শেফিল্ড ইউনাইটেড তাদের নতুন তারকা হামজা চৌধুরীকে স্বাগত জানিয়ে সামাজিক মাধ্যমে লিখেছে, হামজা ‘চৌধুরী ইজ অ্যা ব্লেড।’ হামজাকে ব্লেড বলার পেছনে লুকিয়ে আছে শেফিল্ড শহরের ঐতিহ্য। শহরটি ছুরি-কাঁচি তৈরির ঐতিহ্যের কারণে ক্লাবটি পরিচিত ‘দ্য ব্লেডস’ নামে। তাদের আরেকটি পোস্টে লেখা হয়েছে, ‘বাংলাদেশি ব্লেড’, সঙ্গে রাখা হয় বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা।
কয়েক দিন ধরে চলা গুঞ্জনের অবসান ঘটিয়ে সোমবার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসে। লেস্টার সিটি থেকে ধারে মৌসুমের বাকি অংশ শেফিল্ড ইউনাইটেডে খেলবেন ২৭ বছর বয়সি ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হামজা।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে লেস্টারের হয়ে খেলার সুযোগ কম পাচ্ছিলেন হামজা। এখন শেফিল্ড ইউনাইটেডে নিয়মিত খেলার আশা করতেই পারেন তিনি। চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট তালিকার দুই নম্বরে থাকা দলটি আগামী মৌসুমে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে জায়গা করে নেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে ছুটছে।
এ ছাড়া শেফিল্ডের কোচ ক্রিস উইল্ডারের সঙ্গে হামজার পরিচয় নতুন নয়। ২০২২-২৩ মৌসুমে ওয়াটফোর্ডে ধারে খেলার সময় কোচ ছিলেন উইল্ডার। সেই সম্পর্কই শেফিল্ডে আসার সিদ্ধান্ত সহজ করেছে বলে হামজা ক্লাবের ওয়েবসাইটে বলেন, ‘সপ্তাহ দুয়েক ধরে আলোচনা চলছিল। আমি খুশি যে এখানে আসতে পেরেছি এবং মাঠে নামতে তৈরি। এই দল নিজেদের যেভাবে এগিয়ে নিয়েছে, তা ভালোভাবেই জানি এবং তাদের আরও ভালো করতে সহায়তা করতে চাই।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘ওয়াটফোর্ডে গ্যাফারের সঙ্গে দুই মাস কাজ করেছিলাম। কম সময় হলেও দারুণ উপভোগ করেছি। এবার যখন তিনি ডাকলেন, উত্তর ছিল একটাই।’
হামজাকে নিয়ে কোচ উইল্ডার বলেন, ‘এই পজিশনে একজনের অভাব ছিল আমাদের। হামজা আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল। তার অভিজ্ঞতা, শারীরিক শক্তি ও এনার্জি দলকে সমৃদ্ধ করবে। লেস্টারের হয়ে সে দীর্ঘ সময় ধরে খেলেছে এবং তার বিজয়ের অভিজ্ঞতা আমাদের অনেক কাজে আসবে। আমরা এমন একজন খেলোয়াড়কে দলে টানতে পেরে ভীষণ খুশি।’
হামজা লেস্টারের একাডেমিতে যোগ দিয়েছিলেন মাত্র আট বছর বয়সে। ক্লাবটির যুব দলে উঠে ২০১৫ সালে মূল দলে অভিষেক হয় তার। এরপর বার্টন অ্যালবিয়ন ও ওয়াটফোর্ডে ধারে খেলেছেন। লেস্টারের হয়ে এখন পর্যন্ত খেলেছেন ৯১ ম্যাচ।
বাংলাদেশের ফুটবলে হামজা এখন অন্যতম আলোচিত নাম। গত মাসেই আন্তর্জাতিক ফুটবলে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার অনুমতি পেয়েছেন তিনি। আগামী মার্চে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় দলের জার্সিতে অভিষেক হতে পারে তার।
হামজার মায়ের বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার বাহুবলে। তার বাবা ক্যারিবিয়ান দেশ গ্রেনাডার নাগরিক। তবে শৈশবেই মা-বাবার বিচ্ছেদ হয়, পরে তার মা বিয়ে করেন এক বাংলাদেশিকে।
ছোটবেলায় বাংলাদেশে কয়েকবার এসেছেন হামজা। জাতীয় দলের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও গ্রেনাডা উভয় দেশেই খেলার সুযোগ ছিল। তবে ইংল্যান্ডের জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন এখন দূরের হওয়ায় শেষ পর্যন্ত তিনি বেছে নিয়েছেন মায়ের দেশের প্রতিনিধিত্ব করা।
নতুন ক্লাবে ধারে যোগ দিয়ে হামজার প্রথম ম্যাচ শনিবার ডার্বি কাউন্টির বিপক্ষে হতে পারে। বাংলাদেশি ফুটবল ভক্তদের জন্যও এটি নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা।