রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৫ অপরাহ্ন

জলে ভাসা জীবন ওদের নৌকায় জন্ম, নৌকায় মৃত্যু

  • আপডেট সময় রবিবার, ২৩ জুলাই, ২০২৩, ৪.৪৫ এএম
  • ৯২ বার পড়া হয়েছে

সুমন আহমেদ, মতলব (চাঁদপুর) : আমাদের খবর নিয়া কি করবেন? কেউ কি আমাদের খবর রাখে? বলছিলেন বেদে বধূ কুহিনুর (২২)।
নদীর তীরে নৌকার মধ্যেই রান্না করছিলেন তিনি। চোখে-মুখে কিছুটা চিন্তা আর আতঙ্কের ছাপ।
মুখে হাসি নেই, জীবন-জীবিকার টেনশনে।
কুহিনুর বলেন, ‘নদী আমাগো জীবন, এই নদীই আবার আমাগো সবার মরণ।
নদীতে মাছ ধইরা যেমন খাবার জুটে, হেই নদীতেই আবার সন্তানদের মৃত্যু হয়। বহু চেষ্টা করি, তাদের বাঁচিয়ে রাখতে।
কিন্তু কখনও কখনও পানিতে ডুবে মারা যায়। অনেক সময় মরদেহ খুঁজেও পাওয়া যায় না’।
দু:সাহসী বেদে নারী কুহিনুর জীবন সংগ্রাম আর কষ্টের গল্প তুলে ধরে বলেন, ‘এক বছর আগে আমার একমাত্র সন্তান পানিতে পড়ে মারা যায়। সেই থেকে কষ্ট নিয়ে বেঁচে আছি। কিন্তু তবুও পানিতেই বাস করতে হবে। এতো সতর্ক থাকি, তবুও বাঁচাতে পারিনি তাকে।

জীবন-জীবিকার তাগিদে পানির ওপরে নৌকায় বসবাসকারী বেদে সম্প্রদায়ের দৈনন্দিন জীবন-জীবিকা ঠিক এমনই। নৌকার মাঝে সুখ-হাসি-আনন্দ খুঁজে পেলেও হারানোর বিয়োগ ব্যথায় কাঁদতেও হয় তাদের।
অবহেলিত-বঞ্চিত এসব মানুষ নদীতে সারাদিন জাল বুনে মাছ শিকার করেন। ওই মাছ স্থানীয় মাছ ঘাটে বিক্রি করে খাবারের ব্যবস্থা করেন। নৌকাতেই ঘর-সংসার তাদের, একমাত্র সহায়-সম্বলও। স্বাভাবিক জীবন থেকে আলাদা জীবনযুদ্ধে তাদের সঙ্গীও কেবল নৌকা আর জাল।
নৌকায় বসবাস করতে গিয়ে কখনও কখনও তাদের হারাতে হয় ছোট ছোট শিশু সন্তানদের।
বেদে সর্দার জসিম বলেন, কয়েকবছর আগে নাছির ও মমিনের দু’টি মেয়ে নৌকা থেকে পড়ে গিয়ে মারা যায়। এমন অনেক ঘটনা রয়েছে। গত কয়েক বছরেই বহরের ৫টি শিশু মারা গেছে। কঠিন জীবনযুদ্ধের মাঝেও সন্তানদের কথা মনে করে আজো কাঁদেন তারা।

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলা সমাজসেবা দপ্তর সূত্রে জানা যায়, মতলব উত্তর উপজেলায় ১৬জন বেদে ভাতার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া শিক্ষাভাতা হিসেবে ৪জন শিক্ষার্থী ভাতা পাচ্ছে। মতলবের মেঘনা নদীতে বসবাসকৃত এসব জেলে জানায়, তাদের পূর্ব পুরুষরাও যুগ যুগ ধরে নৌকাতেই বসবাস করেছেন। তাদের নৌকাতেই জন্ম, নৌকাতেই মৃত্যু।
উপজেলার মেঘনা-ধনাগোদা নদীতে এমন পরিবার রয়েছে ২০০ টিরও বেশি। মাছ ধরা আর বাজারে নিয়ে বিক্রি করাই তাদের কাজ। নৌকাতেই কাটে তাদের দিন-রাত। জন্মের পর থেকেই তারা এখানে আছেন। তাদের আকাঙ্ক্ষ সমাজের আর দশজন মানুষের মতো ঘর- বাড়িতে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করার। তারাও স্বপ্ন দেখে তাদের সন্তান লেখাপড়া শিখে সমাজের বড় হবে। ভাগ্যের চাকা ঘুরবে তাদের। কিন্তু কখনোই তাদের এ স্বপ্ন পূরণ হয়নি। ওদের সেই স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। ওদের পরিবর্তনের জন্য আজও এগিয়ে আসেনি সরকার বা বেসরকারি সংস্থা। এখনও তাদের রোদ-ঝড়-বৃষ্টি আর মহাদুর্যোগও জীবন কাটে নৌকাতেই।

মতলব উত্তর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আনিসুর রহমান তপু বলেন, বেদে সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নয়নে বর্তমান সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহন করেছে। তাদের ভাতা ও শিক্ষা ভাতার অন্তর্ভুক্ত করা এ সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। বেদে সম্প্রদায়ের যুবদের প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা রয়েছে স্বাভলম্বী হওয়ার জন্য।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort