৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাতে বন্ধুর সাথে দেখা করতে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হয় বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের তৎকালীন ফতুল্লা থানার সংগঠক ও তরুণ সাংবাদ কর্মী শাহরিয়াজ মাহমুদ শুভ্র। দুইদিন নিখোঁজ থাকার পর ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ভূঁইগড় এলাকার একটি পরিত্যক্ত ডোবায় তার মৃতদেহ শনাক্ত করে পুলিশ। ঘটনার তিন দিনের মাথায় হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত সন্দেহে ৪ জনকে গ্রেফতার করে প্রশাসন। যারা পরবর্তীতে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়, মাত্র ৬০০ টাকা ও তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের জন্য ছিনতাইকারীরা শাহরিয়াজ শুভ্র’কে বেধড়ক মারধর করে হাতপা বেঁধে ডোবায় ফেলে দেয়। পরবর্তীতে পানিতে ডুবে মৃত্যু হয় শুভ্র’র।
হত্যার ৫ বছরেও এই নির্মম ঘটনার যথাযথ বিচার না হওয়ায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক তরিকুল সুজন ও নির্বাহী সমন্বয়ক অঞ্জন দাস। সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃত্তিতে তারা বলেন, শাহরিয়াজ শুভ্র বর্তমান অনিরাপদ বাংলাদেশের প্রতীক। বর্তমান সরকার যেমন একদিকে মানুষের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। তেমনি অন্যদিকে দেশের বিচারব্যবস্থাকে তারা সম্পূর্ণ অকার্যকর করে ফেলেছে। শাহরিয়াজ শুভ্র হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকা ৪ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেবার পরও এর বিচার ঝুলে আছে! ৪ আসামীর মধ্যে ২ জনের ইতিমধ্যেই জেলের মধ্যে স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। বাকিদেরকে নানান সময়ে জামিন দিয়ে বের করে আনার প্রচেষ্টা চলছে। অথচ অপরাধীরা হাতের কাছে থাকা সত্ত্বেও এখনো মামলার চার্জশিট প্রদান করা হলো না! এটা বোধহয় বাংলাদেশেই সম্ভব। রাষ্ট্র যেমন একদিকে খুনিদের আশ্রয়দাতা, তেমনি অন্যদিকে শুভ্র-ত্বকী-চঞ্চল’সহ হাজারো স্বপ্ন হত্যার মূল হোতা।
বিচারবিভাগের সমালোচনা করে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, আজ বিচারবিভাগ তার স্বাতন্ত্র্যতা হারিয়ে সরকারের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বিচারবিভাগের প্রতি মানুষের ন্যূনতম আস্থা নেই। আজকে খুন থেকে ধর্ষণ যেকোনো ঘটনার বিচারের দাবি সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানাতে হয়। প্রধানমন্ত্রী হয়ে উঠেছেন দেশের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। এটি স্পষ্টত ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রের লক্ষণ। ত্বকী-চঞ্চল-শুভ্র একের পর এক হত্যাকাণ্ড নারায়ণগঞ্জকে লাশের নগরীতে পরিণত করেছে। আজকে কোন হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়না বিধায় অপরাধীরাও অপরাধ করতে ভয় পাচ্ছে না। বাড়ছে অপরাধ প্রবণতা। যার ফলে ১২/১৪ বছরের কিশোররাও মানুষ খুন করতে সামান্য দ্বিধাবোধ করছে না। ঢাকা-নাঃগঞ্জ লিংক রোডটি অন্যতম ব্যস্ত সড়ক হলেও এখানে নেই কোন জোড়দার নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সাথে আছে পর্যাপ্ত আলোর সংকট। ফলে হরহামেশাই এই রুটে ছিনতাই-রাহাজানি-খুনের মতো ঘটনা ঘটছে। অথচ এই দিকে এমপি/মন্ত্রীদের নজর নেই। তারা ব্যস্ত আছেন ‘খেলা হবে’ নিয়ে। আমরা লিংক রোডে পর্যাপ্ত আলো ও নিরাপত্তার দাবি জানাই।
অবিলম্বে শুভ্র-ত্বকী-চঞ্চল’সহ সকল নির্মম হত্যাকাণ্ডের যথাযথ সুরাহা করতে হবে। যাতে করে সমাজের ভেতর আর নতুন করে কোন খুনি-সন্ত্রাসীর জন্ম না হয়। যাতে নতুন করে আর কোন স্বপ্নের যবনিকা না ঘটে। সেইদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সর্বোপরি একটি নিরাপদ ও বাসযোগ্য নারায়ণগঞ্জ গড়ে তোলার লক্ষ্যে সকলকে একীভূত হয়ে কাজ করার আহ্বান জানাই আমরা।