দরজায় কড়া নাড়ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গোৎসব। শিউলি গাছে ফোটা থোকা থোকা ফুল দেবী দূর্গার আগমনী বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে। রঙের আঁচড়ে বর্ণিল সাজে সেজে উঠছে দেবী দূর্গা সহ তার পরিবারের সদস্যরা। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় এই উৎসবকে ঘিরে নারায়ণগঞ্জের মন্ডবগুলোতে চলছে নানা আয়োজন।
প্রতিমা তৈরি শেষে এখন চলছে মন্ডবের সাজসজ্জা সহ পূজার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। পূজা মন্ডপের সাজ-সজ্জা তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এখন অপেক্ষা করছে মাকে বরণের। মাত্র দুই দিন বাদেই শুরু হবে পূজার আনুষ্ঠানিকতা। এরই মধ্যে উৎসবের আমেজ লেগেছে শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সীদের মনে।
গত বুধবার মহালয়ার পিতৃপক্ষের সমাপ্তিতে দেবীপক্ষের সূচনা হয়। আগামী সোমবার ষষ্ঠী তিথিতে দেবী দুর্গার বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হবে দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। ১২ অক্টোবর সপ্তমী, ১৩ অক্টোবর মহাষ্টমী ও কুমারী পূজা, ১৪ অক্টোবর মহানবমী এবং ১৫ অক্টোবর বিজয় দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে দূর্গাউৎবের সমাপ্তি ঘটবে।
এবছর নারায়ণগঞ্জ জেলায় ২০৯ টি পূজা মন্ডপে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বৃহওম ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গাপুজা অনুষ্ঠিত হবে। জেলায় সবচাইতে বেশী পূজা মন্ডব হয়েছে নারায়ণগঞ্জ সদর ও ফতুল্লায় ৬৯ টি, রুপগঞ্জে ৪১ টি, সোনারগাঁও ৩৪ টি, আড়াইহাজার ৩০ টি, বন্দরে ২৭ টি ও সিদ্ধিরগঞ্জে ৮ টি। পূজা উৎযাপন পরিষদের ২৬ নির্দেশনা অনুযায়ী জেলায় পূজা পালন করা হবে।
শনিবার (৯ অক্টোবর) সকালে নগরে পূজার শেষ সময়ের প্রস্তুতি দেখা যায়। রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম, পালপাড়া, নতুন পালপাড়া, আমলাপাড়া, গলাচিপা, উকিলপাড়া, দেওভোগ রাজা লক্ষ্মী নারায়ণ জিউর আখড়া, নন্দীপাড়া, দেওভোগ দূর্গা মন্দির, টানবাজার, সাহাপাড়া, মিনাবাজার, ডালপট্টি, নিতাইগঞ্জের মন্ডবগুলোতে চলছে সাজসজ্জার কার্যক্রম।
কোথাও কোথাও শেষ হয়েছে প্রতিমার রং-তুলির কাজ। কোথাও আংশিক কার্যক্রম অবশিষ্ট রয়েছে। প্রতিমা শিল্পীদের পাশাপাশি ব্যস্ততা বেড়েছে ডেকোরেটর কর্মীদেরও। মন্ডবে মন্ডবে চলছে আলোকসজ্জার কাজ। আলোকসজ্জা আর রং-তুলির আঁচরের মধ্যে উৎসবের আমেজে মেতেছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
দেওভোগ রাজা লক্ষ্মী নারায়ণ জিউর আখড়া পূজা কমিটির সভাপতি অজিত সাহা বলেন, পূজা মন্ডপের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আমরা মাকে বরণের অপেক্ষা করছি । পূজার প্রস্তুতির সার্বিক কার্যক্রম চলছে। আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনেই পূজা করব। মন্ডবে মাস্ক বিতরন সহ স্যানিটাইজের ব্যবস্থা থাকবে।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারন সম্পাদক শিখন সরকার শিপন এ বিষয়ে বলেন, শারদীয় দূর্গোপূজা উপলক্ষে ইতিমধ্যে একাধিক সভা করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি ও শারীরিক দূরুত্বের মেনেই উৎসব পালনের ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা হয়েছে। শহরে যানজট দূরীকরণেরও ব্যবস্থা করা হবে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম জেলায় দুর্গাপূজায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে বলেন, জেলায় মন্ডপগুলোতে পুলিশের তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। মন্ডপে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা ও মেটাল ডিটেক্টর রাখতে হবে।
বিজয় দশমীতে দিনের আলোতে প্রতিমা বিসর্জন করতে হবে। প্রতিমা দিনের আলোর পরে বিসর্জন পরবর্তী কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে সেই দায় সংশ্লিষ্ট পূজা কমিটিকে গ্রহণ করতে হবে।