রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২৯ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

রূপগঞ্জের পূর্বাচলে ১ জানুয়ারি শুরু হচ্ছে বাণিজ্যমেলা

  • আপডেট সময় সোমবার, ২২ নভেম্বর, ২০২১, ৪.২০ এএম
  • ২৩৬ বার পড়া হয়েছে

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) হবে ২০২২ সালের বাণিজ্যমেলা। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে মেলা শুরুর অনুমতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এবারের মেলায় চলাচলের সুবিধার্থে কুড়িল ফ্লইওভার থেকে মেলাপ্রাঙ্গণে বিআরসিটিসির বাস চলবে। আর ডিসেম্বরের মধ্যেই পূর্বাচলের রাস্তা সংস্কার করে চলাচলের জন্য উপযোগী করা হবে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে জানা গেছে, দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হওয়ায় আগামী ১ জানুয়ারি রাজধানীর পূর্বাচলে স্থাপিত বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে ২৬তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা আয়োজনের প্রস্তুতি নিতে গত ১৩ সেপ্টেম্বর ইপিবিকে চিঠি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি ১ জানুয়ারি মেলা শুরুর বিষয়ে অনুমতি চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর মেলার বিষয়ে সারাংশ পাঠানো হয়। পরে প্রধানমন্ত্রী ১ জানুয়ারি মেলা আয়োজনের অনুমতি দেন।
এক্সিবিশন সেন্টারটির প্রকল্প পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, আমরা আমাদের কাজ শেষ করেছি। অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেছেন। মেলাপ্রাঙ্গণ প্রস্তুত। ইপিবি মেলার লেআউটসহ অন্যান্য কাজ করবে।

কুড়িল থেকে মেলাকেন্দ্রে চলবে বিআরটিসির বাস

বাণিজ্যমেলাকে কেন্দ্র করে কুড়িল ফ্লাইওভার থেকে পূর্বাচলের মেলাকেন্দ্রে বিআরটিসির বাস চলাচল করবে। মাসব্যাপী এই রুটে বিআরটিসির ৩০টি বাস চলাচলের জন্য চিঠি দিয়েছে ইপিবি। এসব বাসের ন্যূনতম একটা ভাড়া থাকবে। এতে সহজেই কুড়িল ফ্লাইওভারের নিচ থেকে মেলাকেন্দ্রে যেতে পারবেন দর্শনার্থীরা।

ইপিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রোববার (২১ নভেম্বর) বিআরটিসিকে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে আগামী ১ জানুয়ারি থেকে মাসব্যাপী বাণিজ্যমেলায় বিআরটিসির ৩০টি বাস কুড়িল ফ্লাইওভারের নিচ থেকে বাণিজ্যমেলার কেন্দ্র পর্যন্ত চলাচলের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। তবে এসব বাসে ফ্রি সার্ভিস দেওয়া হবে না। ন্যূনতম একটি ভাড়ার মাধ্যমেই এসব বাসে চলাচল করতে হবে।

ডিসেম্বরের মধ্যে সড়ক সংস্কার

বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে যাওয়ার পথে সড়কের দুর্দশা নিরসনে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে পূর্বাচলের ১০ কিলোমিটার সড়কে নির্বিঘ্নে যানবাহন চলাচলের জন্য উপযোগী করে গড়ে তোলা হবে।

সম্প্রতি পূর্বাচলের রাস্তার কাজের দায়িত্বে থাকা প্রকল্প পরিচালক বাণিজ্য সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সভায় রাজউকের চেয়ারম্যান ও ঊর্ধ্বতন ইঞ্জিনিয়ার ও ইপিবির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় জানানো হয়, ডিসেম্বরের মধ্যে পূর্বাচলের ১০ কিলোমিটার রাস্তা চলাচলের জন্য উপযোগী থাকবে। দুই লেন করে দুইপাশে চার লেনে গাড়ি চলবে। কোনো কোনো জায়গায় হয়তো বেশিও থাকবে। এখনই অনেক জায়গায় প্রধান সড়ক দিয়ে চলাচল করা যাচ্ছে। আর প্রধানমন্ত্রী সরাসরি বাণিজ্যমেলা কেন্দ্রে গেলে এই সড়ক সংস্কারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টার কথা বলা হয়েছে।

মেলায় থাকবে প্রায় তিনশ স্টল

এবারের বাণিজ্যমেলায় প্রায় তিনশ স্টল থাকবে। ভেতরে এবং বাইরে মিলে এসব স্টল থাকবে। তবে মেলাকেন্দ্রের ভেতরে থাকা জায়গার মধ্যে অধিকাংশই মানুষের চলাচলের জন্য ফাঁকা রাখা হবে। আর কেন্দ্রের বাইরে ডানপাশে স্টল বসলেও, আরেকদিক সৌন্দের্যের জন্য ফাঁকা রাখা হবে।

