খুলনা টাইগার্সকে ১৭৮ রানের লক্ষ্য দিয়ে ১৫০ রানে গুটিয়ে ২৮ রানে জিতেছে দুর্বার রাজশাহী। ঢাকা ও সিলেট মিলে মোট পাঁচ ম্যাচে এটি তাদের দ্বিতীয় জয়। খুলনাকে হারানোর ম্যাচে বড় ভূমিকা রাখেন জিম্বাবুয়ান অলরাউন্ডার রায়ান বার্ল। ব্যাটে-বলে সমান পারফর্ম করে জিতিয়েছেন দলকে।
ঢাকায় ৩ জানুয়ারি ঢাকা ক্যাপিটালসের বিপক্ষে ম্যাচ খেলার পর ছয় দিনের লম্বা বিরতি পায় খুলনা। সিলেট পর্বটা হার দিয়ে শুরু করলেও বিরতি থেকে ফিরে দলের অন্যতম স্পিনার নাসুম আহমেদ বিরতির বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন বলে জানান ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে।
তার মতে এই বিরতি সব দলই পাবে একটা সময়। খুলনা শুরুতে পেয়ে যাওয়ায় শেষদিকের বিরতিতে মোমেন্টাম হারাতে হবে না বললেন তিনি। তিন ম্যাচে দুটি হারলেও এই স্পিনার বললেন মোমেন্টাম হারিয়ে যায়নি তাদের, ‘আসলে মোমেন্টাম হারিয়ে যায়নি। গতবার কিন্তু সিলেটে এসে আমরা প্রথম ম্যাচ জিতেছিলাম। এমন হতেই পারে, একদিন এমন হতেই পারে। আমরা আহামরি খারাপও খেলিনি। ১৮০ রান তাড়া করার মতো ছিল। আমরা মাঝে কিছু উইকেট হারানোতে শেষে সংগ্রাম করতে হয়েছে।’
নাসুমের মতে ব্যাটিং পাওয়ারপ্লেতে রান কম হওয়ায় পিছিয়ে যায় দল, ‘পাওয়ারপ্লের ৫ থেকে ১০-১২ ওভার পর্যন্ত আমরা একটু কম রান করেছি। সেখানে আমরা একটু পিছিয়ে গিয়েছি।’
সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নামে রাজশাহী। মোহাম্মদ হারিস আর জিসান আলমের ব্যাটে দারুণ শুরু পায়। দুজনের জুটি ভাঙে দলের ৪৪ রানের মাথায় নাসুমের বলে হারিসের বিদায়ে। এই পাকিস্তানির ব্যাটে আসে ২০ বলে ২৭ রান। জিসান আলম একপ্রান্ত আগলে রাখলেও দ্রুত বিদায় নেন অধিনায়ক এনামুল হক বিজয় ও মেহরব। বিজয়ের ব্যাটে আসে ৭, মেহরব করেন ৫ রান।
এরপর জিসানকে ২৩ রানে বিদায় করেন মোহাম্মদ নেওয়াজ। ব্যাটিংয়ে বিপাকে পড়ার পর দলকে টেনে তুলেন ইয়াসির আলী ও রায়ান বার্ল। ইয়াসির ২৫ বলে ৪১ রান করে বিদায় নিলেও রায়ান ২৯ বলে অপরাজিত ৪৮ রান করে দলের সংগ্রহ নিয়ে যান ১৭৮ রানে। শেষদিকে আকবর আলী খেলেন ৯ বলে ২১ রানের ইনিংস।
লক্ষ্য তাড়া করতে নামলে খুলনার কেউই বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। ২৪ রান করেন মোহাম্মদ নাঈম। এ ছাড়া ৩০ বলে ৩৩ রান করেন আফিফ হোসেন। এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পড়ায় ১৯.৩ ওভারে গুটিয়ে যায় খুলনা।
জয়ের পর রাজশাহীর অধিনায়ক এনামুল হক বলেন পরিকল্পনা ঠিকঠাক থাকায় এসেছে জয়, ‘আমরা তো আশা করছিলাম যে বড় একটা টোটাল দিতে পারি। আবার একই সঙ্গে যখন হচ্ছিল না, তখন ব্যাটসম্যানের সঙ্গে কথা হচ্ছিল যে টাইট লাইনে বল করলে হয়তো এটাও ডিফেন্ড করা সম্ভব। যাওয়ার সময় আমাদের মধ্যে আসলে এই কথাটাই হয়েছে যে যদি প্রমাণ করার কিছু থাকে এই দল নিয়ে, আজকে একটা সুযোগ যে এই টোটালেও আমরা আটকাতে পারি। অবশ্যই ধন্যবাদ দিতে হয় অহিন, জিসান ওরা তো অনেক ছোট বলতে গেলে; মাত্র দ্বিতীয় বিপিএল খেলছে অহিন। জিসানেরও মাত্র তিন চার নম্বর ম্যাচ। এত আর্লি এত সুন্দর বল করছে, এটা আসলে আমি খুব খুশি এবং সবাই খুব খুশি। অবশ্যই তাসকিনসহ যারা আছে, তারা তো ভালো বল করেছে। কিন্তু ওদের বোলিংটা সবচেয়ে বড় অ্যাডভান্টেজ ছিল।’
সিলেটে অবাধে চলছে টিকেট জালিয়াতি
চাতক থেকে খেলা দেখতে আসা দুজন ব্যক্তি হন্য হয়ে খুঁজছেন সিলেট-ঢাকা ম্যাচের টিকেট। একে ওকে টিকেটের জন্য জিজ্ঞেস করলেও কোথাও মেলেনি টিকেট নামক সোনার হরিণ। শেষ পর্যন্ত হতাশ হয়ে বাড়ি ফেরার পথ ধরেন। এমন অগণিত দর্শক দেখা যায় প্রতিদিন ম্যাচের আগে। ঘরের মাঠে সিলেট একের পর এক ম্যাচ হারলেও সমর্থকদের সমর্থন পাচ্ছে দলটা। নিজ দলের খেলা দেখতে আসা দর্শকদের কিছু অংশ অনলাইন কিংবা বুথ থেকে টিকেট কিনলেও অনেকাংশ চলে যায় কালোবাজারিদের হাতে।
শুক্রবার সিলেট স্টেডিয়ামের বাইরে টিকেট ছাড়াই দাঁড়িয়ে ছিল কয়েক হাজার মানুষ। সবার অপেক্ষা একটা টিকেটের। যার গলায় টুর্নামেন্টের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড ঝুলছে, তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করছে ‘ভাই একটা টিকেট হবে?’
আর এই সুযোগটাই নিতে দেখা গেল অনেককে। এসব অসাধু ব্যক্তি বিভিন্নভাবে ঠকাতে দেখা গেছে দর্শকদের। মাঠের এক নম্বর গেটে গিয়ে দেখা গেল একটা টিকেটকে ফটোকপি করে হুবহু ছয়টা টিকেট বানিয়ে বিক্রি করতে। তবে যারা ক্রেতা তাদের ভাগ্য ভালো, হাতে নিয়েই বুঝতে পেরেছিলেন। তৎক্ষণাৎ তাকে ধরে পুলিশে দেওয়া হয়েছে। এর আগে বিসিবির দেওয়া কমপ্লিমেন্টারি টিকেট বিক্রি করতে গিয়েও ধরা খেতে দেখা গেছে এক ব্যক্তিকে।
এমন অনেক ঘটনাই ঘটেছে দিনভর। সন্ধ্যায় সিলেট-ঢাকা ম্যাচের আগে অতিরিক্ত সেনাবাহিনী মোতায়েন করতেও দেখা যায় মাঠের চারপাশের গেটগুলোতে। মাঠে প্রবেশের আগে বেশ কয়েকবার তল্লাশি করা হচ্ছিল দর্শকদের। এতে অনেকে ক্ষুব্ধ হয়ে বাকবিতণ্ডায়ও জড়িয়েছেন। মোবাইল ফোন আর মানিব্যাগ ছাড়া কিছু নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না নিরাপত্তা কর্মীরা। এমনকি সঙ্গে থাকা কয়েনও নিয়ে নিতে দেখা গেছে মাঠে প্রবেশের আগে। তবে এবার যে টিকেট ছাপা হয়েছে সেটাতে কোনো দিকনির্দেশনা দেয়নি বিপিএল কর্তৃপক্ষ।
টিকেট কালোবাজারি নিয়ে জানতে চাওয়া হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিসিবির এক কর্মকর্তা জানান, ‘প্রতিবারই কিছু টিকেট বেহাত হয়ে যায়। আমরা অনলাইনের মাধ্যমে টিকেট কালোবাজারি ঠেকানো নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলেও এবার পুরোপুরি হয়ে ওঠেনি। আশা করি দ্রুতই এই সমস্যার সুরাহা করতে পারব।’