বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। কেন সরকার তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দিতে চায় না? তারা আইনের কথা বলে। এই আইনের মধ্যেই বলা আছে, ইচ্ছা করলে সরকার তাকে যেতে দিতে পারে। বাধা আইন নয়, বাধা হচ্ছে সরকার। এই অবৈধ সরকার তাকে (খালেদা জিয়া) রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিয়েছে।
বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি একথা বলেন। খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে এ কর্মসূচির আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল।
পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী মৌন মিছিল করার কথা ছিল মহিলা দলের। বিক্ষোভ সমাবেশের শুরুতে মৌন মিছিল করার চেষ্টা করা হয়। এ সময় পুলিশ নেতাকর্মীদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে আটকে দেয়। পরে সমাবেশ শেষেও তারা মিছিল করার চেষ্টা করে। তাও আটকে দেয় পুলিশ। এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, মৌন মিছিলকেও সরকার ভয় পায়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল জোনের এডিসি এনামুল হক সাংবাদিকদের বলেন, অনুমতি না থাকা ও যানজটে জনদুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে মহিলা দলকে মিছিল করতে দেওয়া হয়নি। তারপরও তারা দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করেছে।
মহিলা দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ঘরে ঘরে গিয়ে মা-বোনদের জাগিয়ে তুলতে হবে। সরকার ভোটের অধিকার, কথা বলার অধিকার, মৌলিক অধিকার থেকে মানুষকে বঞ্চিত করছে। ১৯৭১ সালে যে স্বাধীনতাগুলো অর্জিত হয়েছিল, সেই মুক্ত সমাজ, কথা বলার স্বাধীনতা, সংগঠন করার স্বাধীনতা, সেগুলো এই আওয়ামী লীগ সরকার লুট করে নিয়েছে। ভিন্ন মোড়কে তারা এখানে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চায়। স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে জীবনবাজি রেখে লড়াই করতে হবে।
মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, মহিলা দলের সহ-সভাপতি জেবা আমিন খান, নেওয়াজ হালিমা আরলী, নিলোফার চৌধুরী মনি, সিনিয়র সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, কেন্দ্রীয় নেতা রহিমা শরীফ মায়া, আয়শা আখতার দিনা, মমতাজ বেগম, পিয়ারা মোস্তফা, রাজিয়া আলীম, আমেনা খাতুন, শামসুন্নাহার বেগম প্রমুখ।
বিদেশ থেকে চিকিৎসক এনে চিকিৎসা সম্ভব নয়-ড্যাব : খালেদা জিয়ার চিকিৎসা বাংলাদেশে সম্ভব বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)। এ বিষয়ে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) সভাপতি হারুন আল রশিদ বলেন, খালেদা জিয়ার নিয়োজিত চিকিৎসক প্যানেলের সদস্যরা দেশের প্রথিতযশা যত চিকিৎসক আছেন, তাদের মধ্যে স্বনামধন্য।
তারা সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, তার বাংলাদেশে চিকিৎসা এ মুহূর্তে সম্ভব নয়। এমনকি উপমহাদেশেও সম্ভব নয়। এর বিপক্ষে সরকারের অবস্থান যা, ঠিক তারই পুনরাবৃত্তি ঘটিয়েছে বিএমএ। তারা খালেদা জিয়ার চিকিৎসার মৌলিক অধিকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। বুধবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা উপস্থাপন, বিদেশে সুচিকিৎসা ও স্থায়ী মুক্তির দাবিতে এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
ড্যাব সভাপতি বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য প্রশিক্ষিত চিকিৎসক দল ও সরঞ্জাম প্রয়োজন। সে জন্য চিকিৎসক এনে তার চিকিৎসা করা সম্ভব নয়। তারা বিদেশ থেকে চিকিৎসক এনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা করার কথা কালক্ষেপণ ও সরকারের অবস্থানকে সমর্থন করার জন্য বলছে।
ড্যাবের মহাসচিব আবদুস সালাম বলেন, খালেদা জিয়ার লিভার সিরোসিস হয়েছে। লিভার সিরোসিস তো দূরের কথা, বাংলাদেশে লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট পর্যন্ত হয় না। আজ পর্যন্ত দুটি ট্রান্সপ্ল্যান্ট হয়েছে, তার মধ্যে একজন মারা গেছে, আরেকজনের অবস্থা ভালো নয়। সুতরাং লিভার সিরোসিসের চিকিৎসা বাংলাদেশে হয়, এটা ভুল তথ্য।
খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থার তথ্য তুলে ধরে হারুন আল রশিদ বলেন, যে সর্বশেষ খবর জেনেছি, তার হিমোগ্লোবিনের লেভেল কিছুটা কমেছে। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে, সেগুলোর রেজাল্ট এখনো আসেনি। তার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আছে। তবে সোমবার রাতে তার আবারও রক্তক্ষরণ হয়েছে। সে কারণেই হয়তো হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কিছুটা কমেছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন ড্যাবের মহাসচিব আবদুস সালাম। লিখিত বক্তব্যে খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার মৌলিক সুযোগ দেওয়ার দাবি জানানো হয়।
সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানদের সমাবেশ ৬ ডিসেম্বর : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে ৬ ডিসেম্বর সমাবেশ করবে উপজেলা পরিষদের বিএনপিপন্থি সাবেক চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যানরা। বুধবার এ কর্মসূচির কথা জানান সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আবু আশফাক।
তিনি বলেন, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যানদের নিয়ে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আমরা বৈঠক করেছি। বৈঠকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সূত্র জানায়, বৈঠকে উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ভাইস-চেয়ারম্যানদের মধ্যে ৬০-৭০ জন অংশ নেন। বৈঠক থেকে ঢাকার খন্দকার আবু আশফাক, কুষ্টিয়ার জাকির হোসেন, বগুড়ার শাহে আলমকে সমাবেশ সফল করতে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।