৮৭ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস খেলতে নামে বাংলাদেশ। ভারতকে ৩১৪ রানে গুটিয়ে দিয়ে দ্বিতীয় দিন শেষ সেশনে তারা খেলেছে ৬ ওভার। জাকির হাসান ও নাজমুল হোসেন শান্ত অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ৭ রান তুলে মাঠ ছেড়েছেন। ৮০ রানে পিছিয়ে থেকে শনিবার তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করবে বাংলাদেশ। জাকির ২ ও শান্ত ৫ রানে অপরাজিত।
সাকিবের চতুর্থ উইকেটে ৩১৪ রানে থামলো ভারত
প্রথম সেশন দারুণ কেটেছিল বাংলাদেশের। ৩ উইকেট নিয়ে ভারতকে ৮৬ রানে আটকে দেয় স্বাগতিকরা, সবগুলো উইকেট নেন তাইজুল ইসলাম।
দ্বিতীয় সেশনের শুরুটাও হয় দারুণ। তাসকিন আহমেদ ফেরান বিরাট কোহলিকে। ৯৪ রানে ভারতের চার নম্বর উইকেট নিয়ে স্বস্তিতে ছিল বাংলাদেশ, কিন্তু তা উধাও হয়ে যায় রিশাভ পান্ত ও শ্রেয়াস আইয়ারের দেড়শ ছাড়ানো জুটিতে। দ্বিতীয় সেশন তারা দাপট দেখায়।
চা বিরতির পর রিশাভকে ৯৩ রানে ফিরিয়ে ব্রেকথ্রু আনেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এরপর সাকিব আল হাসানের ঘূর্ণি জাদু। বাকি পাঁচ উইকেটের চারটি পান বাঁহাতি স্পিনার। আইয়ারকে ৮৭ রানে নিজের শিকার বানান সাকিব। মাঝে একটি উইকেট নেন তাইজুল। মোহাম্মদ সিরাজকে ফিরিয়ে ভারতকে ৩১৪ রানে গুটিয়ে দেন সাকিব।
প্রথম সেশন তাইজুলের হলে শেষ সেশন সাকিবের। দুজনই সমান চারটি করে উইকেট পেয়েছেন। ৮৭ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস খেলতে নামছে বাংলাদেশ।
সিরাজকে চতুর্থ শিকার বানালেন সাকিব
মোহাম্মদ সিরাজ উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসে শট খেলতে চাইলেন। বল ততক্ষণে নুরুল হাসান সোহানের গ্লাভসে এবং ভেঙে দিলেন স্টাম্প। সাকিব আল হাসান পেলেন তার চতুর্থ উইকেট। ভারত অলআউট হলো ৩১৪ রানে। ৮৭ রানের লিড নিয়ে প্রথম ইনিংস শেষ করলো সফরকারীরা। বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে করে ২২৭ রান।
তাইজুলের চতুর্থ শিকার উমেশ
প্রথম সেশনে তিন উইকেটের সবগুলো নেওয়া তাইজুল ইসলাম শেষ সেশনে গিয়ে চতুর্থ উইকেট পেলেন। উমেশ যাদবকে (১৪) তিনি স্লিপে লিটন দাসের ক্যাচ বানান। ৩০৫ রানে ৯ উইকেট নেই ভারতের।
সাকিবের তৃতীয় উইকেট
সাকিব আল হাসানে ভেঙে পড়েছে ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপ। শেষ সেশনে পরপর দুই ওভারে অক্ষর প্যাটেল ও শ্রেয়াস আইয়ারকে ফেরান তিনি। তৃতীয় উইকেট তুলে নিলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে ফিরিয়ে। ১২ রানে তাকে এলবিডব্লিউ করেন বাঁহাতি স্পিনার। ২৮৬ রানে নেই ভারতের ৮ উইকেট।
পরপর দুই ওভারে সাকিবের উইকেট
আগের ওভারে সাকিব আল হাসান অক্ষর প্যাটেলকে ফেরান। পরের ওভারে বাঁহাতি স্পিনার বড় উইকেট পেলেন। তিনিও সেঞ্চুরি বঞ্চিত হলেন। ১০৫ বলে ১০ চার ও ২ ছয়ে ৮৭ রান করে এলবিডব্লিউ হন আইয়ার। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি তিনি। দলীয় ২৭১ রানে সপ্তম উইকেট হারালো ভারত।
অক্ষরকে ফিরিয়ে সাকিবের প্রথম উইকেট
ভারতের বিপক্ষে মিরপুরে দ্বিতীয় টেস্টে নিজের প্রথম উইকেট পেলেন সাকিব আল হাসান। অক্ষর প্যাটেলকে নাজমুল হোসেন শান্তর ক্যাচ বানান তিনি। ওই ওভারের প্রথম বলে ভারতীয় ব্যাটসম্যানের কাছে চার হজম করেন অধিনায়ক। আর কোনও রান করতে পারেননি অক্ষর। ২৬৪ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারালো ভারত।
পান্তকে সেঞ্চুরি করতে দিলেন না মিরাজ
রিশাভ পান্তকে পেছনে নুরুল হাসান সোহানের ক্যাচ বানিয়ে স্বস্তি ফেরালেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তাকে সেঞ্চুরি করতে দিলেন না বাংলাদেশি স্পিনার। ১০৪ বলে ৭ চার ও ৫ ছয়ে ৯৩ রানে আউট হলেন পান্ত। শ্রেয়াস আইয়ারের সঙ্গে ১৮২ বলে ১৫৯ রানের জুটি গড়েছিলেন তিনি। ২৫৩ রানে ৫ উইকেট হারালো ভারত।
বাংলাদেশকে পেছনে ফেললো ভারত
চা বিরতির পর মাঠে নেমে দ্বিতীয় বলে দুটি রান নেন শ্রেয়াস আইয়ার। প্রথম ইনিংসে লিড পায় ভারত। তার সঙ্গে রিশাভ পান্ত পঞ্চম উইকেটে দেড়শ রানের জুটি গড়েছেন। ৪ উইকেটে ভারতের সংগ্রহ ২৪৫ রান।
পান্ত-আইয়ার ঝড়ে অস্বস্তিতে বাংলাদেশ
লাঞ্চের পর বিরাট কোহলিকে ফিরিয়ে দারুণ শুরু হয় দ্বিতীয় সেশন। তাসকিন আহমেদ ভারতের চতুর্থ উইকেট নেন। এরপর জুটি বাঁধেন শ্রেয়াস আইয়ার ও রিশাভ পান্ত। দুজনে মিলে চড়াও হন বাংলাদেশের বোলারদের ওপর।
৪৯ বলে ফিফটি করেন পান্ত। ২১ রানে জীবন পাওয়া আইয়ার হাফ সেঞ্চুরির দেখা পান ৬০ বল খেলে। দুজনেই ছিলেন আগ্রাসী। ১১৬ বলে ১০০ করে পঞ্চম উইকেটের এই জুটি। তাদের দ্বিতীয় সেশনে দাপট দেখালো ভারত। ১৩২ রানের অবিচ্ছিন্ন এই জুটিতে লিড নেওয়ার পথে সফরকারীরা। পান্ত ৬ চার ও ৫ ছয়ে ৮৬ রানে অপরাজিত। আইয়ার ৬৮ বলে ৬ চার ও ২ ছয়ে ৫৮ রানে খেলছেন। ভারতের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ২২৬ রান।
আইয়ারকে জীবন দিলেন সোহান, পাল্টা জবাব ভারতের
বোলিংয়ে ফিরে দ্বিতীয় ওভারেই দারুণ সুযোগ তৈরি করেছিলেন সাকিব। বাঁহাতি স্পিনারের হাওয়ায় ভাসানো বল ড্রাইভ করতে এগিয়ে গিয়েছিলেন শ্রেয়াস আইয়ার। কিন্তু বলের ফ্লাইট মিস করেন ভারতীয় ব্যাটসম্যান।
বল যায় উইকেটের পেছনে। স্টাম্পিংয়ের সহজ সুযোগ ছিল। কিন্তু উইকেটের পেছনে সোহান বল গ্লাভসবন্দি করতে পারেননি। স্টাম্পিংয়ের সহজতম সুযোগ হাতছাড়া করে বাংলাদেশকে উইকেট বঞ্চিত করলেন সোহান। ২১ রানে জীবন পান শ্রেয়াস। ওই ওভারেই সাকিবকে দুটি চার মেরে প্রতি আক্রমণ চালান। তার উইকেট নিতে পারলে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল বাংলাদেশের।
সুযোগ হাতছাড়ায় খেসারত দিচ্ছে স্বাগতিকরা। প্রতি আক্রমণে ছড়ি ঘুরাচ্ছেন শ্রেয়াস ও পান্ত। দুজনের জুটির রান এরই মধ্যে সত্তর রান পেরিয়ে গেছে। ৪ উইকেটে ভারতের রান ১৬৮।
তাসকিন ম্যাজিকে কোহলি ড্রেসিংরুমে
মধ্যাহ্ন বিরতির পর তাসকিন আহমেদের প্রথম ওভারেই মিললো সাফল্য। সেটাও বিরাট কোহলির উইকেট। ঘরের মাঠে প্রথম টেস্ট খেলতে নেমেছেন তাসকিন। উইকেটের জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না তাকে। সেটাও ম্যাজিকাল এক ডেলিভারিতে। অফস্টাম্পের পাশে গা ঘেঁষা ডেলিভারি ডানহাতি পেসারের। দারুণ সিম আপ ডেলিভারি। হালকা বাউন্সও পেলো। কোহলি ব্যাটটা সরাতেও পারলেন না। তার ব্যাটের চুমু পেয়ে বল চলে যায় সোহানের নির্ভার গ্লাভসে।
৭৩ বলে ২৪ রানে কোহলি ফিরলেন ড্রেসিংরুমে। বাংলাদেশের মাটিতে এটি তার সর্বোচ্চ টেস্ট রান। এর আগে ১৪, ১ ও ১৯* রান করেছিলেন। ইনফর্ম কোহলির উইকেট পেয়ে তাসকিনের উদযাপনও ছিল দেখার মতো। দৌড়ে, চিৎকার করেট সাফল্য উপভোগ করেছেন। ভারত হারালো চতুর্থ উইকেটে, তাদের রান ১০০। উইকেটে নতুন ব্যাটসম্যান শ্রেয়াস আইয়ার।
তিন উইকেট তুলে সকালের সেশন বাংলাদেশের
তাইজুল ইসলামের ঘূর্ণিতে দ্বিতীয় দিনের সকালের সেশন নিজেদের করে নিয়েছে বাংলাদেশ। দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানের পর চেতেশ্বর পুজারার উইকেট তুলে নিয়েছেন এই স্পিনার। তিন উইকেট হারানোর সেশনে ভারত তুলেছে কেবল ৬৭ রান। আগের দিনের ১৯ রানের মিলিয়ে ভারতের মোট সংগ্রহ ৮৬ রান।
এই সেশনে আরও একটি উইকেট পেতেও পারতো বাংলাদেশ। মিরাজের বলে স্লিপে ক্যাচ তুলেছিলেন রিশাভ পান্ত। নাগালের বাইরের ক্যাচ লুফে নিতে লাফিয়ে উঠেছিলেন স্লিপের ফিল্ডার শান্ত। হাতে বলের ছোঁয়াও পেয়েছিলেন। কিন্তু মুঠোবন্দি করতে পারেননি। এছাড়া বিরাট কোহলির ব্যাটের চুমু পাওয়া নিচু বল সোহানের প্যাডে আঘাত হানে।
তাইজুল বাদে বাকি বোলাররাও চাপে রেখেছেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের। রান করার তেমন সুযোগ দেননি। তাতে ভারতের রান রেটও তিনের নিচে নেমে আসে, রান রেট ছিল ২.৩৯। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটিং একদমই ভালো হয়নি। ২২৭ রানে গুটিয়ে গেছে। ব্যাটিংটা আরেকটু ভালো হলে বোলারদের সৌজন্যে লড়াইয়ের ভিত পেতো স্বাগতিকরা। এখনও সেই সুযোগটি আছে। ভারত পিছিয়ে আছে ১৪১ রানে। এর আগে তাইজুল-সাকিবদের সম্মিলিত আক্রমণে ভারতকে দিক হারা করতে পারে কি না সেটাই দেখার।
মুমিনুলের দুর্দান্ত ক্যাচে ফিরলেন পুজারা
