রুদ্রবার্তা২৪.নেট: নারায়ণগঞ্জ ৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান বলেছেন, নারায়ণগঞ্জ সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতির জেলা। তাই কবরস্থানে শ্মশানের পুকুরের মাটি ফেলে এই স¤প্রীতি নষ্ট করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। মানুষের মৃত্যুর পর তার কোন কিছু থাকেনা এটাই (কবরস্থান) তার শেষ ঠিকানা। এখানে এ পুকুরে পিন্ড দান করা হতো। আগে কবরস্থান ও শ্মশানের মাঝে দেয়াল তৈরী করে পরে উন্নয়ন কাজ শুরু করলে ভালো হতো।
মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) দুপুরে নগরীর মাসদাইর এলাকায় কেন্দ্রীয় সিটি কবরস্থানে নিজ বাবা-মা ও বড় ভাইসহ মুক্তিযোদ্ধাদের কবরের ওপর ফেলা মাটি সরানোর কাজ পরিদর্শনে এসে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। এ সময় জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠনের নেতবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
কবরস্থান পরিদর্শন শেষে বাবা-মা ও বড় ভাইয়ের কবরে গিলাপ পরিয়ে তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়াও করেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য।
এ সময় শামীম ওসমান আরো বলেন, যারা এ খেলা খেলছেন কিংবা খেলাচ্ছেন তাদেরকে বলি, মৃত্যুকে ভয় পান। যেতে হবেই আপনি যে ধর্মের হননা কেন। আমি ধৈর্য্যশীল কারণ আমি একজন নেত্রীর কর্মী যিনি বিষকে হজম করেন। তার মত নীলকন্ঠী নেত্রীর কর্মী হিসেবে আমিও চেষ্টা করছি বিষকে হজম করতে। হয়তো উনার মত হতে পারবোনা তবে আমরা রক্তে মাংসে গড়া মানুষ। যদি নারায়ণগঞ্জের মানুষের ধৈর্য্যচ্যূতি ঘটে তবে আমি তো নারায়ণগঞ্জের মানুষের বাইরের কেউনা। তাই অনুরোধ করবো অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
আমার নেতাকর্মীরা, স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিরা কাল উত্তেজিত ছিল। আমি তাদের একটা কথাই বলেছি এ মাসটা আমাদের পিতার মৃত্যুবার্ষিকী, শোকের মাস। আমাদের বংশ নির্বংশ করা হয়েছিল এ মাসে। এ মাসে আমরা এমন কোন কর্মকান্ড করতে পারিনা যাতে জাতির পিতার অসম্মান হয়। আশা করি আমরা নায্য বিচার পাব। আমি মনে করি, এ বিষয়ে অবশ্যই তদন্ত হবে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে বিচার হওয়া উচিত।
আমার বাবা মা ভাইয়ের নামে নারায়ণগঞ্জে সড়ক ও ব্রিজের নামকরণ করা হয়েছে। এটি যথাযথ প্রক্রিয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে কাগজ যায় সেটি সকল দপ্তর হয়ে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে বাস্তবায়ন হয়। নারায়ণগঞ্জের কিছু লোক গত ৮ বছর ধরে বিভিন্নভাবে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন আমরা সহ্য করছি। কারণ আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের পছন্দ করেন।
তিনি বলেন, আমি ভেবেছিলাম আজ এখানে সে দেখবো নাসিকের সিইও। আইভীর কথা বলবোনা কারণ কিছুদিন আগে তার মা মারা গেছে। এখানে আসার মত অবস্থা নাও থাকতে পারে বাঁ মহিলা মানুষ কবরস্থানে নাও আসতে পারে নিয়ম কানুন আছে আমি জানিনা। সিইও কোথায় যার অধীনে কাজ হয়েছে, যার কারণে মুক্তিযোদ্ধাদের কবরের হদিস নেই।
আমি এখন পর্যন্ত সিটি করপোরেশনের কোন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, সিইও কিংবা এক্সিকিউটিব ইঞ্জিনিয়ার যারা সরকারের পয়সা খান এবং নারায়ণগঞ্জের মানুষের ট্যাক্স এর পয়সায় লালিত পালিত আমি তাদের দেখিও নাই, আমি একজন এমপি আমার সাথেই কথা বলেননি অন্য কারো সাথে কথা বলার তো প্রয়োজনই মনে করেন না।
শামীম ওসমান বলেন, আমি তো আমার আব্বা আম্মা দাদা দাদী ভাইয়ের কবর তো উদ্ধার করলাম আপনাদের সহযোগিতায়। কিন্তু বাকি কবরগুলোর যে অবস্থা এখানে যে প্রায় ৪০ থেকে ৫০টা কবর সেগুলোর কি হবে। শ্মশানের মাটি এখানে আসতে পারেনা কারণ প্রত্যেকটা ধর্মেরই একটা রীতি আছে যা মেনে আমাদের কাজ করা উচিত। মসজিদের সামনে আমি কোরবানি দিতে পারি কিন্তু আমি কোনদিন একটা মন্দিরে কোরবানি দিতে পারিনা। কেউ যদি চায় তাহলে সেটা সা¤প্রদায়িকতা নষ্ট করার একটা প্রয়াস। শ্মশানের মাটি এখানে কবরে দিয়ে দেয়া হয়েছে যেটা কোন মানুষ মানতে পারেনা। এটা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি নষ্ট করা ও শোকের মাসে যারা বঙ্গবন্ধুর ডাকে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন তাদের প্রতি চরম অবমাননা।
এখানে কোনটা কার কবর আমরা নিজেরাও বুঝতে পারছিনা। যাদের স্বজনদের কবর এখানে তাদের কি অবস্থা। আমি তো আমার কথা বলে নিজে হালকা হচ্ছি তারা কি করবে। আমি কারো বিরুদ্ধে কথা বলতে চাইনা। দুনিয়ায় যে আযাব আসছে এগুলো বিনা কারণে আসেনা।
এমপি আরো বলেন, সিটি করপোরেশন কাজ না করলেও আমরা কাজ করছি। এখানে অধিকাংশ আমাদের শ্রমিক। ঠিকাদারও কাজ করেছেন। এই খাদেম কে তার অতীত ইতিহাস কি সেটাও আমাদের জানা দরকার কারণ টুপি তো অনেকেই পড়ে মসজিদে তো অনেকেই যায়। অনেকের রূপ তো আমরা অনেকদিন ধরে দেখছি। যে যদি মোয়াজ্জিন হয়ে থাকে মসজিদের কাজ করে থাকে তাহলে তো তার জানা উচিত এখানে শ্মশানের মাটি দেয়া যায়না। আমি জানিনা সে দায়ী কিনা তদন্ত হওয়া উচিত।
এদিকে এ ঘটনায় মেয়র আইভী কোন ফোন করেছেন কিনা বাঁ সমবেদনা জানিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, আমি আমি এখন পর্যন্ত উনার কাছ থেকে কোন ফোন পাই নাই, তবে আশা করেছিলাম যে ফোন অথবা খুদেবার্তা হলেও পাঠাবে। এরকম কিছু পাঠাননি তিনি। এতে সিটি করপোরেশন জড়িত নাকি জড়িত নয় আমি বুঝতে পারছিনা।
এর আগে, সোমবার (৯ আগস্ট) দুপুরে কবরস্থানে নিজের বাবা-মা ও বড় ভাইয়ের কবর জিয়ারত করতে এসে শামীম ওসমান দেখেন, সিটি করপোরেশনের তত্ত¡াবধানে কবরস্থানের পাশে শ্মশানের পুকুর খনন ও সংস্কার কাজ করার সময় তার পরিবারের চার সদস্য এবং বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাসহ অর্ধ শতাধিক কবর ভরাট করে ফেলা হয়েছে। কবরগুলো প্রায় তিন ফুট মাটির নিচে দেবে যায়। পাশাপাশি কবরগুলোর ওপর শ্মশানের পুকুরের মাটিও ফেলা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের কাছে তিনি অভিযোগ করেন।
এছাড়া কবরের উপর দিয়ে কবরস্থানে চলাচলের রাস্তা তৈরী করেছে কবরস্থানের দায়িত্বে থাকা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন।