জেলার ৬ উপজেলার বোরো আবাদ প্রায় শেষ পর্যায়ে। দেশব্যাপী লাগাতার শৈত্য প্রবাহ ও ঘন কুয়াশায় বোরো আবাদ বাধাগ্রস্ত ও বিলম্বিত হলেও জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে শরীয়তপুরে এর কোন প্রভাব পড়েনি। ইতিমধ্যে জেলার ৯২.২ শতাংশ বোরো আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। এ বছর জেলায় ২৫ হাজার ৫১০ হেক্টরে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও ইতিমধ্যে ২৩ হাজার ৫৩০ হেক্টরে আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। তবে কৃষি বিভাগ আশা করছেন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে বেশি জমিতে বোরো আবাদ হবে। এ মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও সময়মতো সার-বীজ পাওয়ায় বোরোর ভালো ফলনের আশা করছেন কৃষক ও স্থানীয় কৃষি বিভাগ। জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে এবার জেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ২৫ হাজার ৫১০ হেক্টর। এর মধ্যে শরীয়তপুর সদরে ৫ হাজার ৩২৩ হেক্টর, নড়িয়ায় ৫ হাজার ২২৭ হেক্টর, গোসাইরহাটে ৪ হাজার ৩৮০ হেক্টর, ভেদরগঞ্জে ৩ হাজার ৮২০, ডামুড্যায় ৩ হাজার ৫০০ হেক্টর ও জাজিরা উপজেলায় ১ হাজার ২৮০ হেক্টর। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১ লক্ষ ৭৮ হাজার ২২২ মে.টন ধান ধরা হলেও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ধানের ফলন হবে। আবাদকৃত বোরোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য জাত হলো ব্রি ধান-২৯, ৫৮, ৭৪, ৮১, ৮৯, ৯২, বিনা-১০, ২৫ ও বঙ্গবন্ধু ধান ১০০। এর মধ্যে সবচাইতে বেশি ফলন হয় ব্রি ধান-৭৪ এর হেক্টর প্রতি গড়ে ৭.১৫ থেকে ৭.২০ মে.টন পর্যন্ত। জেলার বোরোর গড় ফলন ৬.৯৫ মে.টন। শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. রবীআহ নুর আহমেদ বাসস’কে বলেন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের কথা মাথায় রেখে জেলার অন্যতম বোরো ধান আবাদে আমরা অত্যন্ত সংবেদনশীল। মাটির উপযোগীতা যাচাই করে কোন জমিতে কোন জাত আবাদে কৃষক অধিক ফলন পাবেন সে বিষয়ে আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। এর সাথে কৃষি বান্ধব সরকারের প্রণোদনা, যান্ত্রিকীকরণ ও কারিগরি সহায়তা সহ উন্নত জাতের ব্যবহারে সবসময় কৃষককে সহায়তা ও উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এ মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষক লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও কৃষক বেশি ফলন পাবেন বলে আমরা আশাবাদি। জেলার বার্ষিক ধানের চাহিদা রয়েছে ২ লক্ষ ৯১ হাজার ৯৪২ মে.টন। বোরোর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১ লক্ষ ৭৮ হাজার ২২২ মে.টনসহ আউশ আমনের উৎপাদন ১ লক্ষ ৩২ হাজার ৩২৪ মে.টন। যা জেলার চাহিদার তুলনায় ১৮ হাজার ৬০৪ মে.টন বেশি। শরীয়তপুর সদর উপজেলার রুদ্রকর ইউনিয়নের দেওভোগ গ্রামের কৃষক আবু আলেম মুন্সী বলেন, আমরা আগে যে পদ্ধতিতে বোরো আবাদ করতাম তাতে খরচ বেশি হলেও ফলন কিছুটা কম পেতাম। কিন্তু গত কয়েক বছর থেকে কৃষি বিভাগের পরামর্শে মাটির উপযোগীতা অনুযায়ী ধানের জাত, লাইনে লাগানো ও জমিতে গাছের ডাল পুতে দেয়ায় গাছের ডালে পাখি বসায় আমাদের কীটনাশক কম লাগছে, জমিতে আগাছাও কম হচ্ছে। ফলে আগের তুলনায় উৎপাদন ব্যয় কমেছে বেড়েছে ফলনও। নড়িয়া উপজেলার নশাসন ইউনিয়নের মালতকান্দি গ্রামের কৃষক রুবেল মালত বলেন, এবার টিভি ও পত্রিকায় শীত-কুয়াশায় বোরোর ক্ষতির খবর দেখায় আমরাও একটু চিন্তিত ছিলাম। কিন্তু আল্লাহর রহমতে বীজতলার কোন ক্ষতি না হওয়ায় আমরা সময়মতো জমিতে ধান লাগাতে পেরেছি। আশা করছি বড় কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ঝড়-বাদলের আগেই ধান গোলায় তুলতে পারব।