১৯৯৯ আসরের পর আর কোনো বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারাতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। দুই যুগ পর আইসিসির ইভেন্টে তারা হারের বৃত্ত ভেঙেছে। বলতে গেলে এক প্রোটিয়া ব্যাটার এইডেন মার্করামের কাছেই হেরে গেল বাবর আজমের দল। যদিও তাকে বিদায় করে পাকিস্তান শেষদিকে নাটকীয়তা তৈরি করেছিল। কিন্তু আগেই ৯১ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ের পথ সহজ করে দিয়ে যান মার্করাম। শেষ পর্যন্ত তারা পাকিস্তানের দেওয়া ২৭১ রানের লক্ষ্য ১ উইকেটে পেরিয়েছে।
এ নিয়ে চলতি বিশ্বকাপে যৌথভাবে সর্বোচ্চ পঞ্চম জয় তুলে নিল প্রোটিয়ারা। সমান সংখ্যক জয় পাওয়া ভারত এখনও এই আসরে কোনো হার দেখেনি। চলতি বিশ্বকাপে আজকের ম্যাচসহ দুদিন পরে ব্যাট করেছে টেম্বা বাভুমার দল। দুটি ম্যাচেই তাদের ভুগতে হয়েছে। অথচ আগে ব্যাট করা বাকি ম্যাচগুলোতে তাদের ব্যাটারদের হাতে রয়েছিল পুরো ম্যাচের দখল!
চেন্নাইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা-পাকিস্তানের শেষ কয়েক ওভার ছিল চরম শ্বাসরুদ্ধকর। একে চলতি বিশ্বকাপের সবচেয়ে জমজমাট ম্যাচ বললেও ভুল হবে না! শেষদিকে ১৮ বলে মাত্র ৫ রান দরকার ছিল প্রোটিয়াদের, তবে তাদের হাতে ছিল মাত্র এক উইকেট। অন্যদিকে আগেই তিন পেসারের কোটা পূরণ করে ফেলা বাবরকে জয় নিশ্চিত করতে স্পিনারের ওপরই নির্ভর করতে হতো। যার প্রতিদান দিতে পারেননি মোহাম্মদ নেওয়াজ। তার করা দুটি বলেরই লাইন ছিল লেগ-স্টাম্প থেকে বের হতে চাওয়া! যাতে কেশব মহারাজ আলতো ব্যাটের ছোঁয়া দিতেই জয়ের বন্দরে দক্ষিণ আফ্রিকা।
পাকিস্তানের দেওয়া লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ওভারেই তোলে ১১ রান। শাহিন আফ্রিদির করা দ্বিতীয় ওভারে কুইন্টন ডি কক একাই তোলেন ১৯ রান। শাহিনই পরে তার সেই ঝড় থামান। ১৪ বলে ২৪ রান করা ডি কক ওয়াসিমকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। এরপর প্রোটিয়া অধিনায়ক টেম্বা বাভুমাকে ফেরান ওয়াসিম জুনিয়র। বাভুমার ব্যাটে আসে ২৮ রান।
তুখোড় ফর্মে থাকা রসি ভ্যান ডার ডুসেন ও হেইনরিখ ক্লাসেন আজ দ্রুতই প্যাভিলিয়নে ফেরায় চরম চাপে পড়ে যায় আফ্রিকানরা। ডুনে ২১ এবং ক্লাসেন করেন মাত্র ১২ রান। তবে ডেভিড মিলারকে নিয়ে রানের চাকা সচল রাখেন ম্যাচসেরা ব্যাটার মার্করাম। কিন্তু বাঁ-হাতি মিলারও আস্থার জায়গা নিতে পারেননি। তাকেও ফিরিয়েছেন শাহিন আফ্রিদি। এর আগে মিলার ২৯ রানের ইনিংস খেলেন।
এভাবে সতীর্থদের যাওয়া-আসার মিছিলে একমাত্র ব্যতিক্রম মার্করাম। মাঝে মার্কো জানসেন তাকে ২০ রান করে কিছুটা সঙ্গ দিয়েছিলেন। তবে জয়ের পথটা তৈরি হয় মার্করামের ব্যাটে, যদিও সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়েও তুলে মারতে গিয়ে উসামা মিরের বলে ক্যাচ দিয়ে বসেন তিনি। ৯৩ বলের ইনিংসে প্রোটিয়া ব্যাটার ৭টি চার ও তিন ছয়ে ৯১ রান করেন।
খেলা পুরোপুরি জমে উঠে জেরাল্ড কোয়েটজে আউট হলে। শাহিন আফ্রিদির করা বল তার ব্যাটের কানা ছুঁয়ে রিজওয়ানের হাতে চলে যায়। তখন দক্ষিণ আফ্রিকার রান ২৫০। লুঙ্গি এনগিদি গুরুত্বপূর্ণ ৪ রান করেন কেশব মহারাজের সঙ্গে। তাকে দারুণ এক বলে আউট করেন হারিস রউফ, এনগিদির ক্যাচ রউফ নিজেই ধরেন। এরপর আরও চাপে পড়ে প্রোটিয়ারা। কিন্তু শেষ উইকেটে ঠাণ্ডা মাথায় খেলে দলের জয় নিশ্চিত করেন মহারাজ ও শামসি।
এর আগে চেন্নাইয়ের এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে দলীয় ২০ রানে উদ্বোধনী জুটি ভাঙে পাকিস্তানের। জানসেনের বলে লুঙ্গি এনগিদির হাতে ক্যাচ দিয়ে ব্যাক্তিগত ৯ রানে ফেরেন আব্দুল্লাহ শফিক। স্কোরবোর্ডে আরও ১৮ রান যোগ করতেই আবারও আঘাত প্রোটিয়াদের। এবারও সেই জানসেনে ধরাশায়ী ইমাম-উল হক। ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ পাক এই ওপেনার আবারও হতাশ করলেন।
প্রোটিয়া বোলারদের দাপটের পরও লড়াইয়ের পুঁজি পাকিস্তানের
৩৮ রানে দুই উইকেট পতনের পর হাল ধরেন পাকিস্তানের অভিজ্ঞ জুটি বাবর আজম ও রিজওয়ান। ভালোই এগোচ্ছিল পাকিস্তান। আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছিলেন রিজওয়ান। শেষমেশ কোয়েটজের বাউন্সারে ব্যাট লাগিয়ে ডি ককের হাতে ধরা পড়েন তিনি। সাজঘরে ফেরার আগে ৪ চারের মার ও এক ছক্কায় ২৭ বলে ৩১ রান করেন পাক এই উইকেটকিপার ব্যাটার।
দলীয় ১২৯ রানের মাথায় শামসিকে ছক্কা মারতে গিয়ে সীমানার কাছে ক্লাসেনের হাতে ধরা পড়েন ইফতিখার। কিছুক্ষণ পর বিদায় নেন বাবরও। ৬৫ বলে ৪ট চার ও একটি ছক্কা হাঁকান তিনি। দেড়শোর আগেই ৫ উইকেট নেই পাকিস্তানের। আরেকটা লো স্কোরিং ম্যাচের শঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছিল না। তবে বিবর্ণ বিশ্বকাপ কাটানো শাদাব ও সৌদ শাকিলের ৭১ বলে ৮৪ রানের জুটিতে মান বাঁচে পাকিস্তানের।
সৌদ শাকিল (৫২) ব্যক্তিগত ফিফটি তুলে নিলেও ৪৩ রানে থামেন শাদাব। এই জুটির বিদায়ের পর আর বেশিক্ষণ লড়াই করতে পারেননি টেলএন্ডাররা।