কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক উপক‚লে ভেসে আসা একটি ট্রলার থেকে রোববার হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ১০ জনের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, সাগরে তাদের হত্যা করা হয়েছে। তবে কারা তাদের হত্যা করল এ নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। নিহতদের সবাই জলদস্যু বলে ধারণা স্থানীয়দের।
এদিকে সিআইডি নিহতদের প্রাথমিক পরিচয় শনাক্ত করেছে। তবে ডিএনএ পরীক্ষার পর ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। ঘটনার তদন্তে মাঠে নেমেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও সিআইডি।
এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাগর থেকে ফেরা ছয়জন এবং মাতারবাড়ী এলাকার বাইট্টা কামাল ও নুর হোসাইনকে আটক করা হয়েছে বলে তাদের স্বজনরা দাবি করেছেন। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সংস্থা বিষয়টি স্বীকার করেনি।
সিআইডি কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. শাহেদ মিয়া যুগান্তরকে বলেন, আমরা আজ (সোমবার) সকালেও উদ্ধার হওয়া ট্রলারে গিয়েছি। আরও কিছু আলামত সংগ্রহ করেছি। ইতোমধ্যে নিহতদের প্রাথমিক পরিচয়ও শনাক্ত হয়েছে। তবে মুখ ও শরীরের অবয়ব বিকৃত হওয়ায় কোনটি কার লাশ তা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। তাই নিহতদের ডিএনএ সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীক্ষার ফল এলে বোঝা যাবে কোনটি কার লাশ।
সোমবার দুপুরে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে এসে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোছেন ও সিআইডির ডিআইজি হাবিবুর রহমান।
ডিআইজি আনোয়ার হোছেন বলেন, ১০ লাশের মধ্যে চারজনকে তাদের আত্মীয় স্বজনরা শনাক্ত করতে পেরেছে। তিনি বলেন, এখনো আমরা সুনিশ্চিতভাবে বলতে পারছি না কিভাবে এ ঘটনাটি ঘটেছে, কারা ঘটিয়েছে। আমাদের তদন্ত চলছে। ঢাকা থেকে সিআইডি ও পিবিআইয়ের স্পেশাল টিম আসছে। তারাও কাজ করছে।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম জানান, মহেশখালী ও চকরিয়া থেকে ট্রলারে সাগরে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনরা কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে এসে ১০ জনের পরিচয় শনাক্ত করেছে। তবে এ পরিচয় প্রাথমিক।
রোববার সকাল থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত টানা অভিযান চালিয়ে মাছ ধরার ট্রলারের কোল্ডস্টোর থেকে লাশগুলো উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের সদস্যরা। নিহতদের সবাই মহেশখালী ও চকরিয়া উপজেলার বাসিন্দা। এদের মধ্যে ট্রলারের মালিক সামশুল আলমও রয়েছেন। তিনি মহেশখালীর হোয়ানক ইউনিয়নের ছনখোলা এলাকার বাসিন্দা রফিক মিয়ার ছেলে।
অপর নিহতরা হলেনÑমহেশখালী উপজেলার শাপলাপুর ইউনিয়নের মিঠাছড়ি গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (১৮), জাফর আলমের ছেলে শওকত উলাহ (১৮), মুসা আলীর ছেলে ওসমাণ গনি (১৭), চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নের কবির হোসাইনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (৩৪), শাহ আলমের ছেলে মোহাম্মদ শাহজাহান (৩৫), চকরিয়া পৌরসভার চিরিঙ্গা এলাকার জসিম উদ্দীনের ছেলে তারেক জিয়া (২৫), সাহাব মিয়ার ছেলে সাইফুলাহ (২৩), মোহাম্মদ আলীর ছেলে পারভেজ মোশাররফ (১৪) ও মোহাম্মদ হোসাইনের ছেলে নুরুল কবির (২৮)।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। হয়তো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অনেককে আটক করা হতে পারে। তবে এ ব্যাপারে আমার কাছে তথ্য নেই।
এদিকে মহেশখালীতে নিহতদের পরিবার ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের দেওয়া তথ্য মতে, চিহ্নিত জলদস্যু নুরুল কবির, নজরুল, মাহবুব ও কালা জাহাঙ্গীর ঈদের আগে কয়েকবার সাগরে ডাকাতি করেছে। ৭ এপ্রিল হোয়ানকের ছনখোলা পাড়া এলাকার শামসু বহদ্দারের ফিশিং ট্রলারে ১৯ জেলে সাগরে মাছ ধরতে যায়। কিন্তু ২-৩ দিন পর তাদের খোঁজ পাচ্ছিল না তাদের পরিবার। এর কয়েক দিন পর এলাকায় প্রচার হয়, সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া একটি ট্রলারে ডাকাতি হয়েছে। ট্রলারটির মাঝিমালাকে হাত পা বেঁধে মারধর করে বোটটি ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে।
১৬ এপ্রিল নিখোঁজ হওয়া জেলের মধ্যে নজরুল ও মাহবুবসহ আটজন এলাকায় ফিরে আসে। এর দুদিন আগে মাছ নিয়ে ফিরে আসেন কালারমারছড়ার চিহ্নিত জলদস্যু কালা জাহাঙ্গীর। তবে তাদের সহযোগী নুরুল কবির ফিরে আসেননি। উদ্ধার করা লাশের মধ্যে তার লাশও রয়েছে।
নিহত ওসমানের বাবা মুসা আলী বলেন, শামলাপুরের বাসিন্দা মোহাম্মদ হোসাইনের ছেলে নুরুল কবির (২৮) আমার ছেলেসহ প্রায় পাঁচ যুবককে ট্রলারে মাছ ধরার কথা বলে সাগরে নিয়ে যায়। যা আমরা জানতাম না। নুরুল কবির একজন চিহ্নিত জলদস্যু।
সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের দেওয়া তথ্য মতে, স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সাগরে ডাকাতির খবর শুনে ডাকাত দলকে ধাওয়া করতে যায় মাতারবাড়ীর বাইট্টা কামাল, নুর হোসাইন বহদ্দার, আবছার মাঝি ও বাবুল মাঝির মালিকানাধীন ট্রলার।