জানা গেছে, মেলাকেন্দ্রের ভেতরে সেল স্ক্রিন দিয়ে আন্তর্জাতিক মেলাগুলোর মতো ছোট ছোট স্টল সীমানা দিয়ে দেওয়া হবে। ভেতরে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের মতো করে প্রয়োজন অনুযায়ী ডেকোরেশন করবে। ইপিবির কাছে শতাধিক আবেদন আছে। আর রিজার্ভ মিলে ১২৫টি আবেদন রয়েছে।
ইপিবির কর্মকর্তারা বলেন, এখন পর্যন্ত মেলাকেন্দ্রের লেআউটে কিছুটা কারেকশন করা হয়েছে। তাই ভেতরে-বাইরে মিলে আড়াইশ থেকে তিনশ স্টল থাকবে। কেন্দ্রের ভেতরে সবমিলে ৩০৯টির উপরে স্টল আছে। হলের মধ্যে ৯ স্কয়ার মিটার করে দিলে স্টল অনেক ছোট হয়ে যাচ্ছে তাদের জন্য। আর করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে ভেতরে পর্যাপ্ত জায়গা ফাঁকা রাখা হচ্ছে। ভেতরে চাইলেই চারশ করে মোট আটশ দোকান বানানো যাবে, কিন্তু মানুষের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে সেখানে কর্তৃপক্ষ দুইশ স্টল বানানো হয়েছে। তাই এক স্টল থেকে আরেকটির দূরত্ব এবং মানুষের চলাচলের বিষয়টি মাথায় রাখা হয়েছে। প্রাণ, যমুনা, স্যামসাং, আবুল খায়ের, হোন্ডার মতো প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যে আবেদন করেছে। ভেতরে যে ২৪টি প্রিমিয়াম স্টল আছে তারমধ্যে ২২টিই ইতোমধ্যে বরাদ্দ হয়ে গেছে। তবে কেন্দ্রের বাইরে অবকাঠামোগত ক্ষতি না করে প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে সাজাতে চায় সেভাবেই সাজাতে পারে বলে তাদের জানানো হয়েছে।

মেলায় থাকবে পার্কিং ব্যবস্থা

নতুন মেলাকেন্দ্রে বৃহৎ পরিসরে পার্কিং সুবিধা রয়েছে। তবে মেলার শৃঙ্খলার স্বার্থে গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য কেন্দ্রের পাশেই রাজউকের পানির প্ল্যান্ট ভাড়া নেওয়া হয়েছে। সেখানেই এক হাজার গাড়ি পার্কিং হবে। জানা গেছে, দোতলা পার্কিং বিল্ডিংয়ের মোট পার্কিং স্পেস সাত হাজার ৯১২ বর্গমিটার, যেখানে ৫০০টি গাড়ি রাখা যাবে আর এক্সিবিশন বিল্ডিংয়ের সামনের খোলা জায়গায় আরও এক হাজার গাড়ি পার্কিং করার সুযোগ আছে।

যেসব সুবিধা রয়েছে এক্সিবিশন সেন্টারে

রাজধানীর পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারটি নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে ৭৭৩ কোটি টাকা। যার মধ্যে চীনের অনুদান ৫২০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, বাংলাদেশ সরকারের ২৩১ কোটি টাকা ও ইপিবি নিজস্ব তহবিল থেকে ২১ কোটি ২৭ লাখ টাকা অর্থায়ন করেছে।

এক্সিবিশন সেন্টারে তৈরি করা ফ্লোরের আয়তন ৩৩ হাজার বর্গমিটার, বিল্ডিংয়ের ফ্লোরের আয়তন ২৪ হাজার ৩৭০ বর্গমিটার, এক্সিবিশন হলের আয়তন ১৫ হাজার ৪১৮ বর্গমিটার। এক্সিবিশন হলে ৮০০টি বুথ রয়েছে, প্রতিটি বুথের আয়তন ৯ দশমিক ৬৭ বর্গমিটার। দোতলা পার্কিং বিল্ডিংয়ের মোট পার্কিং স্পেস সাত হাজার ৯১২ বর্গমিটার, যেখানে ৫০০টি গাড়ি রাখা যাবে আর এক্সিবিশন বিল্ডিংয়ের সামনের খোলা জায়গায় আরও এক হাজার গাড়ি পার্কিং করার সুযোগ আছে।
এছাড়াও রয়েছে ৪৭৩ আসনবিশিষ্ট একটি মাল্টি-ফাংশনাল হল, ৫০ আসনবিশিষ্ট একটি কনফারেন্স রুম, ছয়টি মিটিং রুম, ৫০০ আসনবিশিষ্ট ক্যাফেটেরিয়া, শিশুদের খেলার স্পেস, নামাজের কক্ষ, অফিস রুম দুটি, মেডিকেল রুম, ডরমিটরি-গেস্ট রুম, ১৩৯টি টয়লেট, বিল্ট ইন পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেম, নিজস্ব ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, স্টোর রুম, সিসিটিভি কন্ট্রোল রুম, অটোমেটেড সেন্ট্রাল এসি সিস্টেম, ইনবিল্ট ইন্টারনেটসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধা।

এ প্রসঙ্গে ইপিবির সচিব ও মেলার পরিচালক মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী অনুমতি দিয়েছেন যে আগামী ১ জানুয়ারি থেকে মাসব্যাপী বাণিজ্যমেলা হবে। তিনি সামারি অনুমোদন করেছেন। আমাদের টেন্ডার প্রক্রিয়া চলছে। বিশ্বব্যাপী মেলা যে সিস্টেম সেই একই সিস্টেমে এবারের মেলা হবে। যেসব মেলা হলের মধ্যে হয়, সেখানে কখনো সেলার স্টল নিজের মতো করে করা যায় না। ফ্লোর খুঁড়ে তো আর স্টল করা যাবে না। বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে দেখেন একই সিস্টেম। আর যারা বাইরে স্টল করবে তারা তাঁবু দিয়ে করে। আমরা হয়তো তাদের একতলা করার জন্য সুযোগ দেবো। কিছুটা চ্যালেঞ্জ তো থাকবেই। কারণ নতুন জায়গায় নিচে সার্ভিস লাইন আছে। খুঁড়তে গিয়ে যদি সার্ভিস লাইন নস্ট করেন তাহলে পুরো সেন্টার অচল হয়ে যাবে। এগুলো মাথায় রাখতে হবে। যতটুকু না করলেই না ততটুকু আমরা তাদের জন্য করবো।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিআরটিসিকে চিঠি দিয়েছি। শাটল সার্ভিস চালু করার জন্য, কুড়িল ফ্লাইওভারের নিচ থেকে মেলা পর্যন্ত। আজকেই আমি চিঠি স্বাক্ষর করেছি। রাস্তায় কোনো দূরত্ব নেই, এতটুকু আমি এনশিওর করতে পারি যে আমরা রাস্তার যে পিডি আছেন সেনাবাহিনীর, তিনি আমাদের বাণিজ্য সচিবের সঙ্গে মিটিং করেছিলেন। রাজউকের চেয়ারম্যান ও ঊর্ধ্বতন ইঞ্জিনিয়াররা ও আমরা ছিলাম সেখানে, তিনপক্ষের মিটিং হয়েছে। তারা বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে ১০ কিলোমিটার রাস্তা ক্লিয়ার থাকবে। দুই লেন করে দুইপাশে চার লেন ক্লিয়ার থাকবে। কোনো কোনো জায়গায় হয়তো বেশিও থাকবে। এখনই অনেক জায়গায় মেইন সড়ক দিয়ে চলাচল করা যাচ্ছে। যদি প্রধানমন্ত্রী সরাসরি যান তাহলে এই সড়ক দ্রুতই তৈরি হয়ে যাবে। তারাও বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী গেলে সেখানে সর্বাত্মক ব্যবস্থাই থাকবে। আমরা ৩০টি বাস চেয়েছি। আমরা চিঠি পাঠিয়েছি। অনুরোধ জানাবো তাদের ম্যাক্সিমাম বাসই যাতে থাকে। এখানে ন্যূনতম একটা ভাড়া থাকবেই। ফ্রি সার্ভিস দিলে আসে পাশের স্থানীয় লোকজনই বেশি চলাচল করবে। সাধারন মানুষের চলাচল কঠিন হবে।’

১৯৯৫ সাল থেকে ঢাকার শেরেবাংলা নগরে অস্থায়ী জায়গায় ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল। প্রতিবছর জানুয়ারির ১ তারিখ প্রধানমন্ত্রী এ মেলার উদ্বোধন করেন। করোনার কারণে চলতি বছর বাণিজ্যমেলা হয়নি। গত ৭ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির কাছে বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারটি হস্তান্তর করেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। পরে গত ২১ অক্টোবর প্রদর্শনী কেন্দ্রটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort