পারিশ্রমিক না পেলে ম্যাচ খেলব না, অনুশীলন বর্জনের পর এমন হুমকিই দিয়েছিলেন ক্রিকেটাররা। তাই শুক্রবার চট্টগ্রামে একাদশ বিপিএলের প্রথম ম্যাচটা মাঠে গড়াবে কি না, তা নিয়ে ছিল ঘোর সংশয়। তা দূর হলো খেলা শুরুর ঘণ্টা দেড়েক আগে, যখন জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের সামনে এসে পৌঁছাল দুর্বার রাজশাহীর টিম বাস।
একটা বিরতি দিয়ে এবার বিপিএলে ফিরেছে রাজশাহীর ফ্র্যাঞ্চাইজি, দুর্বার রাজশাহী নাম নিয়ে। নামের সঙ্গে অবশ্য মাঠের পারফরম্যান্সে তেমন মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। আগের পাঁচ ম্যাচে তাদের জয় ছিল দুটি। অপরদিকে তিন হারে খেলোয়াড়দের নিবেদনে ঘাটতি ছিল স্পষ্ট। তা নিয়ে অবশ্য তেমন উচ্চবাচ্য ছিল না। ঢাকার প্রথম পর্ব ও সিলেট পর্ব শেষে বিপিএল যখন চট্টগ্রামে তখনই উত্তপ্ত হয়ে পড়ে পরিস্থিতি। জানা যায় প্রথম ধাপে ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিকের ২৫ ভাগ টাকা পরিশোধ করেনি রাজশাহী। চাপে পড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্তৃপক্ষ যে চেক দিয়েছিল সেটাও বাউন্স করে। এরই প্রেক্ষিতে খেলোয়াড়রা অনুশীলন বর্জন করেন এবং ম্যাচ খেলবেন না বলে হুমকি দেন।
উপায় না পেয়ে পারিশ্রমিক পরিশোধ করেছে মালিক পক্ষ, যার প্রেক্ষিতে খেলতে নামেন ক্রিকেটাররা। মাঠে এদিন তারা ছিলেন দুর্বার। তাদের দাপুটে পারফরম্যান্সের সামনে রীতিমতো উড়ে গেছে সিলেট স্ট্রাইকার্স। ব্যাটারদের সম্মিলিত পারফরম্যান্সে ১৮৪ রানের চ্যালেঞ্জিং পুঁজি গড়ে রাজশাহী। এরপর ঝলক দেখান দলটির বোলাররা। তাতে ১৭.৩ ওভারে সিলেট গুটিয়ে যায় ১১৯ রানে। রাজশাহী পায় ৬৫ রানের বড় জয়, এই জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের চতুর্থ স্থানে দলটি।
ম্যাচসেরা হয়েছেন সানজামুল ইসলাম। ২৫ রান খরচায় ৩ উইকেট নিয়েছেন বাঁহাতি স্পিনার। নিজের প্রথম দুই ওভারেই পল স্টারলিং আর রনি তালুকদারকে ফেরান তিনি। দুই ওপেনারকে হারানোর ধাক্কা জাকির হাসান এবং জর্জ মানসির ব্যাটে সামলে নিয়েছিল সিলেট। কিন্তু পরবর্তীতে তাসকিন আহমেদ, মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী যে ধাক্কা দেন, সেটা আর সামলে উঠতে পারেনি তারা। যে কারণে খেলা শেষ হওয়ার বেশ আগেই নিশ্চিত হয়ে যায় রাজশাহীর জয়। ব্যাট হাতে ওই জয়ের ভিত গড়েন অধিনায়ক এনামুল হক বিজয় (৩২) ও রায়ান বার্ল (৪১)।
দারুণ জয়ে এখন স্বস্তির সুবাতাস বইছে রাজশাহী শিবিরে। কিন্তু বিপিএল নিয়ে স্বস্তিতে নেই গভর্নিং কাউন্সিল ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। নতুনরূপে এবারের বিপিএল আয়োজনের আশা ছিল, বার্তা দেওয়া হয়েছিল আসরটিকে বিতর্কমুক্ত রাখার। তা সম্ভব হয়নি। এবার বরং বিতর্ক আরও বেশি। চট্টগ্রাম পর্ব শুরুর আগে মাঠের তুলনায় মাঠের বাইরের কাণ্ডই বেশি আলোচনায়। সেখানে খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক প্রদানে বিলম্ব করে রাজশাহীর ফ্র্যাঞ্চাইজি বড় ভূমিকা রেখেছে। একই অভিযোগ আছে অন্য দলগুলোর বিরুদ্ধেও। এতে স্বাভাবিকভাবেই বিব্রত আয়োজক কর্তৃপক্ষ।
নিজেদের ব্যর্থতা মেনে নিয়েছেন বিসিবি পরিচালক ও বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব নাজমুল আবেদীন ফাহিম, ‘আমরা এসব নিয়ে বিব্রত। আমাদের সবার জন্যই এগুলো শিক্ষা। সামনে অবশ্যই এটা কাজে লাগাব।’