দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে টাঙ্গাইল রেলস্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা কমিউটার ট্রেনে আগুন লাগার ঘটনাকে বড় ধরণের নাশকতা বলছেন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ। ঘটনা তদন্তে গঠন করা হয়েছে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি।
প্রত্যক্ষদর্শী রেলকর্মীরা বলছেন, আগুনের এত তীব্রতা ছিল, দ্রুত ইঞ্জিন স্থানান্তর না করলে পুরো এলাকায় বিপর্যয় নেমে আসতে পারত। জড়িতদের শনাক্ত ও আইনের আওতায় আনতে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। ঘটনার পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও যাত্রীদের মাঝে ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
টাঙ্গাইল রেলওয়ে স্টেশনে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে বুধবার (১৫ নভেম্বর) দিবাগত রাত ২টা ৫০ মিনিটের দিকে দুর্বৃত্তের দেওয়া আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ট্রেনটির দুটি বগিতে। কিছু বুঝে উঠার আগে পুড়ে যায় ইঞ্জিনের পাশা থাকা দুটি বগি। এত দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা আগে কখনো দেখেননি স্টেশনে দায়িত্বরতরা। এ দিন সন্ধ্যায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।
টাঙ্গাইল স্টেশনের বুকিং মাস্টার মো. আগুন ও স্টেশন মাস্টার এম কে অনিক বলেন, ‘আমরা কল্পনাও করিনি, এত বড় ঘটনা ঘটবে। প্রথমে কালো ধোঁয়া দেখলাম, এরপর আগুন। এত দ্রুত আগুন ছড়ায় জীবনেও দেখিনি। দ্রুত আগুন ভয়াবহ আকার ধারণ করে। পরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকে অবগত করা হয়।’
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ট্রেনে ২ হাজার লিটার ডিজেল ছিল। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দ্রুত ইঞ্জিন ও পাওয়ার কার স্থানান্তরর করতে না পারলে দাহ্য পদার্থে আগুন লেগে ঘটতে পারত বিস্ফোরণ। আর এতে নেমে আসত পুরো এলাকায় বিপর্যয়।
টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনের পরিচালক আবু নাইম বলেন, ‘আমার সহকারীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাৎক্ষণিক ইঞ্জিন আলাদা করে। কিছুক্ষণ এদিক-সেদিক হলে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারত। ইঞ্জিন ব্রাস্ট হলে ভয়াবহ আকার ধারণ করত।’
এ ঘটনায় বাংলাদেশ রেলওয়ের পাকশি অঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহণ কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে আর জড়িতদের শনাক্তে ও আইনের আওতায় আনতে মাঠে কাজ করার কথা জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা।
প্রাথমিকভাবে আগুনের সূত্রপাত জানাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে বড় ধরণের নাশকতার লক্ষ্যে এমন কর্মকাণ্ড বলে দাবি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্গলা রক্ষাবাহিনীর।
টাঙ্গাইল ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, ‘রাত ৩টার দিকে খবর পেয়ে স্টেশনে গিয়ে ট্রেনের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনি। ট্রেনের ইঞ্জিনের কাছাকাছি দুটি বগি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কমিউটার ট্রেনটি টাঙ্গাইল টু ঢাকামুখী অভিমুখে স্টেশনে দাঁড়িয়ে ছিল। পুলিশ জানিয়েছে, পঞ্চগড় থেকে ছেড়ে আসা ট্রেন টাঙ্গাইল স্টেশন ত্যাগ করার পর আগুন লাগে। আগুনের সূত্রপাত তদন্ত শেষে জানা যাবে।’
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, নাশকতার উদ্দেশ্যে কমিউটার ট্রেনে আগুন দেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২টা ৫৩ মিনিটে পঞ্চগড়গামী ট্রেন এই স্টেশনে আসে। ট্রেনটি ৩ টা ৫ মিনিটে চলে যাওয়ার পর দেখা যায় বগির ভেতর থেকে আগুন বের হচ্ছে। রেল পুলিশ, জেলা পুলিশ ও স্টেশনে থাকা আনসার দৌঁড়ে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। পরে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়া হয়। তারা আধা ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় রেলওয়ে পুলিশ মামলা করবে।
রেলওয়ে পাকশি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক শাহ্ সুফি নুর মোহাম্মদ বলেন, ঘটনার কারণ ও জড়িতদের চিহ্নিত করতে বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে। ধারণা করা হচ্ছে, পঞ্চগড়গামী ট্রেনে কেউ নাশকতার উদ্দেশ্যে সরঞ্জাম আনতে পারেন।