নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে আসমা আক্তার (২৪) নামে দুই সন্তানের জননীকে পিটিয়ে ও শ^াসরোধ করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্বামী আমজাদ হোসেন (৩০) ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে। নিহত আসমা উপজেলার গোপালদী পৌরসভার রামচন্দ্রদী এলাকার ফালু মিয়ার মেয়ে। রোববার (২৮ জুলাই) রাতে উপজেলার কল্যান্দী এলাকায় নিহতের শ^শুরবাড়ীতে এই ঘটনা ঘটে।
নিহতের বড় বোন আলহাজ¦ আবু তালেব মোল্লা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকা উম্মে হাবিবা জানান, ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে উপজেলার কল্যান্দী গ্রামের মৃত কবির হোসেনের ছেলে আমজাদ হোসেনের সঙ্গে আসমা আক্তারের বিয়ে হয়। তাদের দুটি সন্তান রয়েছে। বেশ কিছুদিন ধরে আমজাদ মোটা অংকের টাকা যৌতুক এনে দেয়ার জন্য আসমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করতো ও প্রাণ নাশের হুমকি দিতো। গত ঈদুল আযহার পরও আসমাকে মারধর করে যৌতুকের জন্য তার বাবার বাড়িতে দেয়। এবং বলে বাবার বাড়ি থেকে নগদ দেড় লাখ টাকা যৌতুক এনে দিতে। এর আগেও বাবার বাড়ি থেকে দেয়া প্রায় দুই ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার বিক্রি করে টাকা পয়সা নষ্ট করে আমজাদ। কিন্তু তাতেও আমজাদ সন্তুষ্ট না হয়ে আসমার উপর অত্যাচার নির্যাতন অব্যাহত রাখে। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার রাতে আমজাদ এবং তার পরিবারের লোকজন আসমাকে একই কারণে মারধর করে শ্বাসরোধে হত্যা করে। এবং ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে চালানোর জন্য ঘরে এক পেকেট বিষাক্ত দ্রব্য (স্থানীয় ভাষায় কেড়ির বড়ি) এনে টেবিলের উপর রেখে দেয়। কিন্তু বড়ির পেকেটটি ছিল অক্ষত। তার মানে ওই পেকেট থেকে কোন বড়ি খোলা বা খাওয়া হয়নি।
তিনি আরও জানান, আমার বোনের ঠোঁটে কাটা দাগ সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত চিহ্ন রয়েছে এবং তার পরনের জামা কাপড় ছিড়া রয়েছে। তার দাবী তার বোনকে হত্যা করা হয়েছে।
নিহতের বাবা ফালু মিয়া অভিযোগ করে বলেন, আমজাদের পরিবারের সদস্যরা লোকদেখানোর জন্য আসমাকে প্রথমে আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত ডাক্তার এখানে তার চিকিৎসা করা সম্ভব না বলে আসমাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। কিন্তু আমজাদ তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে না নিয়ে নারায়ণগঞ্জ পপুলার হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার আসমাকে মৃত ঘোষণা করেন। ফলে আমজাদ তড়ি ঘড়ি করে আসমার লাশ এ্যাম্বুলেন্সে করে বাড়িতে নিয়ে এসে লাশ রেখে স্বপরিবারসহ পালিয়ে যায়। সংবাদ পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে সোমবার (২৯ জুলাই) সকালে নারায়ণগঞ্জ মর্গে প্রেরণ করে।
আড়াইহাজার থানার ওসি আহসান উল্লাহ জানান, প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে ঘটনাটি আত্মহত্যা। তবে সঠিক কারণ নির্ণয়ের জন্য লাশ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। বর্তমানে একটি আত্যাহত্যার প্ররোচনার মামলা দায়ের করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্টে হত্যা আসলে পরবর্তীতে হত্যা মামলা রুজু হবে।