রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে ২ শিশুসহ তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার পৃথক ঘটনায় বাঘাইছড়ির কাচালং নদী থেকে তিনটি লাশ উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এদিকে পরিস্থিতির উন্নতি হয়ে এলেও সম্প্রতি টানা বর্ষণে সদরসহ রাঙামাটি জেলায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অর্ধ লাখ মানুষ।
রাঙামাটি ও বাঘাইছড়ি পৌরসভাসহ ২৯টি ইউনিয়নের প্রায় দুই শতাধিক গ্রামের পাহাড়ধসে ২৮টি আশ্রয়ণের ঘরসহ ১ হাজার ৩০১ পরিবার এবং বন্যায় প্লাবিত হয়ে ১০ হাজার ৬১৭ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব পরিবারের সদস্য সংখ্যা প্রায় অর্ধ লাখ।
এছাড়া পাহাড়ি ঢলে বিস্তীর্ণ নিচু এলাকা তলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৩৬৮ দশমিক ১৫ হেক্টর ফসলি জমি ও রোপা আমন খেত। জেলা প্রশাসন এসব তথ্য জানিয়েছে।
পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের মাচালং এলাকার দীপুপাড়া কাচালং নদীরপাড় থেকে কাদামাখা অবস্থায় অজ্ঞাত এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়।
সাজেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অতুলাল চাকমা বলেন, লাশটি স্থানীয়রা দেখতে পেলে পুলিশে খবর দেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল গিয়ে অপরিচিত এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য খাগড়াছড়ি জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
সাজেক থানার ওসি নুরুল আলম বলেন, ধারণা করা হচ্ছে পানির স্রোতে ভেসে গিয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। লাশের পরিচয় উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
পৃথক ঘটনায় বাঘাইছড়ি থানার ওসি মো. আলমগীর জানান, বৃহস্পতিবার সকালে বাঘাইছড়ি পৌরসভার উগলছড়ি হাজীপাড়া এলাকার কাচালং নদী থেকে এক শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়। তার নাম মো. জুয়েল (৭)। সে বাঘাইছড়ি পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের মাদ্রাসাপাড়ার মো. মহসিনের ছেলে। জুয়েল মঙ্গলবার নৌকা থেকে পড়ে পানিতে তলিয়ে নিখোঁজ হয় বলে তার পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে।
আরেক ঘটনায় একই দিন দুপুরে বাঘাইছড়ি উপজেলার বঙ্গলতলী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের অরুণ বড়ুয়ার ছেলে রাহুল বড়ুয়া (১০) বাড়ির পাশে নদীর ধারে গাছ থেকে পেয়ারা পাড়তে গিয়ে পড়ে গেলে পানিতে তলিয়ে নিখোঁজ হয়। পরে অনেক খোঁজাখুঁজির পর তাকে উদ্ধার করে বাঘাইছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন বলে নিশ্চিত করেন বাঘাইছড়ি থানার ওসি মো. আলমগীর।
এদিকে জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, জেলায় ২০৫ স্থানে পাহাড়ধস হয়েছে। পাহাড় ধসে ক্ষতি হয়েছে বিভিন্ন সড়কের ৬৯ স্থানে। বন্ধ রয়েছে ১২টি সড়ক। ক্ষতি হয়েছে ৩৬টি ব্রিজ ও কালভার্ট। বিদ্যুতের খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২৪টি। পাহাড়ধসে ও বন্যায় ক্ষতি হয়েছে ১৮টি স্থানীয় হাটবাজার। বন্যায় ক্ষতি হয়েছে ৩৫৭ স্থানে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৪৯টি পুকুর। মারা গেছে গবাদিপশু।
জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) ও সহকারী কমিশনার বিজয় কুমার জোয়ার্দার জানান, পাহাড়ধসে ঝুঁকিতে থাকা ও ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের জন্য ১৫৭টি এবং বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ১০৪টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আশ্রয় নিয়েছেন সাড়ে ৫ হাজার মানুষ। দুর্গত লোকজনের সহায়তায় খাবার ও জরুরি ত্রাণ বিতরণ করছে প্রশাসন।