রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০১:০৭ অপরাহ্ন

নারায়ণগঞ্জে বেশীরভাগ শিল্পকারখানা ইটিপি চালায় না

  • আপডেট সময় সোমবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৪.২৮ এএম
  • ২৩০ বার পড়া হয়েছে

নারায়ণগঞ্জ সদর এসিল্যান্ড রুবাইয়া খানম বলেছেন, আমাকে কয়েকদিন আগে আলাপচারিতায় চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট বলছিলেন বিআইডব্লিউটিএ নদীতে উচ্ছেদ করে কিন্তু তাদের উচিৎ যারা দখলদার তারা বেআইনী কাজ করেছে তাদের বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করা। একই কথা বলছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তরের ম্যাজিষ্ট্রেটও। তিনি বলছিলেন দখলদারদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরে বিআইডব্লিউটিএ’রও একটা বাধ্যবাধকতা রয়েছে। উচ্ছেদের বিষয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয়কে জানালে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো। নদীর যেসব জায়গা ব্যাক্তির নামে রেকর্ড হয়ে আছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ারও তাগিদ দেন তিনি। কারণ অনেক সময় নদীর জায়গা যাদের নামে রেকর্ড হয়ে থাকে তারা ভূমি অফিসে নামজারী করতে আসে। আমরা নামজারী না দিলে তারা বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার চালায়। কিন্তু নদীর জায়গাতো আমরা নামজারী করতে পারিনা। আমরা যদি একসঙ্গে বসে কাজ করি তাহলে নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য ফলপ্রসু কোন রেজাল্ট দিতে পারবো। আমাদের কাজ হচ্ছে ময়লা পরিস্কার করা। আমরা সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছি।

 

রোববার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে বিশ^ নদী দিবস ২০২১ উপলক্ষ্যে আয়োজিত সেমিনারে মূল্য আলোচকের বক্তব্যে এসব কথা বলেন সদর এসিল্যান্ড রুবাইয়া খানম।

সেমিনারের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল মানুষের জন্য নদী। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফ জহুরা মূখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তার স্থলে সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন সদর এসিল্যান্ড রুবাইয়া খানম।

তিনি আরও বলেন, আমরা যদি শুধু বক্তব্যই দেই কিন্তু ফলপ্রসু কোন রেজাল্ট নারায়ণগঞ্জবাসীকে দিতে না পারি তাহলে আমরা ব্যর্থ হিসেবে চিহ্নিত হবো। অনেকেই ব্যক্তিস্বার্থে নদী দখল করছে কিন্তু সেটা দিনশেষে আমাদের উপরেই প্রভাব পড়বে। নারায়ণগঞ্জ শিল্প এলাকা হিসেবে বেশীরভাগ কারখানাতেই এফলুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বা ইটিপি রয়েছে। কিন্তু বেশীরভাগ শিল্পকারখানা ইটিপি চালায় না। তারা ইটিপি বন্ধ করে রাখে। আমরা কিংবা বিআইডব্লিউটিএ যখন পরিদর্শনে যাই তখন মালিকপক্ষ ইটিপি চালু করে। বর্তমানে নদী দূষণ মারাত্মক পর্যায়ে চলে গেছে। নদীকে বাঁচাতে হলে সচেতনতার কোন বিকল্প নেই। আমাদের সকলের মন থেকে নদীকে বাঁচাতে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ নদীতে কেউ যদি কোন বর্জ্য ফেলে সেটা সরকারের কোন সংস্থার একার পক্ষে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব না। একা বিআইডব্লিউটিএ কিংবা নৌ পুলিশের পক্ষে এটা পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব না। আমি আশা করবো নদী রক্ষায় বিআইডব্লিউটিএ যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিবে যাতে হাইকোর্ট তার জাজমেন্টে নারায়ণগঞ্জের উদহারণ টানবে।

প্রধান আলোচক হিসেবে জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলমের আসার কথা থাকলেও তার বদলে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মোহাম্মদ শফিউল ইসলাম।

 

তিনি বলেছেন, পরিবেশ জীবন টিকিয়ে রাখার জন্য নদী হচ্ছে লাইফলাইন। আমাদের নিজেদের প্রয়োজনে আগামীর প্রয়োজনে বসবাসের যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে নদীকে রক্ষার বিকল্প নেই। এই শীতলক্ষ্যাকে ঘিরেই নারায়ণগঞ্জ প্রাচ্যের ডান্ডি হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। পরিবেশ রক্ষায় নদী রক্ষায় আমাদেরকে আরো সচেতন হতে হবে। বিআইডব্লিউটিএ’র নদী রক্ষার অভিযানে আমরা সবসময়ই সহযোগিতা করে আসছি। আমরা প্রশাসন ও বিআইডব্লিউটিএ মিলে টিম নারায়ণগঞ্জ হিসেবে নদী রক্ষায় কাজ করবো। নদীপথে দুর্ঘটনা রোধেও সংশ্লিষ্টদের তাগিদ দেন তিনি। ভবিষ্যতে যাতে নৌ দুর্ঘটনায় একটি মানুষেরও প্রাণহানি না ঘটে সেজন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে সতর্ক থাকার আহবান জানান তিনি।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক ছিলেন বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের যুগ্ম পরিচালক শেখ মাসুদ কামাল। তিনি তার লেখা প্রবন্ধে নদীর প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব তুলে ধরেন। এছাড়া সেমিনারে হাইকোর্টের নিদের্শে নারায়ণগঞ্জের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া শীতলক্ষ্যা নদীকে দখলমুক্ত করতে বিগত দিনের উচ্ছেদ অভিযানের চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, শীতলক্ষ্যার মদনগঞ্জ-সৈয়দপুর থেকে রূপগঞ্জের কাঞ্চন পর্যন্ত শীতলক্ষ্যা দখলদারদের বিরুদ্ধে আমরা একাধিকবার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছি। যার মধ্যে ৭০ ভাগের বেশী দখল মুক্ত হয়েছে। হাইকোর্টের নির্দেশ দেওয়ার আগে থেকে শীতলক্ষ্যার উভয় তীরে বেশ কিছু শিল্পকারখানা রয়েছে যাদের কারখানার কিছু অংশ নদীর জায়গার মধ্যে রয়েছে। এসকল কারখানার অংশ ভেঙ্গে দিতে গেলে দেশের বিভিন্ন পণ্যের উৎপাদন ব্যহত হতে পারে। এতে রাষ্ট্রীয় ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। যে কারণে আমরা ওইসব স্থাপনা এখনো উচ্ছেদ করতে পারিনি। তবে হাইকোর্টের নির্দেশে শীতলক্ষ্যায় ২ হাজার ৪০০ টি সীমানা পিলার স্থাপনের কার্যক্রম চলমান আছে। ইতিমধ্যে অনেকগুলো সীমানা পিলার স্থাপন করা হয়েছে। নদীর তীরে বেশ কিছু স্থানে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। আরো কিছু স্থানে শীঘ্রই ওয়াকওয়ে স্থাপন কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। আমরা যেহেতু ইতিপূর্বে সীমানা পিলার স্থাপন করতে পারিনি সেজন্য আমরা মামলা দেইনি। তবে আমরা সম্প্রতি রূপগঞ্জে এক দখলদারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছি। ভবিষ্যতেও দখলদারদের বিরুদ্ধে আমরা মামলা দায়ের করবো। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন বিগত দিনে আমাদেরকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ ও নদীর সীমানা নির্ধারণে যেভাবে সহযোগিতা করেছে ভবিষ্যতেও সেভাবে সহযোগিতা করবে বলে প্রত্যাশা রাখি।

বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের উপ পরিচালক মোবারক হোসেনের সঞ্চালনায় আরো উপস্থিত ছিলেন উপ পরিচালক ইসমাইল হোসেন, সহকারী পরিচালক নাহিদ হোসেন, সহকারী পরিচালক (নৌ নিট্রা) বাবু লাল বৈদ্য, বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের সিবিএ চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান প্রমুখ।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort