নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, পৃথিবীর অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও অনেক ধর্মের মানুষ এক সাথে বাস করে। ধর্ম নিয়ে কেউ বাড়াবাড়ি করে না। কিন্তু মাঝে মধ্যে আমাদের দেশে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল ধর্মের কথা বলে উস্কিয়ে দেয়। নিজের কাজ সিদ্ধ করতে চায়। তারা এসব বলে দেশকে অস্থির করতে চায়। দেশকে অস্থির করার সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হলো ধর্ম। এই ধর্মকে তারা হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেয়। আমি আমার রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই কথা গুলো বলার চেষ্টা করছি। বাংলাদেশকে যতবার অস্থির করার চেষ্টা করা হয়েছে ততবার রাজনীতির পাশাপাশি ধর্মকে টেনে আনা হয়েছে। ধর্মকে নিয়ে উশৃংখলতা ও উন্মাদনা আমরা দেখেছি। তবে দিন শেষে প্রমাণিত হয়েছে এটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় নাই, আর হবেও না। কারণ বাংলাদেশের জন্মই হয়েছে স্বাধীনতার জন্য। যেখানে প্রতেক মানুষের নিজ নিজ ধর্ম পালনের স্বাধীনতা থাকবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এটাই চেয়েছিল।
সোমবার (২৮ মার্চ) দুপুরে শহরের আলী আহাম্মদ চুনকা নগর পাঠাগার ও মিলনায়তনে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সচেতনতামূলক দিনব্যাপী প্রশিক্ষণে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, স্বাধীনতা দিবসে আর আগের মতো দেশাত্মবোধক সঙ্গীত, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ পাড়া মহল্লায় শোনা যায় না। আমরা কোথায় যেন গুটিয়ে নিচ্ছি নিজেদেরকে। ধর্মীয় অনুভূতি তো থাকবেই। মসজিদে খুতবা কিংবা মন্দিরে বা চার্জে যারা কথা বলেন তাদের কাছে অনুরোধ, আপনারা সকল ধর্মের সম্প্রতির কথা বলবেন। কারণ খুতবাতে দেখা যায় অনেক মসজিদে ধর্মীয়ভাবে বিবেদ তৈরি করার কথা বলা হয়। যেখানে হিন্দু ধর্ম, খ্রিস্টান ধর্মসহ অন্যান্য ধর্মে সম্প্রীতির কথা বলে। আমাদের প্রিয় শ্রেষ্ঠ নবী বিধর্মীদের ইসলাম ধর্মের দিকে নিয়ে এসেছেন। এতো বছর পরে যেখানে আমরা সম্প্রতি বাড়াবো, না বাড়িয়ে আমরা অনেক সময় অনেক কথা এভাবে বলি যেন আমরাই শ্রেষ্ঠ। ইসলাম ধর্ম শ্রেষ্ঠ কিন্তু শ্রেষ্ঠত্বের বহিঃপ্রকাশ অন্যকে ছোট করে নয়। অন্যকে সাথে নিয়ে অন্যকে পাশে রেখে হয়। সম্প্রতির অনুষ্ঠান, কিন্তু সম্প্রতি দেখছি না। সব মৌলভীরা একদিকে বসেছে। অন্যদিকে বাকি ধর্মাবলম্বীরা। মনে হলো, যেন কেউ কাউকে আপন করে নিতে পারলেন না৷ আপন করার প্রবণতা থাকতে হবে। থেকেই নিজ ধর্ম কখনো বাদ দেই নি। নিজ ধর্মকে নিজের মধ্যে লালন করে অন্য ধর্মের মানুষের সাথে মিশেছি।
মেয়র আইভী বলেন, আমরা ধর্মের প্রসঙ্গে ভালো মন্দ সবই বুঝি। কিন্তু স্বার্থের প্রয়োজনে একে অন্যকে উস্কানি দেই। নিজেদের মধ্যে এমন জিহাদি বানিয়ে ফেলি, এখন মরে গেলে এখনই যেন শহীদ হয়ে যাবো। বেহেশত পেয়ে যাবো। বেহেশতের শর্ত তা নয়। বেহেশতের পূর্ব শর্ত, হালাল রুজি, ভালো ব্যবহার, নিপীড়িত মানুষের পাশে দাড়ানো, অন্যকে সেবা করা৷ বক্তৃতা দিতে গিয়ে অসংখ্য মিথ্যা না বলা। মিথ্যার আশ্রয় না নেওয়া। সত্যকে সত্য বলে মানুষকে ভালোবাসা। মানুষের প্রতি বন্ধন তৈরি করা। এটাই রাজনীতি, এটাই ধর্ম, এটাই মানবসেবা। যে মানবসেবা করতে পারে সেই অনেক কিছু জয় করতে পারে। আমি মুখে বলব বিবেদ করি না, আমার কার্যক্রমে সর্বদাই বিবেদ তৈরি করার প্রশ্ন চলে আসে। আমি সর্বদাই বিবেদ তৈরি করতে চাইবো, তাহলে আমি ভালো লিডার, ধর্মযাজক কোনটাই না। নারায়ণগঞ্জ এতো সুন্দর সম্প্রতির শহর যে আমাদের শেষ ঠিকানায় একত্রে চার ধর্মের অবস্থান রয়েছে। মুসলমান, হিন্দু, খ্রিস্টানসহ বৌদ্ধ ধর্মের মানুষের জন্যও সেখানে ব্যবস্থা করা হবে। নারায়ণগঞ্জকে সম্প্রতি শহর তৈরি করতে গিয়ে অনেক সময় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ি, বিশেষ করে নারী হিসেবে। যাই হোক আমি ওইসব কেয়ার করি না।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. মঞ্জুরুল হাফিজের সভাপতিত্বে এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান ফারুক, জেলা ইসলামি ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক মো. জাকির হোসাইন প্রমুখ।