সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহবায়ক রফিউর রাব্বি বলেছেন, সরকার ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য বিচার ব্যবস্থাকে পুরোপুরি ধ্বংস করেছে। বিচারহীনতা ও কর্তৃত্তবাদী শাসন দেশকে আজ এমন ভয়াবহ এক পর্যায়ে এনে দাঁড় করিয়েছে যেখানে বহিঃশক্তি আমাদের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। একটি স্বাধীন দেশের জন্য এইটি অত্যন্ত অমর্যাদাকর। বিচারব্যবস্থা, বাকস্বাধীনতা, ভোটাধিকার, মানবাধিকার, গণতন্ত্র সবকিছুই আজ প্রশ্নবিদ্ধ। ভিন্ন-মত দমনে গুম-খুনের মধ্যদিয়ে সরকার এই দেশকে বিশে^র কাছে বর্বর-রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করেছে। আর সেজন্যই তারা দেশের বিরুদ্ধে একের পর এক অমর্যাদাকর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার সুযোগ পাচ্ছে। সাড়ে দশ বছর পেরুলেও, ঘাতক চিহ্নিত হলেও ত্বকী হত্যার বিচার শুরু হয় না। শাসকগোষ্ঠীর ছত্রছায়ায় অপরাধীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। ১০০ বার সময় নিয়েও সাগর-রুনী হত্যার অভিযোগপত্র আদালতে জমা পড়ে না।
তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার ১২৭ মাস উপলক্ষে রোববর (৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় আলী আহাম্মদ চুনকা নগর মিলনায়তন প্রঙ্গণে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন।
রফিউর রাব্বি আরও বলেন, আমরা আর এই সরকারের কাছে ত্বকী হত্যার বিচার চাই না। যারা সাড়ে দশ বছরে বিচার করে নাই দু’এক মাসে তা তারা করবে না। আগামী নির্বাচনে এমন সরকার আমাদের প্রত্যাশা যারা বিচারহীনতা থেকে মানুষকে মুক্তি দেবে। মানুষের ভোটের অধিকার, কথা বলার অধিকার, মানবাধিকার, সংবিধানে উল্লেখিত সকল গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দেবে। ত্বকী সহ সাগর-রুনী, তনু ও নারায়ণগঞ্জের আশিক, চঞ্চন, বুলু, মিঠু সহ সকল হত্যার বিচার করবে।
সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্য সচিব হালিম আজাদ বলেন, সাড়ে দশ বছর আগে ত্বকী হত্যার তদন্ত শেষ হয়ে অভিযোগপত্র তৈরী করে রাখার পরেও তা আদালতে পেশ করা হয় নাই। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই এ হত্যার বিচার বন্ধ করে রাখা হয়েছে। সরকার মুখে যাই বলুক না কেন এ হত্যাকাÐের সাথে জড়িতরা যেহেতু সরকার দলীয়, সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে আছে, সে কারণেই এ বিচার হচ্ছে না।
এড. মাহাবুবুর রহমান মাসুম বলেন, শামীম ওসমানের নির্দেশে ত্বকীকে হত্যা করা হয়েছে বলেই ত্বকী হত্যার বিচার বন্ধ হয়ে আছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে বলবো আপনি অত্যন্ত নির্মম, অন্যায় ও নিষ্ঠুরতার একটি উদাহরণ রেখে গেলেন। তিনি বলেন, শামীম ওসমান আপনি যত কারসাজিই করেন ত্বকীকে হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে আপনাকে অবশ্যই আইনের আওতায় আসতে হবে। বিচার আপনার হবেই।
সংগঠনের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম কাজলের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, শিশু সংগঠক রথীন চক্রবর্তী, দৈনিক খবরের পাতার সম্পাদক এড. মাহাবুবুর রহমান মাসুম, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল হক দীপু, বাসদ কেন্দ্রীয় সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য নিখিল দাস, সিপিবি জেলা সাধারণ সম্পাদক শিবনাথ চক্রবর্তী, ন্যাপ জেলা সাধারণ সম্পাদক এড. আওলাদ হোসেন, গণসংহতি আন্দোলন জেলার সমন্বয়ক তরিকুর সুজন, ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সভাপতি হাফিজুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহীন মাহমুদ, সদস্য দীনা তাজরীন ও সামাজিক সংগঠন সমমনার সাবেক সভাপতি দুলাল সাহা।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরীর শায়েস্তা খাঁ রোডের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয় তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। দু’দিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বছরের ১২ নভেম্বর আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে জানায়, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। ৫ মার্চ ২০১৪ তদন্তকারী সংস্থা র্যাব সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের নির্দেশে তাদেরই টর্চারসেলে ১১ জন মিলে ত্বকীকে হত্যা করেছে। অচিরেই তারা অভিযোগপত্র আদালতে পেশ করবে। কিন্তু সে অভিযোগপত্র আজো পেশ করা হয় নাই। ত্বকী হত্যার পর থেকে বিচার শুরু ও চিহ্নিত আসামীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রতি মাসের ৮ তারিখ আলোক প্রজ্বালন সহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট।