টস জিতলেই জিতে যাবে ম্যাচ! বিপিএলের শুরু থেকে এমনটাই হয়ে আসছিল। টস জিতে দলগুলো আগে বোলিং নিচ্ছে। প্রতিপক্ষকে অল্প রানে আটকে পরবর্তীতে সেই রান তাড়া করে জিতে যাচ্ছে ম্যাচ। কুমিল্লা ও বরিশালের ম্যাচে এমন সমীকরণ পাল্টে যাওয়ার সুযোগ এসেছিল। কিন্তু, পেসার খালেদের ‘নিরামিষ’ বোলিংয়ে বিপিএল ভিন্ন কিছু দেখল না। বরিশালকে ৪ উইকেটে হারিয়ে মাত্র ১ বল হাতে রেখে কুমিল্লা জিতে নিয়েছে ম্যাচ। রোমাঞ্চ ছড়ানো ম্যাচে কুমিল্লার জয়ের নায়ক ফোর্ড। শেষদিকে নেমে ৪ বলে ১টি করে চার ও ছক্কায় ১৩ রান করে দলকে জেতান।
বিপিএলে রাতের ম্যাচে রান হচ্ছে নিয়মিত। এই ম্যাচেও তেমন কিছু দেখা গেল। আগে ব্যাটিং করে ফরচুন বরিশাল ৯ উইকেটে ১৬১ রান করে। জবাবে নখ কামড়ানো ম্যাচ উপহার দিয়ে কুমিল্লা শেষ মুহূর্তে ম্যাচ জিতে প্রথম জয়ের স্বাদ পায়।
বরিশালের ব্যাটিং লাইনআপ বিশাল। কিন্তু আজও দলের ত্রাতা মুশফিকুর রহিম। সঙ্গে অবদান রাখেন সৌম্য সরকার। ভালো শুরুর পর তামিম থেমে যান অল্পতে। তাতে জোড়াতালির অবদানে বরিশাল পায় মাঝারি মানের লক্ষ্য।
মুশফিকুর রহিম ৪৪ বলে ৬ চার ও ২ ছক্কায় ৬২ রান করেন। সৌম্যর ব্যাট থেকে ৩১ বলে আসে ৪২ রান। ৪ চার ও ২ ছক্কায় সাজান ইনিংসটি। দুজন চতুর্থ উইকেটে ৪৫ বলে ৬৬ রানের জুটি গড়েন। ইনিংসের শুরুতে তামিম ১৬ বলে ১৯ রান করেন ২ চার ও ১ ছক্কায়। এই তিন ব্যাটসম্যান বাদে বাকি কেউ দুই অঙ্কের ঘরে যেতে পারেনি। মেহেদী হাসান মিরাজ নিজের প্রথম বল সুইপ করতে গিয়ে মিড উইকেটে ক্যাচ দেন। প্রথমবার সুযোগ পাওয়া প্রীতম কুমার ৮ রানে ক্যাচ দেন মিড উইকেটে। এছাড়া, শোয়েব মালিক ৭ ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ইনিংস থেমে যায় ৪ রানে।
কুমিল্লার হয়ে বল হাতে সেরা মোস্তাফিজুর রহমান। ৩২ রানে ৩ উইকেট নেন বাঁহাতি পেসার। বোলিংয়ে এসে প্রথম বলে সৌম্যকে দারুণ এক ইয়র্কারে বোল্ড করেন। এর পর নেন মুশফিকুর রহিম ও আব্বাস আফ্রিদির উইকেট। এছাড়া, ২টি করে উইকেট নেন রোস্টন চেজ ও ফোর্ড।
লক্ষ্য তাড়ায় নেমে কুমিল্লা চতুর্থ ওভারে জোড়া উইকেট হারায়। বরিশালের বাঁহাতি স্পিনার দুনিশ ওয়েলাগে পরপর দুই বলে ফেরান মোহাম্মদ রিজওয়ান (১৮) ও তাওহীদ হৃদয়কে (০)। রিজওয়ান মিড উইকেটে ক্যাচ দেন মাহমুদউল্লাহর হাতে। ইনসাইড আউট শট খেলতে গিয়ে মিড অনে ক্যাচ দেন তাওহীদ। সেখান থেকে প্রাথমিক ধাক্কা সামলে নেন ইমরুল ও অধিনায়ক লিটন। কিন্তু, লিটন হাল ছেড়ে দেন অল্পতেই। পেসার খালেদের বলে আব্বাস আফ্রিদির হাতে যখন ক্যাচ দেন তখন তার রান কেবল ১৩।
সেখান থেকে ইমরুলই প্রতি আক্রমণে গিয়ে বরিশালের বোলারদের বেসামাল করে তোলেন। পেসার খালেদকে যেভাবে মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়েছেন তাতে ছড়িয়েছে মুগ্ধতা। এছাড়া ইনসাইড আউট শটে ওয়েলাগেকেও লং অন দিয়ে পাঠান সীমানায়। এছাড়া উইকেটের চারিপাশেও শটের পসরা সাজিয়ে তুলে নেন টানা দ্বিতীয় ফিফটি। ৩৯ বলে পাওয়া ফিফটিতে মনে হচ্ছিল দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়বেন ইমরুল। কিন্তু, আব্বাস আফ্রিদির দুর্দান্ত এক স্লোয়ারে মিড অফে ক্যাচ দেন ৫২ রানে।
ইমরুল যখন আউট হন তখন কুমিল্লার ২১ বলে প্রয়োজন ছিল ৪৬ রান। জাকির হাসান দুই ছক্কায় সীমকরণ ১৮ বলে ৩৩ এ নিয়ে আসেন। প্রথম ছক্কাটি ডিপ মিড উইকেট দিয়ে। পরেরটি লং অফ দিয়ে। পরের ২ ওভারে কুমিল্লা ২০ রান তুললে শেষ ওভারে তাদের সমীকরণ ১৩ রানে নেমে আসে।
উইকেটে হার্ড হিটার খুশদিল থাকায় কুমিল্লা এগিয়ে ছিল। কিন্তু প্রীতমের হাতে দুইবার জীবন পাওয়া খুশলিদ ব্যাটিং করার সুযোগ পাননি। জাকের আলী বল মিস করলে রানের জন্য দৌড় দেন খুশদিল। কিন্তু, মুশফিক বল লুফে থ্রোতে ভাঙেন উইকেট। নতুন ব্যাটসম্যান ফোর্ড ক্রিজে এসে মিলিয়ে দেন বাকি সমীকরণ। প্রথম বলে নেন ২ রান। পরের বল লং অফ দিয়ে বিশাল ছক্কা। এরপর কভার ড্রাইভে পান চার। পঞ্চম বলে ১ রান নিয়ে ১ বল আগেই দলের জয় নিশ্চিত করেন ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যান ফোর্ড।
অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে তার হাতে উঠেছে ম্যাচ সেরার পুরস্কার। এ জয়ে কুমিল্লা জয়ের খাতা খুলল। বরিশাল টানা দ্বিতীয় পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ পেল।
ঢাকায় প্রথম পর্ব শেষে খুলনা ২ জয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছে। সিলেট ২ ম্যাচে ২ পরাজয় নিয়ে আছে তলানিতে। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ২৬ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে বিপিএল।