নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কামরুল হাসান পিপিএম। পিপিএম হলো রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক। সাধারণত বীরত্বপূর্ণ কাজের জন্য অথবা ভাল কোন কাজের বিনিময়ে (যেটা সবার নজরে বেশি আসে) তাদের সম্মাননা দেওয়া হয়। তিনি সেটা পেয়েছেন। তাই নামের সামনে লিখেন পিপিএম। কিন্তু এই সম্মানজনক পদক প্রাপ্ত কামরুল হাসান সামারী মানে আটক বাণিজ্য খুব ভালো বোঝেন। এজন্য সোর্স নিয়স্ত্রণ করেন তিনি। সোর্সের মাধ্যমেই তার সামারী চলে। কিন্তু কথায় আছে ‘চোরের দশ দিন, গিরিস্তের একদিন’। আর তেমনটাই ঘটেছে তার কপালে।
মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) ভোররাত ৪টার দিকে ফতুল্লা থানার তল্লা কায়েমপুরস্থ বটতলা এলাকায় সামারী করার সময় ৩ সোর্সসহ ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন গুণধর এই পুলিশ কর্মকর্তা। তিন সোর্সের নাম হচ্ছে-রিয়াদ, বিজয় ও ইমন।
এসআই কামরুল হাসানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে. তিনি সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় কর্মরত হলেও ফতুল্লা সীমানায় গিয়ে চাঁদমারি, শিবু মার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকায় আটক বাণিজ্য করেন।
ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের একটি সুত্র জানায়, ফতুল্লা মডেল থানার উপ-পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে নিয়মিত টইল ডিউটি করাকালীন সময় মঙ্গলবার ভোর রাত চারটার দিকে কায়েমপুর বটতলা এলাকায় একটি চায়ের দোকানে সন্দেহভাজন তিন যুবককে দেখতে পান। তখন তাদেরকে চায়ের দোকানে অবস্থানের কারণ জিজ্ঞেস করলে তারা জানায় সকলেই পুলিশের সোর্সের কাজ করে এবং সকলের বাড়ী ফতুল্লা মডেল থানার ভুইগড় এলাকায়। তারা সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এসআই কামরুল হাসানের সোর্স হিসেবে কাজ করার কথা জানায়। তখন এস,আই কামরুলকে ফতুল্লা মডেল থানার এস,আই সাইফুল ইসলাম ফোন করে সোর্স এবং অভিযানের বিষয়ে জানতে চাইলে সে বলে আসামী গ্রেফতারে অভিযানে এসেছে। তখন সাইফুল জানতে চায় তিনি ফতুল্লা থানার ওসি কিংবা উধ্বর্তন কর্মকর্তা বা কন্ট্রোল রুমের পারমিশন নিয়েছেন কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে কামরুল জানায় না সে কোন অনুমতি নেয়নি। এক পর্যায়ে এস,আই কামরুল উত্তেজিত হয়ে ফতুল্লা মডেল থানার এস,আই সাইফুল ইসলামের উপর রেগে যান। তখন এস,আই সাইফুল বিষয়টি ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ নূরে আজম মিয়াকে জানান। সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান ফতুল্লা মডেল থানার ইন্সপেক্টর (অপারেশন) কাজী মাসুদ রানা। তার আগেই ঘটনাস্থলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এস,আই কামরুল ও এ,এস,আই রেজাউল নিজস্ব ফোর্স নিয়ে পৌছে এস,আই সাইফুলের সাথে অশোভন আচরণ করে। তখন সাইফুল অনুমতি ছাড়া সাদা পোষাকে ফতুল্লা থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা কে অবৈধ বলে তাদেরকে আটকে রাখেন। এক পর্যায়ে সেখানে ফতুল্লা থানার ইনস্পেক্টর (অপারেশন) কাজী মাসুদ রানা ফতুল্লা মডেল থানার অপর একটি টিম নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। একই সময় সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে ছুটে আসেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মোজাম্মেল হক। তখন এস,আই কামরুলসহ সকলকে ফতুল্লা মডেল থানায় নিয়ে আসতে চাইলে তখন উপর মহলের তদবিরে এসআই কামরুল ও এএসআই রেজাউলকে সেখানে ছেড়ে দিয়ে আসা হয়। তবে ফতুল্লা মডেল থানায় নিয়ে আসা হয় সিএনজি চালকসহ তিন সোর্সকে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এসআই কামরুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, একটি অভিযানে জালকুড়ি গিয়েছিলাম। কিন্তু আসামির বাড়ি চিনতাম না। আমার সাথে থাকা ৩ সোর্সকে কায়েমপুর বটতলা রেখে আমি গাড়ি নিয়ে অন্য আরেক সোর্সকে আনতে চাষাঢ়ার দিকে যাচ্ছিলাম। এমন সময় ফতুল্লা থানার এসআই আমার ওই ৩ সোর্সকে আটক করে। আমি তাদের ছাড়াতে গিয়েছিলাম। তখন আমার সাথেও খারাপ আচরণ করেন এসআই সাইফুল।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি গোলাম মোস্তফা সাংবাদিবদের বলেন, কিছুতো হয়নি। এ রকম কোন ঘটনা আমার জানা নেই।
ঘটনার বিষয়টি অস্বীকার করলেও অপর একটি সূত্র নিশ্চিত করে যে, দুপুর পৌনে একটায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি গোলাম মোস্তফা মোবাইল ফোনে কল করে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার জন্য অনুরোধ জানান ফতুল্লা মডেল থানার ওসিকে। এবং তিনি জানান, এসআই কামরুল জালকুড়িতে ৩ ছিনতাইকারীকে আটক করেছিল। অপর ছিনতাইকারীকে ধরতে চাষাড়া গিয়েছিল।
বিষয়টি জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (‘ক’ সার্কেল) এস এম জহিরুল ইসলাম (বিপিএম) জানান, আমি ছুটিতে আছি। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নই।