শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৮:৫৩ পূর্বাহ্ন

মি’ রাজ প্রমান করে ” ইমামুল আম্বিয়া, মুহাম্মাদ (দঃ) নূর “

  • আপডেট সময় শনিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩, ৩.১৯ এএম
  • ২০৩ বার পড়া হয়েছে

আল্লাহ পাক নূর।খালিক মাওলার কোন আকার নেই।মালিক মাওলা সকল অসম্ভব কিছু সম্পন্ন করতে পারদর্শী।মাওলা আল্লাহ নিজ মুবারাক নূর থেকে প্রথম ওনার হাবীব (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর জাত সৃষ্টি করেছেন।রাহমানুর রাহিম সেই জাতের নাম রেখেছেন “আহম্মাদ”। কুরআনুল কারিমে ” আহম্মাদ ” এর জাত ” ক্বাদ যা আকুম মিনাল্লাহে নূর ” উল্লেখ করা হয়।

আহম্মাদ মুজতবা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নবুয়্যতের বারোতম বছরে ওনার খালিক মাওলার নিকট যাবার দাওয়াত পেলেন।জিব্রিল ফিরিস্তা দাওয়াত পৌছানো এবং আরশে আজিমে নেয়ার জন্য সকল আয়োজন করলেন। নাবী মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৬২০ খ্রিস্টাব্দ মোতাবেক ১২ হিজরীর রজব মাসের ২৬ তারিখ দিবাগত রাতে মক্কা নগরীর ক্বাবা শরিফের পাশে অবস্হিত উম্মেহানী (রাদিঃ)’ র শয়নকক্ষ থেকে আরশে আজিমের উদ্দেশ্যে বোরাকে চড়ে বসেন। হিজরে ইসমাঈল বা হাতিমে ক্বাবা থেকেও মি’ রাজ শুরুর তথ্য আছে।সুরা বনি ইসরাইলের প্রথম আয়াতে মিরাজ সম্পর্কে ধারনা দেয়া হয়।সুরা তাকভীরের ১৯–২৪ নম্বর আয়াতে মি’ রাজ বিষয়ে তথ্য দেয়া হয়।সুরা নাজমের ৮ ও ৯ এবং ১১ ও ১৭ নম্বর আয়াতে মি’ রাজ সম্পর্কে আলোচনা হয়।

মক্কা মুয়াজ্জামা থেকে ” আহম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ” মাদিনা মুনাওয়ারায় গিয়ে পৌছেন।সেখান থেকে সিনাই পর্বত এরপর হযরত মূসা (আঃ) এর জন্মস্থান বায়তে লাহম হয়ে চোখের পলকে জেরুজালেম নগরীর মসজিদুল আকসা তথা বায়তুল মোকাদ্দাসে গিয়ে পৌছেন। মসজিদুল আকসায় সমস্ত নবী-রাসুলের অংশগ্রহনে অনুষ্ঠিত জামাতে নামাজের ঈমামতি করেন।বাইতুল মুকাদ্দাসে ইমামুল আম্বিয়া বা সাইয়্যিদুল মোরসালিন উপাধি গ্রহন করেন।মক্কা মুয়াজ্জামা থেকে মি ‘রাজ বা ঊর্ধ্বগমন শুরু হয়। অবস্হা দৃষ্টে তাই মানতে হবে।তবে,দুনিয়ার মাটি থেকে মি’রাজ বা ঊর্ধ্বগমন হওয়াকে মানতে হলে বাইতুল মুকাদ্দাস থেকে মি’ রাজ সংঘটন শুরু বলতে হয়।

বোরাকে ” ক্বাদ যা আকুম মিনাল্লাহে নূর ” অর্থাৎ
নূর নাবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরোহন করলেও জিব্রিল আলাইহি ওয়াসাল্লাম সামনে শূন্যে চড়ছিলেন।প্রথম আসমান, দ্বিতীয় আসমান এমন করে সাতটি আসমানে রাসুল পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিরতি দিতে হয়েছে।প্রথম আসমানে নাবী আদম শফিউল্লাহ (আলাইহিস সালাম), দ্বিতীয় আসমানে নাবী ইয়াহহিয়া (আলাইহিস সালাম) এবং নাবী ঈশা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) , তৃতীয় আসমানে নাবী ইউসুফ (আলাইহিস সালাম), চতুর্থ আসমানে নাবী ইদ্রিস (আলাইহিস সালাম), পঞ্চম আসমানে নাবী হারুন (আলাইহিস সালাম), ষষ্ঠ আসমানে নাবী মুসা কালিমুল্লাহ (আলাইহিস সালাম), সপ্তম আসমানে নাবী ইব্রাহীম খালিলউল্লাহ (আলাইহিস সালাম) অভ্যর্থনা জানান।সাতটি আসমানে আটজন নাবী ও রাসুল এর সাথে সালাম,কালাম বিনিময় হয়।আল্লাহ জাল্লাজালালাহু মি’ রাজ শরীফের মাধ্যমে অনেক(গায়েব) অদৃশ্য প্রকাশের পাশাপাশি নাবীগন জীবিত প্রমান করেছেন।

