বোরকা পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সুইজারল্যান্ড সরকার। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে এক হাজার ডলার জরিমানা করা হবে।
নতুন এ সিদ্ধান্তের খসড়া পার্লামেন্টে পাঠিয়েছে সুইস সরকার। গত বুধবার পাঠানো এ খসড়ায় বলা হয়েছে, গত বছর জনসম্মুখে বোরকার ওপর নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে একটি বিল জমা হয়। এতে সুইস আইনপ্রণেতাদের ৫১ দশমিক ২ শতাংশ বোরকার ওপর নিষেধাজ্ঞার পক্ষে ভোটে দেয়।
সুইজারল্যান্ডের প্রধান ডানপন্থী রাজনৈতিক দল এগেরকিঙ্গের কমিটি বুধবার পার্লামেন্টে এই আইনের খসড়া বা বিল জমা দেয়। পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য বিলে সমর্থন জানালেই সেটি আইনে পরিণত হবে।
বিলে বোরকা বা নেকাবের নাম না নিয়েই জনসম্মুখে, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট, রেস্তোরাঁ বা রাস্তায় হাঁটার সময় মুখ লুকিয়ে রাখার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। নারীরা মাথার চুল ঢেকে রেখে হিজাব পরতে পারবেন। তবে, পুরো শরীর ঢাকলেও তাদের চেহারা অর্থাৎ মুখ, নাক, চোখ দেখা যেতে হবে। তাদের উপাসনালয়ে যাওয়ার অনুমতিও রয়েছে।
তবে, আইনের কিছু ব্যতিক্রমও রয়েছে। যার মধ্যে নিরাপত্তা, জলবায়ু বা স্বাস্থ্যের কারণে মুখ ঢেকে রাখা যাবে। বিলে কভিড বা এ জাতীয় প্রাদুর্ভাবের সময় মাস্ক পরার বিধান রাখা হয়েছে।
এক বিবৃতিতে জানানো হয়, মুখ ঢেকে রাখার ওপর এ নিষেধাজ্ঞা কেবল জনগণের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা। শাস্তি অগ্রাধিকার নয়।
সুইজারল্যান্ডের মুসলিম দলগুলো এ নিষেধাজ্ঞার নিন্দা জানিয়েছে। ফেডারেশন অব ইসলামিক অর্গানাইজেশন বলেছে, সংবিধানে পোশাকের ধরন নির্ধারণ করে দেওয়া নারীদের স্বাধীনতার পরিপন্থী একটি পদক্ষেপ। এটি নিরপেক্ষতা, সহনশীলতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠার মূল্যবোধে বাধা দেয়।
মাত্র ৮৬ লাখ জনসংখ্যার দেশ সুইজারল্যান্ডে ৫ শতাংশ মুসলিমের বসবাস। তাদের অধিকাংশই তুরস্ক, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা এবং কসোভোর নাগরিক। ইউনিভার্সিটি অব লুসার্নের হিসেব অনুযায়ী, দেশটিতে মাত্র ৩০ জন মহিলা নেকাব পরেন।
মুখ ঢেকে রাখা নিষিদ্ধ এমন পাঁচটি দেশের মধ্যে একটি সুইজারল্যান্ড। ২০১১ সালে ফ্রান্স জনসমক্ষে পুরো মুখ ঢেকে রেখে বোরকা পরা নিষিদ্ধ করেছিল। বর্তমানে ডেনমার্ক, অস্ট্রিয়া, নেদারল্যান্ডস ও বুলগেরিয়ায় জনসমক্ষে মুখ ঢেকে রাখায় সম্পূর্ণ ও আংশিক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মুখমণ্ডল ঢেকে রাখার ওপর নিষেধাজ্ঞাকে একটি বিপজ্জনক নীতি যা মত প্রকাশ ও ধর্মের স্বাধীনতাসহ নারীর অধিকার লঙ্ঘন করে বলে অভিহিত করেছে।