প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আমাদের যে আইন ও বিধিমালা রয়েছে সেখানে ইসিকে সহায়তা করতে সরকার বাধ্য থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আশা করব, সরকার সে সহায়তা দেবে। সরকারও সেটা বুঝবে। আমরাও আদায় করে নেওয়ার চেষ্টা করব।
মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) সঙ্গে সংলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
অষ্টম দিনে মঙ্গলবার ইসির সঙ্গে সংলাপ করে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বিকল্পধারা বাংলাদেশ ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টি। এদিন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নির্ধারিত সংলাপে অংশ নেয়নি। অংশ নেওয়া দলগুলো বিগত নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। আগামী নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানান জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও বিকল্পধারার নেতারা। আর বিকল্পধারা সব কেন্দ্রে ইভিএম ও এনপিপি সীমিত আকারে ইভিএম ব্যবহারের প্রস্তাব করেছে। ইভিএম ব্যবহারের বিরোধিতা করেছে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম।
এনপিপির সঙ্গে সংলাপে সিইসি বলেন, নির্বাচনের সময় ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের হাতে এসে যায়। সংবিধানে সে কথা বলা হয়েছে। আমাদের যে আইন ও বিধিমালাগুলো রয়েছে, সেখানে ইসিকে সহায়তার কথা উল্লেখ করা আছে। সরকারকে এসব সহায়তা দিতে বলব, সরকার তা দিতে বাধ্য থাকবে। আমরা আমাদের দায়িত্ব আইনের আলোকে বাস্তবায়নের চেষ্টা করব। হতাশ হলে চলবে না। ভোটকেন্দ্রে যেতে হবে। নির্বাচন কমিশন একা দায়িত্ব পালন করতে পারবে যদি আপনারা পাশে থাকেন।
তিনি বলেন, মানসিকভাবে আমাদের (অনেকের কাছে) বিষয়টা দাঁড়িয়েছে যে ‘কোনোভাবেই হারব না’। কিন্তু হারতে তো একজনকে হবেই। এই (চিন্তাভাবনার) পরিবর্তনটাও এখন প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। জিতলে খুশি হবে, হারলে হয়ত মনে কষ্ট লাগবে। কিন্তু মনস্তাত্ত্বিক যে সংকট ‘হারা যাবে না’, এটা অর্থগত কারণে অথবা রাজনৈতিক পরিবেশের কারণেও হতে পারে, সেই অবস্থা থেকে উঠে আসতে হবে। গণতন্ত্রকে বুঝতে হবে, এর বিকাশকে বুঝতে হবে, এর ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতাকে বুঝতে হবে।
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ওপর আবারো জোর দিয়ে সিইসি বলেন, ‘আমরা বারবার বলেছি, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই। কেউ বলবেন যে আসার আসুক, না আসলে নাই। না, আমি বলব নির্বাচনে যদি সব দল থাকে তাহলে একটা ভারসাম্য সৃষ্টি হয়।’
তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক নির্বাচন ব্যবস্থার একটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ, যেটা বহুদলীয় হবে, বহুমাত্রিক হবে এবং সব দলের সহাবস্থান থাকবে। আমরা সাহায্য করতে চাই, সাহায্য সহায়তা পেতে চাই।’
সিইসি আরও বলেন, ‘ধাওয়া-পালটাধাওয়া যাতে না হয় সেটা আমরা চেষ্টা করব। রাজনৈতিক হয়রানি যেন না হয় সেটার কথা বলেছেন। গণহারে যদি কিছু হয় সেটা পেপার পত্রিকায় আসবে। আমরা সেটা লক্ষ রাখব।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সংবিধানের নির্দেশনার আলোকে নির্বাচন করার চেষ্টা করব। সরকার সহায়তা দেবে এটা আমরা বিশ্বাস করি। ইভিএমে হেল্প করার নামে কেউ ভোট দিয়ে দিলে সেটা আমাদের নলেজে আছে। একবার অনিয়ম হয়েছে বলে বারবার হবে এমন নয়। আশা রাখবেন, পাশে আছি ইনশাআল্লাহ।’
জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর রাজনৈতিক মামলা দায়ের বন্ধসহ ১৬ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি)। দলটির চেয়ারম্যান শেখ ছালাউদ্দিন ছালুর নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল ইসির সংলাপে এ প্রস্তাব দেন।
প্রস্তাবগুলো হচ্ছে- বিনামূল্যে প্রার্থীদের ভোটার তালিকা সরবরাহ; প্রার্থী, দলের চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতা এবং দলীয় কার্যালয়ে নিরাপত্তা প্রদান; রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ইসি থেকে প্রত্যাহার ও ইসির দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ; অবসরপ্রাপ্ত সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের নির্বাচনে প্রার্থী হতে কমপক্ষে ৩ বছর নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সক্রিয় কর্মী হওয়া; স্বাধীনতাবিরোধী দল ও চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী, দুর্নীতিবাজ, কালোটাকার মালিক, ঋণখেলাপি, অর্থ পাচারকারী, রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎকারীদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা; প্রবাসী ভোটারদের ভোটাধিকার প্রয়োগে সুযোগ দেওয়া; নির্বাচনে বৈধ অস্ত্র জমা এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার; নির্বাচনে সহিংসতা রোধে পদক্ষেপ নেওয়া; তফসিল ঘোষণার পর নতুন কোনো রাজনৈতিক মামলা না দেওয়া; গোপন কক্ষ ব্যতীত প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ও বুথে সিসি ক্যামেরা স্থাপন; ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতার ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধকরণ; সংসদ নির্বাচনে কত আসনে ইভিএম তার ঘোষণা ও ভোটার ভেরিফায়েবল পেপার অডিট ট্রেইল (ডিভিপিএটি) সংযুক্তকরণ; নির্ভয়, নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে ভোটাধিকার প্রয়োগ; নির্বাচনে প্রার্থীদের জামানত দশ হাজার টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা এবং নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা।