রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪২ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

দক্ষিণ আফ্রিকায় ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৪ মার্চ, ২০২২, ৩.৪৬ এএম
  • ১৬৯ বার পড়া হয়েছে

‘আমি উড়ে যেতে চাই ডানা মেলে’- পেসার তাসকিন আহেমেদের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করে লিখেছেন সাবেক অধিনায়ক শাহরিয়ার নাফীস। সে ছবিতে দুই হাত প্রসারিত করে নিজের ‘ট্রেডমার্ক’ সেলিব্রেশন করছেন তাসকিন। যেন উড়ে যেতে চাইছেন। তাসকিনের মতো করেই আজ উড়ছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকায় এমন ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের পর বাংলাদেশ দলকে আটকানোর সাধ্য কার?

এই তো কদিন আগে ক্রিকেট পরাশক্তি ভারত দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে রীতিমতো নাকানিচুবানি খেয়ে এসেছে। সিরিজ হেরেছে ০-৩ ব্যবধানে। সেই দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়েই বাজিমাত বাংলাদেশের। তিন ম্যাচ সিরিজের শেষ ম্যাচ ৯ উইকেটে জিতে প্রথমবারের মতো সে দেশে সিরিজ জয়ের স্বাদ পেয়েছে টাইগাররা। এই সফরের প্রথম ম্যাচ জেতার আগে কজনই বা ভেবেছিল এমনও হতে পারে!

সেঞ্চুরিয়নে প্রথম ম্যাচ জয়ের পর অবশ্য জোহানেসবার্গে দ্বিতীয় ম্যাচ হেরে যায় বাংলাদেশ। তবে সেই হারের কোনো প্রভাব সেঞ্চুরিয়নে পড়েনি। বুধবার সিরিজ নির্ধারণী অলিখিত ফাইনাল তামিম ইকবালরা জিতেছেন হেসে খেলে।

টস জিতে আগে ব্যাট করতে নামা স্বাগতিকদের মাত্র ১৫৪ রানে গুঁড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ। বলতে পারেন বাংলাদেশ নয়, গুঁড়িয়ে দেন আসলে পেসার তাসকিন আহমেদ। আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে থাকা তাসকিন একাই তুলে নেন প্রোটিয়াদের ৫ উইকেট, তাও সেরা সেরা সব ব্যাটসম্যানকে আউট করে। চোকারদের কোমর ভেঙে দিয়ে জয়ের কাব্য লেখা শুরু করে দেন এই ডানহাতি পেসার।

১৫৫ রানের লক্ষ্য টপকাতে নেমে তামিমের ফিফটি আর লিটন দাসের অনবদ্য ব্যাটিংয়ে ৯ উইকেট আর ১৪১ বল হাতে রেখে বিশাল জয় তুলে নেয় টাইগাররা। সঙ্গে সুপার লিগের গুরুত্বপূর্ণ ১০ পয়েন্টও যোগ হয়েছে বাংলাদেশের নামে।

তাসকিনের ৫ উইকেটের পর প্রতিপক্ষকে ১৫৪ রানে গুটিয়ে দিয়ে যে আত্মবিশ্বাস সঞ্চয় করে বাংলাদেশ, তার প্রতিফলন দেখা যায় ব্যাটিংয়ে। তামিম-লিটনের ওপেনিং জুটির ঝলমলে ব্যাটিংয়ে জ্বলে-পুড়ে ছারখার হয় সফরকারী বোলাররা।

শূন্য রানে ক্যাচ তুলে দিয়ে জীবন পাওয়া লিটন পরে আউট হন ৪৮ রান করে। ফিফটির দেখা না পেলেও আফসোস থাকার কথা নয়, কারণ ততক্ষণে ওপেনিং জুটির রান পেরিয়েছে শতকের ঘর। অপর প্রান্তে তামিমও তুলে নিয়েছেন ফিফটি। বলা যায় জয়কে হাত ছোঁয়া দূরত্বে রেখেই ফেরেন লিটন।

অন্যপ্রান্তে দারুণ স্বাচ্ছন্দ্যে ছিলেন তামিম। স্ট্রাইক রেটের জন্য সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা সমালোচিত তামিম আজ খেলেন হাত খুলে। দলীয় রান যখন ৭৩, তখন ব্যক্তিগত ফিফটি হয়ে যায় তামিমের। সেটিও আসে মাত্র ৫২ বলে, ৯টি চারের মারে। লিটনের সঙ্গে ১২৭ রানের ওপেনিং জুটির পর সাকিবকে নিয়ে জয়ের বাকি আনুষ্ঠানিকতাও সারেন তামিম। শেষ পর্যন্ত তার ব্যাট থেকে আসে ৮২ বলে ৮৭ রান। কোনো ছয় না মারলেও বাউন্ডারি মারেন ১৪টি।

৯ উইকেটে পাওয়া জয়ের পরেও খানিকটা আফসোস করতে পারেন তামিম। প্রতিপক্ষ আর কিছু রান করলে যে সেঞ্চুরিটাও পেয়ে যেতে পারতেন তিনি। তবে ঐতিহাসিক এই সিরিজ জয়ের কাছে এমন আফসোস ধোপে টেকার কথা নয়।

এদিকে জয় আগেই নিশ্চিত হলেও জয়সূচক রানটা আবার করেছেন পারিবারিক কারণে দুশ্চিন্তায় থাকা সাকিব আল হাসান। ২০ বল খেলে ১৮ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সিরিজ জয়ের ঐতিহাসিক মুহূর্তটাও নিজের করে নেন টাইগার অলরাউন্ডার।

এর আগে টসে জিতে ব্যাট করতে নামা দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের শুরুটা হয় বেশ দাপুটে। সেঞ্চুরিয়নে কুইন্টন ডি ককের পরিসংখ্যান বেশ সমৃদ্ধ। আজ তাকে একপাশে রেখে ইনিংস শুরু করতে নেমে আগ্রাসী ছিল ইয়ানেমান মালামের ব্যাট। ইনিংসের প্রথম ৬ ওভারেই স্কোর বোর্ডে ৪০ রান উঠে যায়। এই জুটি যখন ধীরে ধীরে মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছিল, তখন দৃশ্যপটে মেহেদী হাসান মিরাজ। বিধ্বংসী হওয়ার আগেই তিনি ফেরালেন ডি কককে।

মালানের সঙ্গে কাইল ভেরেইনার দ্বিতীয় উইকেটের জুটিটাও ভয় ধরাচ্ছিল। এবার দায়িত্ব নিলেন পুরোনো বলে বিধ্বংসী হয়ে ওঠা তাসকিন। ইনিংসের ১৩তম ওভারের তৃতীয় বলে ফেরালেন ভেরেইনাকে। অফ স্টাম্পের বাইরের বল ড্রাইভ করেন ভেরেইনা। বল তার ব্যাটে লেগে ভেঙে দেয় স্টাম্প। ১৬ বলে একটি চারে ভেরেইনা করেন ৯ রান। এই উইকেটের পরেই যেন মোমেন্টাম পেয়ে যায় বাংলাদেশ। ৬৬ রানে ১ উইকেট থেকে ৮৩ রানে পাঁচ! ১৭ রানে নেই ৪ উইকেট।

ভেরেইনাকে আউট করার পর তাসকিন ফেরান ওপেনার মালানকে। ডানহাতি পেসারের বাড়তি বাউন্স পাওয়া বল মালানের ব্যাটে ছুঁয়ে জমা পড়ে মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসে। ৫৬ বলে ৭ চারে ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান করেন ৩৯ রান।

এরপর সাকিব ফেরান প্রতিপক্ষ অধিনায়ককে। এলবিডব্লিউয়ের শিকার হয়ে ১১ বলে ২ রান করে বিদায় নেন টেম্বা বাভুমা।

সাকিবের পর সাফল্য পান শরিফুল ইসলামও। নিজের দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে প্রথম বলেই দারুণ এক ডেলিভারিতে আউট করেন রাসি ফন ডার ডুসেনকে। এই প্রোটিয়া ব্যাটার করেন ৪ রান।

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে ডাক পেয়েও খেলতে না যাওয়া তাসকিন দেশের জন্য কতটা নিবেদিত তার প্রমাণ দিলেন মাঠেই। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে স্বাগতিকদের পরের ৩ উইকেট তুলে নিয়ে নিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো পাঁচ উইকেটের স্বাদ পান তিনি। একে একে ফেরান ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস (২০), ডেভিড মিলার (১৬) আর কাগিসো রাবাদাকে (৪)। রাবাদাকে ফিরিয়ে পাঁচ উইকেটের কোটা পূর্ণ করেন তাসকিন।

১২৬ রানে ৮ উইকেট হারানো দলটি শেষদিকে কেশভ মহারাজের ২৭ রানের কল্যানে কোনোরকমে দেড়শর ঘর পার করে। অলআউট হয় ১৫৪ রানে।

তামিম-লিটন-সাকিবের সাবলীল ব্যাটিংয়ে যা হেসে খেলেই তাড়া করে ফেলে বাংলাদেশ। গড়ে ইতিহাস।

এই জয়ের ফলে সুপার লিগে নিজেদের নামের পাশে গুরুত্বপূর্ণ আরো ১০ পয়েন্ট যোগ করল টেবিলের শীর্ষে থাকা বাংলাদেশ। ১৮ ম্যাচ খেলে ১২ ম্যাচ জিতে ১২০ পয়েন্ট এখন লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইংল্যান্ড বাংলাদেশের চেয়ে ২৫ পয়েন্ট পিছিয়ে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort