২২ গজের বিশ্বমঞ্চে মহারণের মহাযুদ্ধে নেমে পড়ে ক্রিকেট খেলুড়ে দেশগুলো। কেবলমাত্র একটি সোনালী ট্রফির আশায়। ১১ কিলোগ্রাম ওজনের ট্রফির জন্য এবার লড়াইয়ের ময়দানে নেমেছে বিশ্ব ক্রিকেটের দশটি জাতি।

ক্রিকেটের অন্যতম পরাশক্তি ভারত। ক্রিকেট খেলাটা ভারতে শুধু ব্যাট-বলের গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ নয়, ভারতীয়রা এটাকে ধর্মের মতো শ্রদ্ধা করে। পূজার বেদীমূলে রোজ লুটিয়ে পড়ে অজস্র প্রার্থনা। এক যুুগ হয়ে গেল তেরঙ্গার হৃদয় মন্দিরে সোনালী ট্রফির আলোকছটা বিচ্ছুরণ ছড়ায় না। এবার সেই অপেক্ষা অবসানের পালা।

রোহিত শর্মার হাত ধরে ১৩৮ কোটির জনতার পতাকা বহন করবে ওরা ১৫ জন। তেরঙ্গার সোপানতলে তৃতীয়বার উৎসবের উপলক্ষ্য এনে দিতে লড়াইয়ে নামছেন রোহিত শর্মা-বিরাট কোহলি-শুভমান গিলরা।

সংখ্যার ধারাপাত সবসময় পেছন থেকে সামনের দিকেই এগোয়। ক্ষণিকের জন্য সামনে থেকে পেছনে ফেরা যাক। ১৯৯৯ থেকে ২০২৩, ২৪ বছরের দীর্ঘ পথ। বিশ্বকাপের রাজ্যে নবীন শিশু থেকে যৌবনের মধ্যগগন পেরোনোর পথে বাংলাদেশ। অথচ এই দীর্ঘ পথে কেবল হতাশা, দীর্ঘশ্বাস আর বেদনার নির্মম খেলা।

ছয়টি বিশ্ব আসর শেষেও টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ার অর্জনে কেবল বিষণ্ণ মলিন মুখ। এবার সেই মুখে হাসি ফোটানোর ভার নিয়েছেন সাকিব আল হাসান, বাংলাদেশ ক্রিকেটের রাজপুত্র। তারুণ্যের কথায় অভিজ্ঞতার সুরে চূড়ান্ত বিজয় সঙ্গীতটা এবার না হয় বেজেই উঠুক।

পাকিস্তানকে সবশেষ শিরোপা এনে দিয়েছিলেন ইমরান খান, ১৯৯২ সালে। এরপর দেশটির ইতিহাসে তারকা-মহাতারকা এসেছেন, ইমরান খানকে ছাপিয়ে গেছেন কিন্তু ইমরান খান হতে পারেননি। এবার সেই ইতিহাস বদলাবার পালা। নেতৃত্বটা দিচ্ছেন বাবর আজম, তার অধীনস্থ তারুণ্য আর অভিজ্ঞতার মিশেলে একদল সৈন্য। দশ দলের লড়াইয়ে ’৯২ এবার ফিরে আসতেই পারে।

মহারণের এই লড়াইয়ে আছে ক্রিকেটের জন্মদাতা ইংল্যান্ডও। সবশেষ বিশ্বকাপেই বাজিমাত করে দিয়েছিল জশ বাটলারের দল। এবারও আরেকবার সোনালি ট্রফিটা উচিয়ে ধরতে চান বার্মিংহ্যাম প্যালেসের সামনে। সেই লক্ষ্য নিয়েই উপমহাদেশের মাটিতে নতুন গল্প লেখার উপকরণ সমেত হাজির হতে যাচ্ছে ইংলিশরা।

তাসমান সাগরের দুই পাড়ের দুই বাসিন্দাও থাকছে গঙ্গার উপকূলে। তাসমান থেকে গঙ্গার দূরত্ব ঘোচাতে চায় নিউ জিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। নিউ জিল্যান্ডের গল্পটা অবশ্য দুঃখের বাগিচার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত ছাড়িয়ে যাওয়ার মতোই। যার দৃশ্যপটে কেন উইলিয়ামসন।

ক্রিকেটের ঋষি খ্যাত এই ভদ্রলোক চার বিশ্বকাপ খেললেও সোনালী ট্রফিটা কেবল দেখেই গেছেন, সোনালী আলোর বিষাদ মেখেছেন চোখেমুখে। ছুঁয়েই দেখা যে হলো না! গঙ্গার পাড়ে সোনালী আলোয় এবার নিশ্চয়ই ভাসতে চাইবে উইলিয়ামসন ও তার দলবল।

এবার আছে বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পাঁচবার শিরোপা নিজেদের করে নেওয়া অস্ট্রেলিয়াও। নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে ‘হেক্সা’ মিশনে নামছে অজিরা। সোনালী ট্রফির ঝলমলে আলোয় নিজেদের পরিপূর্ণ করতেই চাইবে প্যাট কামিন্সের দল। আর ওই যে ডেভিড ওয়ার্নার নামের ভদ্রলোক, দশ দলের মহারণ শেষে সোনালী চুলের লোকটাকে সোনালী ট্রফি হাতে দেখতে রাজার মতোই লাগার কথা। তাতে তাসমানের এপাড়ে আরেকবার হতে পারে হলদে উৎসব।

অর্জুনা রানাতুঙ্গা বোধহয় জীবনে একবারই প্রাণখুলে হেসেছিলেন। ১৯৯৬ সালের ১৭ মার্চ। সেদিন তার সঙ্গে হেসেছিল দ্বীপরাষ্ট্রও। এরপর কেটে গেছে কত সময়। কুমার সাঙ্গাকারা থেকে শুরু করে মাহেলা জয়াবর্ধনে, কারও হাসিই সোনালি আলোয় চকচক করে ওঠেনি। সেই দায়িত্ব এবার দাসুন শানাকার কাঁধে। দশ দলের মহারণে লঙ্কান দ্বীপে নতুন গল্প হতেই পারে।

যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানও এসে গেছে মহামঞ্চে। গুলির শব্দ, বারুদের গন্ধ আর দেয়ালে বুলেটের দাগের জায়গায় এবার তারাও ফোটাতে চায় সুবাসিত ফুল। যা সৌরভ ছড়িয়ে প্রেম জাগাবে। সঙ্গে বুলেটের দাগ মুছে দিতে চায় সোনালি ট্রফির ঝকঝকে আভায়। এদিকে দক্ষিণ আফ্রিকাও চায় নিজেদের সোনালী সময় ফিরিয়ে আনতে। বাদ যাচ্ছে না বৈশ্বিক বাছাইয়ে নিজেদের জানান দেওয়া নেদারল্যান্ডসও। নিজেদের দীর্ঘদিনের সাধনা ডাচরা এবার রাঙাতে চায় তেরঙ্গার ছায়াতলে কমলা উৎসবে।

কোহলির কাভার ড্রাইভের সৌন্দর্য্য, সাকিবের ঘূর্ণিজাদুর মায়াবী লোলুপতা, আফ্রিদির বাউন্সারের নৃত্য, বাটলারের উইলোবাজির ঝঙ্কার, স্টার্কের ইয়র্কারের নির্মমতা কিংবা রশিদের গুগলির বিস্ময়তা; সব আবার একই তীর্থে মিলেছে কেবল ‘এক বিশ্বকাপ’- এর নেশায়।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort