মা রুনা আক্তারের আহাজারিতে গোটা এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। বুক চাপড়ে বার বার মুর্ছা যাচ্ছিলেন। তার করুণ আহাজরিতে উপস্থিত শত শত নারী পুরুষ কেউ চোখের পানি আটকা পারেনি।
স্বপ্ন বিলাস নামে একটি সমিতির নির্মাণাধীণ ১০ তলা ভবন ভেঙ্গে দিয়েছে ওই পরিবারের স্বপ্ন। কেড়ে নিয়েছে ৮ বছরের ছেলে মেধাবী ছাত্র আব্দুল্লাহর স্বপ্ন।
তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে মা রুনা আক্তার বলছেন, নির্মাণাধীণ ১০ তলা ভবনের ১৮ জন মালিকের মধ্যে প্রভাবশালী আলমগীরকে একাধিবার হাতে পায়ে ধরেছি আমার সন্তান দুটিকে বাঁচতে দিন কিন্ত আলমগীর কোন কথাই শুনেনি। শুনেনি অন্যরাও।
রুনা অভিযোগ করেন পরিকল্পিতভাবে ১০তলা থেকে ইটের স্তপ ফেলে আমার সন্তানকে হত্যা করেছে ভবনের মালিকরা। আমরা শেষ সম্বল বাড়িটি কৌশলে দখল করার জন্য তারা গত ৩ বছর ধরে ১০ তলা নির্মাণ কাজ করতে গিয়ে ইট কাঠ, রড, বালু সিমেন্ট নানা নির্মাণ সামগ্রী ফেলে আসছে।
একাধিকবার প্রতিবাদ করেছি, পরবর্তীতে অনুরোধ করেছি হাতে পায়ে ধরেছি তবুও তারা কোন কর্ণপাত করেনি। শেষ পর্যন্ত আমার ৮বছরের ছেলেকে আমার কোল থেকে কেড়ে নিয়েছে। এ বিদারক ঘটনাটি ঘটেছে গত মঙ্গলবার, ১২ সেপ্টম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে নাসিক ১নং নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় পাইনাদি নতুন মহল্লায় স্কুল শিক্ষক মোঃ শরীফ হোসেনের বাড়িতে।
গতকাল বুধবার, ১৩ সেপ্টম্বর দুপুর ২ টায় মোঃ শরীফ হোসেন এ পাইনাদি নতুন মহল্লায় গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তিনি ছেলের লাশের জন্য মর্গে অবস্থান করছেন। বাড়িতে শত শত নারী পুরুষ ভিড় করছেন। টিনশেড বাড়ির ভেতরে গিয়ে দেখা যায় শরীফ হোসেনের স্ত্রী রুনা আক্তার তার ছেলে মো. আব্দুল্লাহ (৮) জন্য বুক চাপড়ে আহাজারি করছেন।
তিনি বলেন, আমার ১৪ বছরের সংসার। বিয়ের ৬ বছর পর আব্দুল্লাহর জন্ম হয়। আব্দুল্লাহ স্থানীয় সামসুদ্দিন বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র রোল নং-১। গত ২-৩ দিন ধরে আব্দুল্লাহর শরীরে জ্বর। গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮ টার দিকে অসুস্থ আব্দুল্লাহ শুয়ে শুয়ে খাবার খাচ্ছিল।
এ সময়ে পাশের নির্মাণাধীণ ১০ তলা ভবন থেকে ইটের স্তপ (১৩ টি ইট) পড়ে আমার ঘরের টিনের উপর। আমার ঘরে টিন ফুটো হয়ে আব্দুল্লাহর উপর পড়ে। মুমর্ষ অবস্থায় আব্দুল্লাহকে সাইনবোর্ড প্রো-অ্যাকটিভ মেডিকেল হাসপাতাল নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে।
বুধবার সকালে আব্দুল্লাহর লাশ সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য নারায়নগঞ্জ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। কোন প্রকার সেফটি ছাড়াই ১০তলা ভবনটি নির্মাণাধীন রয়েছে।
এই ভবনের সভাপতি মিজমিজি রেকমত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মাদ আলীকেও আব্দুল্লাহর বাবা ও মা একাধিকবার অনুরোধ করেছেন ভবনের ইট কাঠ, বাশ বালু সুড়কি যেন বাড়িতে কিংবা বাড়ির মধ্যে এবং রাস্তায় না পড়ে।
কারণ আব্দুল্লাহ সহ তাদের দুটি সন্তান রয়েছে। ওই ইট কাঠ কিংবা নির্মাণ সামগ্রী পড়ে তাদের সন্তান কিংবা অন্যজনের সন্তান কিংবা যে কেউ দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে। কিন্ত তিনিও এর গুরুত্ব দেননি বলে অভিযোগ রুনা আক্তারের।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, নির্মাণাধীণ ভবনের মালিক আলমগীর হোসেন ও তার সহযোগীরা পরিকল্পিতভাবে ১০ তলা ভবন থেকে ইটের স্তপ ফেলে আমার বুকের মানিক আব্দুল্লাহকে কেড়ে নিয়েছে। তিনি আলমগীরসহ যারা জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় এনে ফাঁসির দাবি জানান। এদিকে ঘটনার পর আলমগীরের মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে। তিনি পলাতক রয়েছেন।
নির্মাণাধীণ ভবনের সভাপতি মিজমিজি রেকমত আলী উচ্চ বিদালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মআদ আলীসহ ভবনের ১৮ জন মালিকের সকলের মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে। তাদের প্রত্যেকের বাড়িতে গিয়েও তাদের পাওয়া যায়নি।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এসআই হুমায়ুন (২) বলেন, লাশের ময়না তদন্তের জন্য লাশ নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালে মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এ ঘটনায় নিহত মোঃ আব্দুল্লাহর বাবা মোঃ শরীফ হোসেন বাদীয় হয়ে ১৮ জনকে আসামী করে সিদ্বিরগঞ্জ থানা একটি মামলা দায়ের করেছেন।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম মোস্তফা বলেন, এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।