আল্লাহ পাক জাল্লাজালালাহু নূর।আবার জিব্রিল আলাইহি ওয়াসাল্লামও নূরের তৈরী।কিন্তু আল্লাহ পাকের নূর আর জিব্রিল আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জাত নূর এক নয়।তাই সিদরাতুল মুনতাহায় পৌছে জিব্রিল আলাইহি ওয়াসাল্লাম সরে যেতে চাচ্ছেন।জিব্রিল ফিরিস্তা বললেনঃ আমি সামনে উপরের দিকে এগুলে আমার ছয়শত পাখা জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে যাবে।তাই আমি যাবো না।জিব্রিল ওই মুহুর্তে হাবীবউল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রফরফ বাহনে আরোহন করিয়ে থেকে যান। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আপনি সাথে থাকুন।জিব্রিল ফিরিস্তা অপারগতা প্রকাশ করলেন।জিব্রিল ফিরিস্তা কোন ভাবেই আরশে আজিমে যেতে সম্মত হলেন না।ওই মুহুর্তে জিব্রিল আল্লাহ পাকের নিকট আরজ করলেনঃ আমি লা মাকামে যেতে পারলাম না।এতে আমার দুঃখ নেই।আমার ছয়শত পাখায় চড়ে যেন নাবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উম্মতগন পুসিরাত পাড় হয়।আল্লাহ পাক তখন জিব্রিল ফিরিস্তার আরজ মন্জুর করেন।হাবীবউল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাকী যেতে থাকলেন।আরশে আজিমের লা মাকানে পৌছতে ৭০ হাজার পর্দা ভেদ করতে হয়েছে।আল্লাহ পাক রাহনুমার রাহিম নিজেই তার প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সাদর সম্ভাষন জানান।দু ‘ জনের দীদার হয়।লা মাকানে আল্লাহ পাক ওনার হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আলীঙ্গন করেন।তখন আল্লাহ পাকের (নূরের) সাথে মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (নূর) বিলীন হবার মতো হয়ে যান।ফোকাহে কেরাম এ প্রসঙ্গে বলেছেনঃ চিনি আর পানির দ্বারা শরবত তৈরী হয়।তখন কোনটা চিনি,কোনটা পানি নিরূপন করা সম্ভব হয় না।ঠিক মি ‘ রাজ রজনীতে নাবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বেলায় তা ঘটেছিলো।লা মাকানে আল্লাহ পাক রাহমানুর রাহিম এবং ওনার হাবীব রাহমাতাল্লিল আলামিন এর মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রানবন্ত কালাম হয়।আল্লাহ পাক ওনার হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খাতামুন নাবী (শেষ নাবী) হিসেবে সন্মানীত করেন।আল্লাহ পাক ওনার হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উম্মতের জন্য প্রতি ২৪ ঘন্টায় ৫০ ওয়াক্ত সালাত উপহার দেন।রাহমাতাল্লিল আলামিন সানন্দে গ্রহন করে ফিরতে শুরু করেন।আগমনের বেলায় সাত আসমান হয়ে লা মাকানে যেতে হয়েছিলো।দুনিয়াতে গমনের বেলায়ও সাত আসমান হয়ে যেতে হবে।তাই হয়েছে।কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়েছে।তা হলো রাহমাতুল্লিল আলামিন যতবার দুনিয়ামুখী হন-মুসা আলাইহিস সালাম ততবারই সালাতের ওয়াক্ত সংখ্যা কমাতে প্ররোচনা দেন।মুসা আলাইহি সালাম বলেন, প্রতি ২৪ ঘন্টায় ৫০ ওয়াক্ত সালাত আদায় করলে অন্য কিছু করার সময় পাবেন না।৫০ ওয়াক্ত সালাত আদায় করতে সীমাহীন কষ্ট হবে।আপনি সালাতের ওয়াক্ত সংখ্যা কমিয়ে আনুন।মুসা আলাইহিসসালাম এর প্ররোচনার কারনে
হাবীবউল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারবার আল্লাহ পাকের নিকট ফেরৎ গেছেন।সর্বশেষ ৪৫ ওয়াক্ত সালাত কমিয়ে এনেছেন।মাত্র পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ (নির্ধারণ) হয়।ফোকাহে কেরাম এখানকার ঘটনা বর্ননা করতে গিয়ে বলেছেনঃ মুসা নাবী আলাইহিস সালাম কৌশল করেছেন।আর তা হলো রাহমাতুল্লিল আলামিন যতবার এসেছেন–মুসা নাবী ততবার রাসুল পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাঝে আল্লাহ পাকের দীদার পেয়েছেন।আর সালাতে যেমন সুখ আছে–তেমন কষ্ট আছে।সময়ের ঝামেলাও আছে।ইত্যাদি বিষয় অবহিত করে সালাতের ওয়াক্ত কমাতে প্ররোচনা দেন।এমন ঘটনার কারনে উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ হয়।

মি’রাজ রজনীতে মূসা কলিমুল্লাহকে সালাতরত অবস্থায় দেখা, মি’রাজ রাতে ভ্রমনের পথে কুরাইশদের এক কাফেলার যাত্রীদের সাথে সাক্ষাৎ ,কোরাইশদের মি’রাজ ঘটনা অবিশ্বাস।তাই এক অমুসলিম পাদ্রী র সাক্ষ্য প্রদান।
আরো দেখা!অগ্নির কাঁচি দিয়ে ওষ্ঠ কর্তন, সুদখোরদের ভয়াবহ কঠিন পরিণাম দর্শন, শিঙ্গা লাগানোর ব্যাপারে ফেরেশতাদের অনুরোধ, আল্লাহর পথে জীবন উৎসর্গকারীদের(শহীদ) প্রতিদান, পাথর দ্বারা কতিপয় লোকের মাথা পেষণ/পোষণ!যাকাত আদায় না করার পরিণাম দর্শন, দুর্গন্ধযুক্ত গোশত বহনকারীর দর্শন, কাষ্ঠের ভারি বোঝা বহনকারীর দর্শন, একটি ষাঁড়ের ছোট ছিদ্রোর মধ্যে প্রবেশের চেষ্টা দর্শন। জান্নাতের নেয়ামত দর্শন এবং সুবাশ গ্রহন ও জাহান্নামের আওয়াজ শ্রবণ! ইবলিস শয়তানের পশ্চাদ্বাবন দর্শন।বোরাকের পরিচয় লাভ -বোরাকের বুদ্বত ঔদ্ধত্যে আচরণের কারন জানা!জাহান্নাম দর্শন আর জাহান্নামে র প্রহরি আব্দুল মালেকের সাথে সাক্ষাৎ।তিনটি স্হানে বিরতি ও সালাত আদায় এবং বাবুল হেফজ দর্শন।আকাশের প্রহরিগণের সাথে জিব্রিল আলাইহি সালামের সওয়াল- জবাবের কারন জানা ও দর্শন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে দুধ, মধু ও শরবত উপস্হিত করা হয়।নাবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধুমাত্র দুধ পান করেন।

রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওই রাতেই মক্কা শরিফে ফিরে আসেন।

মক্কা মুয়াজ্জামায় এক নামাজ শেষে রাসুল পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মি’ রাজ বিষয়ে আলোচনা করেন।সেখানে অনেক সাহাবীর পাশপাশি আবু জাহেল উপস্হিত ছিলেন।আবু জাহেল পরবর্তীতে নাবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মি’ রাজ সংক্রান্ত বক্তব্য নিয়ে সন্দেহ পোষন করে বিভ্রান্তি ছড়াতে থাকেন।সাহাবী আবু বকর রাদিআল্লাহু তাআ’লা আনহু ওই সময় নাবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বক্তব্য শুনেন নি।এরপরও আবু জাহেল সাহাবী আবু বকর রাদিআল্লাহু তাআ’লা আনহুকে সত্যতা সম্পর্কে প্রশ্ন করেন।উত্তরে আবু বকর রাদিআল্লাহু তাআ’লা আনহু হলফ করে বলেন,নাবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন–সত্য বলেছেন।এরপর আবু বকর রাদিআল্লাহু তাআ’লা আনহুর নামের সাথে ” সিদ্দিকে আকবার ” খেতাব যুক্ত হয়।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort