নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমান অভিযোগ করে বলেছেন তার দাদা, বাবা, মা, ভাইয়ের কবর সংস্কারের নামে শ্মশানের মাটি দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় তিনি ব্যথিত হয়েছেন। তিনি ক্ষুদ্ধ। এবং ২৪ ঘন্টার মধ্যে সেই মাটি সরিয়ে নিতে আল্টিমেটাম দিয়েছেন।
তিন বলেন, আমি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি যে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যাতে আমাকে আমার পরিবারকে ধৈয্য ধরার শক্তি দেন। আমি গত ২৭ জুলাই আলী আহম্মদ চুনকা সাহেবের স্ত্রী মমতাজ বেগমের কবর জিয়ারত করতে আসি। তখন দেখি শ্বশানের সংস্কার কাজ চলছে। ওইখানটায় মাটির স্তুপ করা আছে। আমার দাদা, আব্বা, আম্মা, ভাইয়াসহ মুক্তিযোদ্ধাদের কবর তখনও ঠিকঠাক ছিল। এখন এই জায়গা তিনফুট উচু। মাটি মাটি-ই। এটা নিয়ে আমার প্রশ্ন না। কিন্তু আজকে আমার কাছে মনে হচ্ছে আমি একজন ব্যর্থ সন্তান।
সোমবার বাদ যোহর ফতুল্লার মাসদাইরে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন কবরস্থানে দাদা, বাবা, মা, ভাইয়ের কবর সংস্কারের নামে শ্মশানের মাটি দেয়া হয়েছে এমন অভিযোগ করে তিনি এসব কথা বলেন।
মায়ের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে শামীম ওসমান বলেন, মাটির কি এতোই অভাব? আমার বাবা মা ভাই স্বজনদের কবর শ্মশানের মাটি দিয়ে ভরাট করতে হবে? তাছাড়া আমার স্বজনদের কবর আমার বা আমাদের অনুমতি ছাড়া আপনি সংস্কার করবেন কেন?
তিনি হাতজোড় করে বলেন, যারা এ কাজটি করছেন তাদের বলতে চাই, দয়া করে আল্লাহর কসম লাগে আমার আর ধৈয্যের পরীক্ষা নিবেন না। কেউ নোংড়া খেলা শুরু করবেন না। আমি কাউকে দায়ী করছি না। তবে যারা এই কাজটা করেছেন তারা আল্লাহর আযাব থেকে ভবিষ্যতে বাচার জন্য কবরগুলো যেই অবস্থায় ছিল সেই অবস্থায় ফিরিয়ে আনেন। না হলে এর জবাব দিতে হবে। আর না করলে আমি নিজের হাতে করবো আমার বাপ-দাদার কবর সংস্কার। এটা কঠিন ব্যাপার না। কিন্তু এই কাজটা তাদের। এই মাটিটা মেইন রোডে রাস্তার পাশেও রাখা যেত। এখানে কেন রাখা হলো?
তিনি বলেন, একজন মুসলমান হয়ে কে মানবে তার স্বজনের কবরে শ্মশানের মাটি দেয়া হবে। আজকের কবরের পাশে দাড়িয়ে জিয়াত করার জায়গাও নাই। এমনভাবে মাটি ফেলা হয়েছে। এখানে আমাদের শেষ ঠিকানা, এই ঠিকানাটাকেও ছাড় দিবেন না? যারা এই কাজ করেছে সিটি করপোরেশন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন এটাই আমার প্রত্যাশা।’
শামীম ওসমান বলেন, এটা টেস্ট কেস। তারা চেষ্টা করছে আমার মাথা গরম করে দেয়ার জন্য। আমি তাদের বলতে চাই আমার মাথা গরম হবে না। আমি শুধু আল্লাহর উপর ভরসা করি। এই সমস্ত পাপীদের আমি কেয়ার করি না।
তিনি বলেন, আমি সিটি করপোরেশনকে দায়ী করবো না। আমি মনে করি এটা কোন মানুষের কাজ না, এটা ইবলিশের কাজ। ‘যারা এ কাজটা করেছেন বা করিয়েছেন তাদের কাছে আমার একটাই জিজ্ঞাসা, কী লাভ হল এটা করে। আমারা বাবা মা ভাই মারা যাওয়ার পর আমার যেমন কষ্ট হয়েছিল আজকে তার চেয়ে কোন অংশে কম কষ্ট হচ্ছে না।’
শামীম ওসমান অভিযোগ করেন, এ ঘটনার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করা হয়েছে। এ ঘটনার মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের কবরের অবমানননা করা হয়েছে।
শামীম ওসমান প্রশ্ন রেখে বলেন, যারা এমন জঘন্য কাজ করেছে তাদের কাছে আমার জিজ্ঞাসা, এমন কাজ করে তাদের কি লাভ হয়েছে। এতে আমাদের কষ্ট আরো বেড়েছে। আমাদের বাবা মা স্বজনদের কবর সংস্কার আমরা করবো, এটা আমাদের কাজ। কিন্তু মুসলমানের কবর শ্মশানের মাটি দিয়ে ভরাট করে দেয়া হবে এটা মেনে নেয়া যায় না। এটা কেউই মেনে নিবে না। আমরাও চাই না কোন মুসলমানের কবরের মাটি শ্মশনে দেয়া হোক।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কেন্দ্রীয় (মাসদাইর) কবরস্থান ও শ্মশানের প্রাচীর নির্মাণের কাজ পায় মামুন মিয়া নামের এক ঠিকাদার। এ সময় শ্মশানের মাটি দিয়ে শামীম ওসমানের বাবা প্রয়াত একেএম শামসুজ্জোহা, মা নাগিনা জোহা, বড় ভাই একেএম নাসিম ওসমানসহ স্বজনদের কবরে ৩ ফিট মাটি ফেলা হয়।
ঠিকাদার মামুন জানান, শ্মশান সংস্কার, ঘাটলা নির্মান ও বাউন্ডারী দেয়াল নির্মানের কাজ সিটি কর্পোরেশেন থেকে পেয়েছি। কয়েকদিন আগে শ্মশানের পুকুরের পানি সরিয়ে বেজ করার সময় প্রচুর মাটি উঠে। কিছু মাটি কবরস্থানের সীমানায় রাখি। এরই মধ্যে কবরস্থানে দায়িত্বে থাকা লোকজন কবরে দেয়ার জন্য স্তুপ রাখা মাটি নিতে চাইলে আমি নিতে বলি।
এদিকে এমপি শামীম ওসমানের অভিযোগের পর সন্ধায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জাহাঙ্গীর হোসেন একটি টিম নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। তিনি জানান, কবরে নতুন করে যে মাটি দেয়া হয়েছে সেই মাটি আমরা লোকজন দিয়ে সরিয়ে নিয়েছি। এবং ধুয়ে মুছে কবর পরিস্কার করে দেয়া হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন মাটিগুলো শ্মশানের কিনা তা তদন্ত ছাড়া বলা যাবে না।