সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০১:৫৪ পূর্বাহ্ন

জনগণের শক্তি নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি

  • আপডেট সময় বুধবার, ৮ মে, ২০২৪, ৯.৪৭ এএম
  • ৪ বার পড়া হয়েছে

ওয়ান ইলেভেন সরকারের সময় যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে ফেরার সময় সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বিমানবন্দরে স্বাগত জানানোর জন্য দলের নেতাকর্মী ও দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মঙ্গলবার (৭ মে) সংসদে ওই সময়কার ঘটনা বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বারবার গ্রেপ্তার হয়েছি। অনেক বাধা, সরাসরি গুলি, বোমা, গ্রেনেড সব কিছু অতিক্রম করে আজকে জনগণের সেবা করতে পারছি। সাহসের সঙ্গে এগিয়ে চলে জনগণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। জনগণের শক্তি নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি।

ওয়ান ইলেভেনের সরকারের সময় ২০০৭ সালের ৭ মে যুক্তরাষ্ট্র থেকে লন্ডন হয়ে সরকারের বাধা উপেক্ষা করে দেশে ফেরার প্রসঙ্গ টেনে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রহমান ওয়ান ইলেভেনের সরকারের সময় ২০০৭ সালের ৭ মে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিয়ে সংসদে অনির্ধারিত আলোচনার সূত্রপাত করেন। বিষয়টি নিয়ে সরকার দলের অপর এমপি ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেনও কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের দিনটি আমার জন্য অনন্য দিন। আমি সেদিন শত বাধা অতিক্রম করে ফিরে এসেছিলাম। সেই সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনেক উপদেষ্টাও ফোন করে বলেছিলেন আপনি আসবেন না। আপনার বাইরে থাকার যা যা লাগে আমরা করবো। আবার কেউ কেউ আমাকে ধমকও দিয়েছিলেন। এ কথা বলা হয়েছিল বাংলাদেশে ফিরলে বিমানবন্দরেই মেরে ফেলা হবে। আমি বলেছিলাম আলহামদুলিল্লাহ বাংলাদেশের মাটিতেই মরবো। কিন্তু আমি আসব।

তিনি বলেন, সমস্ত এয়ারলাইন্সকে নিষেধ করা হয়েছিল আমাকে যাতে বোর্ডিং পাস দেওয়া না হয়। আমেরিকার বিমানবন্দরে তিন ঘণ্টা দাঁড়িয়ে তাদের সঙ্গে ঝগড়া করে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজে করে লন্ডনে আসি। সেখানে আসার পরে যখন প্লেনে উঠতে যাব, তখন আমাকে উঠতে দেওয়া হয়নি। সেদিন প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যেভাবে হোক বাংলাদেশে আসব। এমনকি যখন আমি বিমানবন্দরে রওনা হয় তখন অনেকেই ফোন করে বলেছিল আপনি আসবেন না, আসলে মেরে ফেলে দেবে। আমি পরোয়া করিনি।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তখন বলা হয়েছিল কেউ যাতে বিমানবন্দরে না যায়। এমনকি, আমার দলের ভেতর থেকেও..তখন দলের যিনি সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, তিনি সবাইকে বলে দিয়েছিলেন কেউ বিমানবন্দরে গেলে বহিষ্কার করা হবে। কয়েকজনের নাম নির্দিষ্ট করা ছিল, আমাদের নেতাকর্মী কেউ রাস্তায় থাকতে পারবে না। আমি শুধু মেসেজ দিয়েছিলাম সকলেই থাকবে। আমি প্লেন থেকে না নামা পর্যন্ত তোমরা বের হবে না। আমাকে বলা হয়েছিল গাড়িতে উঠলে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হবে। আমি উঠে ড্রাইভারকে বলেছিলাম যেখানে মানুষ আছে সেখান দিয়ে যাবা। ফ্লাইওভারে উঠবা না। হাজার হাজার মানুষ রাস্তায়। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই পার্টির নেতাকর্মীদের, সেদিন তারা একদিকে রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেছে, আরেকদিকে আমাদের দলের কিছু লোকের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে সংবর্ধনা দিয়েছিল। এটা সংবর্ধনাও শুধু নয়, আমাকে নিরাপত্তাও দিয়েছে। যেন আমাকে কোন দিকে নিতে না পারে। এরপর তো এক প্রকার হাউজ অ্যারেস্ট (সুধা সদন) ছিলাম। কাউকে ঢুকতে দিতো না। হঠাৎ কালে ভদ্রে দু’একজন আসতে পারত।

শেখ হাসিনা ওয়ান ইলেভেনের সরকারের সময় গ্রেপ্তার হওয়ার আগে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন বিশিষ্ট শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনকে দেখতে যাওয়ার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, এটা ঠিক যে সাবিনা ইয়াসমিন অসুস্থ। আমি অনেকটা গেরিলা কায়দায় বেরিয়ে গিয়েছিলাম। কারণ আমি জানি আমাকে বের হতে দেবে না। সেই সময়ে পুলিশের চোখ এড়িয়ে সোজা হাসপাতালে চলে যাই। সেদিন আমি খুব কড়া কিছু কথা বলি। পরদিন সকালেই পুলিশ হাজির, আর্মি হাজির এবং আমাকে অ্যারেস্ট করে। সংসদ ভবনের পরিত্যক্ত একটি কক্ষে নিয়ে যায়। সমস্ত কিছু ফাঙ্গাস পড়া। খুবই নোংরা একটা ভবনে আমাকে বন্দি করে রাখে।

তিনি বলেন, শুধু ওই দিন নয়, ১৯৮৩ সালে এরশাদ সাহেবও আমাদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে গিয়েছিলেন ৩০ নম্বর হেয়ার রোড়ের লাল দালানে। সেখান থেকে ডিজিএফআইয়ের অফিসে নিয়ে যায় জিজ্ঞাসাবাদ করতে। এরশাদ সাহেব বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার করেন। হাউজ অ্যারেস্ট করেন। কখনো সারা রাত কন্ট্রোল রুমে বসিয়ে রাখেন। অনেক বাধা, সরাসরি গুলি। বোমা, গ্রেনেড সব কিছু অতিক্রম করে আজকে এখানে এসে জনগণের সেবা করতে পারছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বাংলাদেশের জনগণ ও আমার দলের নেতাকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে দাঁড়িয়েছি। আজকে অনেকে বেঁচে নেই। তারা এবং সাধারণ জনগণ রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে সেদিন গিয়েছিলেন। যার জন্য আমি দেশে ফিরে আসতে পেরেছি। আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম আমি ফিরে আসবোই। ১৭ মে (১৯৮১ সালের) ওই ভাবে এসেছিলাম। পরে ৭ মে এসেছিলাম ২০০৭ সালে। আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এটুকু বলতে চাই বাবা মা আমাদের শিখিয়েছেন সাহসের সঙ্গে এগিয়ে চলা। সেই সাহসের সঙ্গে এগিয়ে চলে জনগণের জন্য কাজ করা। সেটাই আমি করে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, বাবা-মা-ভাইদের হারিয়ে আমার আর কিছুই ছিল না। দেশের জনগণই আমার একমাত্র শক্তি ও প্রেরণা। এই শক্তি নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ করবো।

ওয়ান ইলেভেনের সময় বোন রেহানার ভূমিকা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমি যখন বন্দি ছিলাম। আমার ছোট বোন রেহানা। সে রাজনীতি করে না। সামনে নেই। কিন্তু সে অসাধ্য সাধন করতে পারে। প্রত্যেকটা জেলা উপজেলার সকল নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছে। ওই লন্ডনে বসেই সে কাজ করেছে। তার জন্যও আমার দোয়া।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort