নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার আলীরটেক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র ঘটে যাচ্ছে নানা নাটকীয়তা। এই নাটকীয়তায় হাজারো বাধা বিপত্তি পেরিয়ে আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মোঃ সায়েম আহমেদ রীতিমত জামায়েত ইসলামী ও হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে লড়াই করছেন। যেখানে সরকারি দল আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জাকির হোসেনের উপর ভর করে জামায়েত ও হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা নারায়ণগঞ্জে চাঙ্গা হযে ওঠেছে। গত ২৯ অক্টোবর শুক্রবার নৌকার প্রার্থী জাকির হোসেনের পক্ষে ৪টি মাদ্রাসার কয়েক হাজার শিক্ষার্থীদের নিয়ে শোডাউন করেছেন কেন্দ্রীয় হেফাজতে ইসলামের সাবেক প্রচার সম্পাদক, নারায়ণগঞ্জ মহানগর হেফাজতে ইসলামের সভাপতি মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা হারুন অর রশীদ সহ হেফাজতে ইসলাম ও জামায়েত ইসলামের শীর্ষ নেতাকর্মীরা। তাদের বিরুদ্ধে সরকারবিরোধী আন্দোলনে নাশকতার অভিযোগে ডজন ডজন মামলা রয়েছে।
ঘটনা সূত্রে জানাগেছে, আলীরটেক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক প্রত্যাশি ছিলেন সদর থানা আওয়ামীলীগের প্রস্তাবিত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সায়েম আহমেদ। এখানে নৌকা প্রতীক পান বর্তমান চেয়ারম্যান মতিউর রহমান মতি যিনি গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হোন। এবারো তিনি বিনা ভোটে চেয়ারম্যান হওয়ার আশায় স্থানীয় লোকজন ও আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোনো ধরণের যোগাযোগ রক্ষা করেননি। যে কারনে নৌকা প্রতীক পেলেও নেতাকর্মীরা তার পক্ষে অবস্থান নেননি।
এমন পরিস্থিতিতে মতিউর রহমান অসুস্থ্যতার অজুহাত দেখিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। যার ফলে এখানে জেলার কিছু ব্যক্তিদের ম্যানেজ করে নৌকা প্রতীক নিয়ে আসেন বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি সম্বলিত পোস্টার ছেড়ার মামলার আসামি, জামাত হেফাজতঘেষা জাকির হোসেন। একইভাবে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা জাকির হোসেনের পক্ষেও অবস্থান নেয়নি। যার ফলশ্রুতিতে জামায়েত ইসলাম ও হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নামেন জাকির হোসেন। এদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আনারস প্রতীকে নির্বাচনে নামেন সায়েম। এর আগে জাকির হোসেনও চেয়েছিলেন বিনা ভোটে চেয়ারম্যান হতে, যে কারনে সায়েম ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও হয়রানিমুলক মামলা দেয়া হয়। কিন্তু মামলায় কিছুদিন দুরে থাকলেও উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে সায়েম আনারস মার্কা নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নেমেই আনারস প্রতীকের গণজোয়ার সৃষ্টি করেন। জাকিরের পক্ষে সরাসরি জামাত ও হেফাজত মাঠে নামায় স্থানীয়রা বলছেন- আনারস মার্কা নিয়ে জামাত ও হেফাজতের সঙ্গে সায়েমের লড়াই এটি। এখানে জাকির নির্বাচিত হলে জামাত ও হেফাজতের ঘাঁটি হবে।
অন্যদিকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ফতুল্লার কাশিপুর মাদ্রাসা, মুক্তারকান্দী মাদ্রাসা, ডিক্রিরচর মাদ্রাসা সহ ৪টি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের নিয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জাকির হোসেনের পক্ষে যখন শোডাউন করেছেন কেন্দ্রীয় হেফাজতে ইসলামের সাবেক প্রচার সম্পাদক, মহানগর হেফাজতে ইসলামের সভাপতি মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা হারুন অর রশীদ, তখন নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। তারা কার ইশারায় কার নির্দেশে নৌকার উপর ভর করে হেফাজতে ইসলামকে চাঙ্গা করে তুলছেন? নারায়ণগঞ্জ জেলা হেফাজতে ইসলামের আমির মাওলানা আব্দুল আউয়াল। মাওলানা আব্দুল আউয়ালের দুই সেনাপতি হিসেবে পরিচিত মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান ও মাওলানা হারুণ অর রশীদ। সেই ফেরদাউস ও হারুন যখন নৌকার পক্ষে সরাসরি মাঠে তখন সেটা মাওলানা আউয়ালের নির্দেশেই নৌকার পক্ষে কাজ করছেন বলে স্থানীয়দের দাবি।
স্থানীয়রা বলছেন- কারো কারো ধারণা এখানে হেফাজতে ইসলামে পূর্বের ন্যায় হেফাজতের ঘাটি গড়তে চায়, সে কারনে হেফাজত ঘেষা জাকির হোসেনকে বিজয়ী করতে পারলে সেই কাজটি সহজ হবে। একইভাবে নৌকার উপর ভর করে বড় ধরণের কোনো নাশকতার পরিকল্পনায় হেফাজত রয়েছে কিনা সেটাও প্রশাসনকে খতিয়ে দেখা উচিত। নতুবা বড় ধরণের কোনো নাশকতার সৃষ্টি হলে প্রশাসনকে বেকায়দায় পড়তে হতে পারে। কারন জেলা হেফাজতে ইসলামের আমির মাওলানা আব্দুল আউয়াল ছাড়া পরবর্তী পর্যায়ের প্র্রায় সকল শীর্ষ নেতারা এই নির্বাচনে জাকিরের পক্ষে নেমেছেন প্রকাশ্যে।
ভিন্ন ঘটনা সূত্রে জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার আলীরটেক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেন। তার বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি সম্বলিত পোস্টার ছেড়া ও মহাজোটের প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্প ভাংচুর মামলাও রয়েছে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আওয়ামীলীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা এবং নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের সংসদ সদস্য প্রার্থী একেএম সেলিম ওসমানের নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন জ্বালানো ও লুটপাটের মামলার আসামি আলীরটেক ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কয়েকদিন পূর্বে নগরীর পাইকপাড়ার নয়াপাড়া এলাকায় মহাজোটের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমানের নির্বাচনী ক্যাম্পে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাট চলে৷ নির্বাচনের বানচালের চেষ্টায় সংঘটিত ওই ঘটনায় ২৫ ডিসেম্বর এমপির অনুসারী এনামুল হক রিয়াজ মামলা করেন৷ ওই মামলায় ৭৪ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়৷ মামলার ৭৪ নম্বর আসামি জাকির হোসেন৷
মামলার অভিযোগে বলা হয়, জাকিরসহ এজাহারনামীয় ৭৪ জনসহ অজ্ঞাত আরও ১০-১৫ জন আসামি মহাজোটের প্রার্থী সেলিম ওসমানের পাইকপাড়ার নয়াপাড়া ক্যাম্পে হামলা করে৷ ক্যাম্পের ভেতর বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সংযুক্ত পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে৷ ক্যাম্পে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয়৷ সেই আগুন নেভায় ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় লোকজন৷ ক্যাম্পে থাকা অডিও প্লেয়ার, মাইক লুট করে আসামিরা৷