শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৭ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

রূপগঞ্জে জলাবদ্ধতায় দুই লক্ষ্যাধিক মানুষের দুর্ভোগ

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর, ২০২৪, ৫.৫৬ এএম
  • ১৯ বার পড়া হয়েছে

আল আমিন: নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে অনেক এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী সেচ প্রকল্পের ভেতরে পানি আটকে এখন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে দুই লক্ষ্যাধিক বাসিন্দা উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে। কয়েক দিনের বৃষ্টিতে অধিকাংশ এলাকায় হাটুপানি জমেছে। আবার কোথাও কোমর সমান পানি।
টানা কয়েক দিনের বর্ষণে রূপগঞ্জের তারাব ও কাঞ্চন পৌরসভা, গোলাকান্দাইল, ভুলতা, মুড়াপাড়ার অধিকাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে মৎস্য খামারের মাছ। ডুবে গেছে বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ ও শ্রেণিকক্ষ।
উপজেলার গোলাকান্দাইল নাগেরবাগ এলাকার বাসিন্দা আকলিমা আক্তার জানান, ঘরের মেঝেতে হাটুপানি। ঘরে প্রায় সময় সাপ ঢুকে পড়ছে। ভয়ে সব সময় আতঙ্কে থাকি। ময়লা ও বিষাক্ত পানির কারণে আমার বড় মেয়ে সুলেখা আক্তারের পায়ে গা হয়ে গেছে। রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে ঢাকায় রেফার্ড করে দেন। এখনো পর্যন্ত কোনো সরকারি বা বেসরকারি অনুদান পাইনি। আমাদের দেখারও কেউ নেই। প্রতিবছর বৃষ্টিপাত হলে এ দুর্ভোগে পড়তে হয়।
ঢাকার উপকণ্ঠের রূপগঞ্জ উপজেলার জলাবদ্ধতার শিকার বাসিন্দারা উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে। আকাশে মেঘ জমলেই নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী সেচ প্রকল্পের ভেতরে বসবাসকারীদের মাঝে আতঙ্ক দেখা দেয়। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে এলাকার নিন্মাঞ্চলে হাঁটুপানি জমেছে। আবার কোথাও কোমর পানি। গোলাকান্দাইল মধ্যপাড়া ও উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বহু কিন্ডারগার্টেন স্কুলের মাঠ ও শ্রেণিকক্ষে পানি প্রবেশ করেছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরাও বিদ্যালয়ে পাঠাতে চান না। ইতিমধ্যে কাঞ্চন পৌরসভার কুশাব এলাকায় এক শিশু পানিতে ডুবে মারা গেছেন। এতে এলাকায় আতঙ্ক আরো বেড়েছে।
উপজেলার মাঝিপাড়া এলাকার বাসিন্দা স্বপন জানান, অতিবর্ষণের কারণে কর্ণগোপ এলাকায় প্রায় ২৫ বিঘা খামারের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। এতে প্রায় দুই কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মাছের খামার পানিতে তলিয়ে গেছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তারাব পৌরসভায় কোটি কোটি টাকা বরাদ্দে পয়োনিষ্কাশন খাল পরিষ্কার করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলছেন, বরাদ্দের নামে কোটি কোটি টাকা লোপাট করেছেন সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর স্ত্রী ও তারাব পৌরসভার মেয়র হাসিনা গাজী। গোলাকান্দাইল, নাগেরবাগ, ৫নং ক্যানেল, বরাব, আড়িয়াব, দিঘীবরাব, যাত্রামুড়া এলাকায় খাল সংস্কার করা হয়েছে লোক দেখানো।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, সবাই ভোটের আগে জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রতিশ্রুতি দেন। নির্বাচিত হলে কেউ আর সেচ প্রকল্পের কথা মনে রাখেন না। যাদের ঘরে পানি ওঠেছে, তাদের অধিকাংশই অন্যত্র আত্মীয় স্বজনদের বাড়ি আশ্রয় নিয়েছেন। আবারো বৃষ্টি হলে দুর্ভোগ আরো বাড়বে।
ভুলতা ইউনিয়নের কৈরাব এলাকার বাসিন্দা সুমন মিয়া বলেন, নব্বই দশকের পর নিয়মবহির্ভূতভাবে অগ্রণী সেচ প্রকল্পের ভেতরে মিল-কারখানা গড়ে উঠলে এই প্রকল্প পরিণত হয় আবাসিক ও শিল্প এলাকায়। সেই থেকে দুর্ভোগ চরমে ওঠে মানুষের। বসতি আর কারখানার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রতিবছর বাড়ে জলাবদ্ধতাও।
রূপগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৪ সালে ৯০ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ে নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী অগ্রণী সেচ প্রকল্প-১ ও পরে ১৯৯৩ সালে ১০১ কোটি টাকা ব্যয়ে শীতলক্ষ্যার পূর্বপাড়ের পাঁচ হাজার হেক্টর জমি ঘিরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হয়। নির্মাণ হওয়ার কয়েক বছর বাদেই এখানে শুরু হয় জলাবদ্ধতা। জনবসতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে দুর্ভোগও।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort