দিন শেষের স্কোরবোর্ডের চিত্রে নিশ্চয়ই আপনারা খুশি? বাংলাদেশের বিপক্ষে আরেকটি সেঞ্চুরি মিস করা দিমুথ করুণারত্নেকে এই প্রশ্ন করা মানে নিশ্চিতভাবেই কষ্ট বাড়ানো! কেননা তার ব্যাটেই যে চট্টগ্রামে বড় সংগ্রহের পথে ছুটছিল অতিথিরা। পরে সেই ব্যাটন আগলে নেন কুশল মেন্ডিস।
দলের সাফল্যের জন্য করুণারত্নের মুখে এক গাল হাসি থাকলেও নিজের জন্য কিছুটা আক্ষেপ। বাংলাদেশের বিপক্ষে পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই গড়ে রান করা বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ৮৬ রানে থেমে যান। করুণারত্নে অবশ্য একাই নন। কুশল মেন্ডিসও সেঞ্চুরি মিস করেছেন। থেমে যান ৯৩ রান। দুই সেঞ্চুরি মিসের আক্ষেপের দিনে শ্রীলঙ্কার রান ৪ উইকেটে ৩১৪। প্রথম দিনের বিচারে এই পুঁজি তৃপ্ত করুণারত্নের, ‘প্রথম দিনের বিবেচনায় তিনশ বেশি যে কোনো রানই যথেষ্ট।’
বাংলাদেশ শিবির কি তৃপ্ত? কোনোভাবেই হওয়ার কথা নয়। কেননা রান স্বর্গ উইকেটে ৪ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি আরো চার সুযোগ তৈরি করেছিল বাংলাদেশ? যেগুলো দু’হাত ভরে নিতে পারলে অতিথিদের মুখে হাসি ম্লান করে সমতার দিনটি পুরোপুরি নিজেদের করে নিতে পারতো।
বাংলাদেশের ১০৪তম ক্রিকেটার হিসেবে হাসান মাহমুদের পথ চলা শুরু হয়েছে এই ম্যাচে। টানা ২৭ ম্যাচ পর বিশ্রাম পাওয়া শরিফুল ইসলামের পরিবর্তে হাসানের সুযোগ মেলে। নতুন বলে তার হাত ধরেই সুযোগ তৈরি হয়েছিল। ষষ্ঠ ওভারে হাসানের অফ স্টাম্পের বাইরে লেংথ বল পেছনের পায়ে খেলে দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ দেন ৯ রানে থাকা মাদুশঙ্কা। সহজ ক্যাচ হাতে জমাতে পারেননি মাহমুদুল হাসান জয়।
এরপর প্রথম সেশনে আরো দুইটি সুযোগ তৈরি করে বাংলাদেশ। হতাশাময় প্রথম ঘণ্টার পর দ্বিতীয় ঘণ্টায় রান আউটের সুযোগ আসে। মিরাজের সরাসরি থ্রো স্ট্যাম্পে আঘাত করলে ১৮ রানে ড্রেসিংরুমে ফিরতে পারতেন করুণারত্নে। ষোড়শ ওভারে পয়েন্টে বল পাঠিয়ে মাদুশঙ্কা রান নেওয়ার জন্য ছুটেন। করুনারত্নে মাঝপথে গিয়ে গিয়ে হাল ছেড়ে দেন। বল লুফে নিলেও স্টাম্প বরাবর সই করতে পারেননি মিরাজ। এরপর ২২তম ওভারের শেষ বলে হাসানের বাউন্সারে পুল করলে নিয়ন্ত্রণ ছিল না করুণারত্নের। ফাইন লেগে দাঁড়ানো সাকিব নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি। তাই বলের নাগাল পেলেও বল তালুবন্দি করতে পারেননি। ২৮ রানে করুণারত্নে পেয়ে যান আরেকটি জীবন।
প্রথম সেশনে উদ্বোধনী জুটি ভাঙতে পারেনি বাংলাদেশ। দ্বিতীয় সেশনে দুই ওপেনারই আউট হন নিজেদের ভুলে। যেখানে বাংলাদেশকে কৃতিত্ব দেওয়ার বড় কিছু নেই। দুই ব্যাটসম্যানের ভুল বোঝাবুঝিতে মাদুশঙ্কা রান আউট হন ৫৭ রানে। হাসানের থ্রো থেকে বল পেয়ে উইকেট ভাঙেন লিটন। এরপর ডানহাতি পেসারের অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের ডেলিভারি ড্রাইভ করতে গিয়ে উইকেটে টেনে আনেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে এর আগে ৩ সেঞ্চুরি ও ৬ ফিফটি পেয়েছেন করুণারত্নে। রান করেছেন হাজারেও বেশি। বলতে দ্বিধা নেই বাংলাদেশ তার অন্যতম প্রিয় প্রতিপক্ষ। কিন্তু ৮ চার ও ১ ছক্কায় ১২৯ বলে ৮৬ রান করা করুণারত্নে বড় আক্ষেপ নিয়ে ফেরেন ড্রেসিংরুমে।
দ্বিতীয় সেশনে দুই ওপেনারকে ফেরানোর স্বস্তি থাকলেও বাংলাদেশের জন্য অস্বস্তির জন্য মেন্ডিস ও ম্যাথুজের ছুটে চলা। এর মধ্যে সুযোগ হাতছাড়ার কষ্ট তো রয়েছেই।
তৃতীয় সেশন ছিল বাংলাদেশের। একটি সুযোগ হাতছাড়া করলেও দুই উইকেট নিয়ে পড়ন্ত বিকেলটা নিজেদের করে নেয়। তাতে দিনের লড়াইয়ে ফেরে সমতা। ৬৮.২ ওভারে মিরাজের বলে স্লিপে ক্যাচ তোলেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ। কিন্তু বাঁদিকে ঝাঁপিয়েও সেই ক্যাচ নিতে পারেননি শাহাদাত হোসেন দিপু। ১৬ রানে জীবন পাওয়ার পর অবশ্য ম্যাথিউজ বেশিদূর যেতে পারেননি। নতুন বল নেওয়ার পর প্রথম ওভারেই হাসানের লাফিয়ে উঠা বলে স্লিপে ক্যাচ দেন। মিরাজ ওই ক্যাচ নিয়ে বাংলাদেশকে সাফল্য ভাসান।
এর আগেই অবশ্য সাকিব নিজের সাফল্য নিশ্চিত করেন মেন্ডিসকে ফিরিয়ে। সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ৭ রান দূরে থাকতে শ্রীলঙ্কার ওয়ানডে অধিনায়ক ক্যাচ দেন স্লিপে। এখানেও মিরাজের হাত নির্ভার। ক্যাচ নিয়ে সাকিবকে উপহার দেন উইকেট।
টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানের পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংসের পর শ্রীলঙ্কা বড় রান করেছে ঠিকই। কিন্তু দিন শেষে স্কোরবোর্ডের বাংলাদেশও খুশি। অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ২৫ রান যোগ করেন দিনের খেলা শেষ করেন দিনেশ চান্দিমাল ও ধানাঞ্জয়া ডি সিলভা।
পাঁচ বোলারের শক্তিতে কি শ্রীলঙ্কাকে নাগালে রাখা সম্ভব? সেটি অসম্ভব হলে এই টেস্টে বড় হ্যাপা নিতে হবে শান্তদেরকে। সফরকারীরা যত দূর যাবে, ততই চট্টগ্রামের গরমে হাঁপিয়ে উঠবে বাংলাদেশ। সিরিজ বাঁচাতে রানের চাপ এবং মাঠের তাপের সঙ্গে লড়াইয়ে জিততে হবে বাংলাদেশকে।