ওয়েস্ট ইন্ডিজের জনসন চার্লসের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নবম আসরের ফাইনালে আজ কুমিল্লা ৭ উইকেটে হারিয়েছে মাশরাফির সিলেট স্ট্রাইকার্সকে। এই নিয়ে সর্বোচ্চ চতুর্থবারের মত বিপিএলের শিরোপা জিতলো কুমিল্লা। এবারের আসরের প্রথম তিন ম্যাচের হারের পর টানা ১১ ম্যাচ জিতে শিরোপা জিতলো কুমিল্লা।
টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুশফিকুর রহিমের জোড়া হাফ-সেঞ্চুরিতে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৭৫ রান করে সিলেট। শান্ত ৬৪ ও মুশফিক অপরাজিত ৭৪ রান করেন। জবাবে ৮ রানে জীবন পাওয়া চার্লসের অপরাজিত ৭৯ ও লিটন দাসের ৫৫ রানের সুবাদে ৪ বল বাকী রেখেই জয় তুলে নেয় কুমিল্লা।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্বান্ত নেন কুমিল্লার অধিনায়ক ইমরুল কায়েস।
ব্যাট হাতে নেমে প্রথম ওভারেই ১৮ রান পায় সিলেট। কুমিল্লার ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান পেসার আন্দ্রে রাসেলের বলে দু’টি বাউন্ডারি মারেন ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত। কুমিল্লার ফিল্ডারদের ওভারথ্রো থেকে আসে আরও দু’টি চার।
দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে বিদায় নেন সিলেটের আরেক ওপেনার তৌহিদ হৃদয়। রানের খাতা খোলার আগেই কুমিল্লা স্পিনার তানভীর ইসলামের বলে বোল্ড হন হৃদয়।
দলীয় ১৮ রানে হৃদয় ফেরার পর ক্রিজে আসেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। পিঞ্চ হিটার হিসেবে তিন নম্বরে নেমে আজ সুবিধা করতে পারেননি তিনি। তৃতীয় ওভারে রাসেলের বলে ইমরুলকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ৪ বলে ১ রান করা মাশরাফি।
ফাইনালের মত গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ২৬ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে সিলেট। তবে চার নম্বরে নামা মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে রানের চাকা সচল রেখে পাওয়ার-প্লেতে সিলেটকে ৪২ রান এনে দেন শান্ত। অষ্টম ওভারে তানভীরের বলে দু’টি চারে ১১ রান তুলে দলের রান ৫০ পূর্ণ করেন শান্ত ও মুশফিক। একই ওভারের তৃতীয় বলে মিড উইকেটে ৩৭ রানে থাকা শান্তর ক্যাচ ফেলেন ইমরুল।
মুস্তাফিজুর রহমানের করা ১০ম ওভারে ১টি করে বাউন্ডারিতে ১২ রান তুলেন শান্ত ও মুশফিক। ১০ ওভার শেষে সিলেটের রান দাঁড়ায় ২ উইকেটে ৭৯।
১১তম ওভারে ১০ রান পায় সিলেট। ওভারের চতুর্থ বলে এবারের আসরের চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরি করেন শান্ত। এজন্য ৩৮ বল খেলেন শান্ত। হাফ-সেঞ্চুরিতে এবারের আসরে ৫শ রানও পূর্ণ করেন শান্ত। বিপিএলের ইতিহাসে এক মৌসুমে দ্বিতীয়বার কোন ব্যাটার ৫শ রান করলো। এর আগে ২০১৮/১৯ মৌসুমে রংপুর রাইডার্সের হয়ে ১৪ ম্যাচে ৫৫৮ রান করেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার রিলি রুশো।
পেসার মুকিদুল ইসলামের করা ১২তম ওভারে শান্তর ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ১৫ রান পায় সিলেট। ঐ ওভারেই সিলেটের রান ১শতে পৌঁছায়। ১৩তম ওভারে শান্তকে বোল্ড করে কুমিল্লাকে ব্রেক-থ্রূ এনে দেন ইংল্যান্ডের স্পিনার মঈন আলি। ৪৫ বলে ৯টি চার ও ১টি ছক্কায় ৬৪ রান করেন শান্ত। তৃতীয় উইকেটে মুশফিক-শান্ত ৫৬ বলে ৭৯ রান যোগ করেন শান্ত। এই ইনিংস দিয়ে ১৫ ম্যাচে সর্বোচ্চ ৫১৬ রানে এবারের আসর শেষ করলেন শান্ত। যা বিপিএলে এক মৌসুমে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান।
দলীয় ১০৫ রানে শান্ত ফেরার পর চতুর্থ উইকেটে জুটি বেঁধে দলকে ২২ বলে ২৯ রান এনে দেন মুশফিক ও জিম্বাবুয়ের রায়ান বার্ল। ১৩ রান করে মুস্তাফিজের শিকার হন বার্ল।
১৭তম ওভারের প্রথম বলে বাউন্ডারিতে এবারের আসরের দ্বিতীয় হাফ-সেঞ্চুরি করেন মুশফিক। এজন্য ৩৫ বল খেলেছেন তিনি। একই ওভারে সিলেটের শ্রীলংকার থিসারা পেরেরাকে শূন্যতে বিদায় করেন নারাইন।
১৮তম ওভারে দু’বার জীবন পেয়ে ব্যক্তিগত ৯ রানে মুস্তাফিজের বলে আউট হন দক্ষিণ আফ্রিকার জর্জ লিন্ডে। রাসেলের করা শেষ ওভারে মুশফিকের এক ছক্কায় ১২ রান পায় সিলেট। এতে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৭৫ রানের সংগ্রহ পায় সিলেট।
৫টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৪৮ বলে ৭৪ রানে অপরাজিত থাকেন মুশফিক। কুমিল্লার পক্ষে মুস্তাফিজ ২টি, রাসেল-তানভীর-নারাইন ও মঈন ১টি করে উইকেট নেন।
১৭৬ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে মারমুখী মেজাজে ইনিংস শুরু করেন কুমিল্লার দুই ওপেনার লিটন দাস ও নারাইন। ২ ওভারে ২১ রান তুলেন তারা। পেসার তানজিম হাসান সাকিবের করা ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে ২১ রান নেন লিটন ও নারাইন। লিটন-শান্ত ২টি করে চার-ছয় মারেন।
তৃতীয় ওভারে দ্বিতীয়বারের মত আক্রমনে এসে কুমিল্লার উদ্বোধনী জুটি ভাঙ্গেন পেসার রুবেল। নারাইনকে ১০ রানে শিকার করেন তিনি।
পরের ওভারের প্রথম বলে কুমিল্লার অধিনায়ক ইমরুলকে বিদায় করেন স্পিনার লিন্ডে। ছক্কা মারতে গিয়ে লং-অনে পেরেরাকে ক্যাচ দেন ইমরুল। ৩ বলে ২ রান করেন তিনি। ইমরুলকে শিকার করে মেডেন উইকেট নেন লিন্ডে।
৩৪ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় কুমিল্লা। এ অবস্থায় দলের হাল ধরেন লিটন ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের জনসন চার্লস। পাওয়ার ্েপ্লতে ৪৯ রান পায় কুমিল্লা।
সপ্তম ওভারে পেরেরার বলে ১টি করে চার-ছক্কায় ১২ রান নেন চার্লস। ঐ ওভারে কুমিল্লার রান ৫০ হয়। ১০ ওভার শেষে কুমিল্লার রান ৮৬তে। ১১তম ওভারে হাফ সেঞ্চুরি পূরন করেন লিটন। এবারের বিপিএলে তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করতে ৩৬ বল খেলেন তিনি।
হাফ-সেঞ্চুরির পর রুবেলের বলে স্কয়ার লেগে শান্তর দুর্দান্ত ক্যাচে ইতি ঘটে লিটনের ইনিংসের। ৭টি চার ও ১টি ছয়ে ৩৯ বলে ৫৫ রান করা লিটনের। তৃতীয় উইকেটে চার্লস-লিটন ৫৭ বলে ৭০ রান যোগ করেন।
লিটন ফেরার পর শেষ ৭ ওভারে ৭১ রান দরকার পড়ে কুমিল্লার। পরের ৩ ওভারে ১৯ রান নিতে পারেন চার্লস ও মঈন। এমন অবস্থায় শেষ ৪ ওভারে ৭ উইকেট হাতে নিয়ে জয়ের জন্য ৫২ রানের সমীকরণ পায় কুমিল্লা।
রুবেলের করা ১৭তম ওভারে ২৩ রান পায় কুমিল্লা। ৪০ বলে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ হয় চার্লসের।
শেষ ২ ওভারে ২১ রানের প্রয়োজন পড়ে কুমিল্লার। উডের করা ১৯তম ওভারের ২টি ছক্কা ও ১টি চারে ১৮ রান তুলেন চার্লস। শেষ ওভারে ৩ রানের প্রয়োজন ২ বল খেলেই তুলে নেন চার্লস ও মঈন।
৫২ বল খেলে ৭টি চার ও ৫টি ছক্কায় অপরাজিত ৭৯ রান করেন চার্লস। ২টি চার ও ১টি ছয়ে ১৭ বলে ২৫ রান নিয়ে অপরাজিত থাকেন মঈন। সিলেটের রুবেল ৩৯ রানে ২ উইকেট নেন।