ক্লোজ ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশের সাফল্য আসে কালেভদ্রে। হায় হুতাশের গল্পই যে বেশি। তবে এবার মুমিনুল যা করলেন, তা রীতিমতো চমকে দেওয়ার মতো। উইকেটের খুব কাছে দাঁড়িয়ে নিচু হওয়া ক্যাচ লুফে চেতেশ্বর পুজারাকে ফিরিয়েছেন তিনি। তাইজুল ইসলামের বল ডিফেন্স করেছিলেন মাটি আঁকড়ে পড়ে থাকা পুজারা। তার মাঝব্যাটে লেগে বল যায় শর্ট লেগে। সেখানে মুমিনুল নিচু হয়ে বল তালুবন্দি করেন।
ক্যাচ ধরতে রিফ্লেক্ট দরকার ছিল। মুমিনুলের রিফ্লেক্ট ছিল পিকচার পারফেক্ট। সঙ্গে বলের ওপর চোখ রেখে ঠিকঠাক হাত নিয়ে যান নিচুতে। তাতে মিলে যায় সাফল্য। আম্পায়ার নিশ্চিত হতে তৃতীয় আম্পায়ারের সাহায্য নিয়েছিলেন। তাতেও সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের পক্ষে যায়। চট্টগ্রাম টেস্টের সেঞ্চুরিয়ান ফিরলেন ২৪ রানে। ভারত হারালো তৃতীয় উইকেট। তিনটি উইকেটই নিয়েছেন তাইজুল। ৩ উইকেটে তাদের রান ৭৪। বিরাট কোহলির সঙ্গে যোগ দিয়েছেন রিশাভ পান্ত।
ভারতের দুই ওপেনারকে ফেরালেন তাইজুল
তাইজুল ইসলামের হাত ধরে জোড়া সাফল্য পেলো বাংলাদেশ। বাঁহাতি স্পিনার ড্রেসিংরুমে পাঠিয়েছেন দুই ওপেনিং ব্যাটসম্যান লোকেশ রাহুল ও শুভমান গিলকে। দুজনকেই এলবিডব্লিউ করেছেন স্বাগতিক স্পিনার।
রাহুলকে ফিরিয়ে বাংলাদেশ প্রথম সাফল্য পায়। বাঁহাতি স্পিনারের বল হালকা এগিয়ে ফরোয়ার্ড ডিফেন্স করেছিলেন ভারতের অধিনায়ক। বল আঘাত করে তার প্যাডে। তাইজুলের জোরালো আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার সৈকত। তাইজুলের আত্মবিশ্বাসে রিভিউ নেন সাকিব। তাতে পাল্টে যায় সিদ্ধান্ত। রাহুল ১০ রানে ফিরেছেন ড্রেসিংরুমে।
পরের ওভারে গিলের উইকেট হারায় ভারত। আক্রমণাত্মক এ ব্যাটসম্যান তাইজুলের হাফ ভলি বল সুইপ করেছিলেন। বল মিস করে এলবিডব্লিউ হন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। ২০ রানে ফিরেছেন গিল।
২ উইকেট হারিয়ে ভারতের রান ৩৮। ক্রিজে ব্যাট করছেন বিরাট কোহলি ও চেতেশ্বর পুজারা। কোনও উইকেট না হারিয়ে ১৯ রানে দিন শুরু করেছিল সফরকারীরা।
দিনের প্রথম ঘণ্টায় বাংলাদেশের বোলিং ভালো হয়েছে। একপ্রান্তে পেসার খালেদ আহমেদ। আরেকপাশে তাইজুল আক্রমণে আছেন। দিনের শুরুটা হয়েছিল খালেদের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে। তার ছোবল দেওয়া এক ডেলিভারি গিলের ব্যাটের ফাঁক দিয়ে উইকেটের পেছনে যায়। আঁটসাঁট বোলিংয়ে ব্যাটসম্যানদের চাপে রেখেছেন দুজন। শুরুর এক ঘণ্টায় আরও দুয়েকটি উইকেট পেলে প্রথম ইনিংসে লড়াইয়ে ফিরবে বাংলাদেশ।
এর আগে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ২২৭ রানে গুটিয়ে যায়। মুমিনুলের ৮৪ রানের পরও বাকিদের আসা-যাওয়ার মিছিলে হতশ্রী ব্যাটিং উপহার দেয় স্বাগতিকরা। বোলাররা দলকে ম্যাচে ফেরাতে পারে কি না সেটাই দেখার।ৃ