জীবনের শেষ সময়ে স্ত্রী রুপালী বেগম(৫০)কে নিয়ে বসবাস শুরু করে রফিকুল ইসলাম(৬০)। বাড়ির চারপাশটা খুবই নির্জন। নেই শহরের কোলাহল। সুখেই সংসার করছিলেন তিনি। ইচ্ছে ছিলো সংসারের স্থায়ীত্ব থাকবে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। কিন্তু কে জানতো মাদক সেবীদের হাতেই ইতি টানবে সুখের এই সংসারের।
রূপগঞ্জ উপজেলায় ওই এলাকাটি নির্জন হওয়ায় প্রায় সময় বাড়ির চারপাশে মাদকসেবীদের আড্ডা জমতো বেশ। বিভিন্ন সময় তারা বাড়িতে ঢুকে জোর করে গাছের ফল ও খাবার জোর করে নিয়ে নিয়ে খেত। ঝামেলা জড়ানোর ভয়ে অসহায়র মতো চুপ করে সহ্য করতো এই দম্পতি। একদিন মধ্যেরাতে হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ে মাদকসেবনকারীরা, সরল মনে দরজা খুলতেই এলোপাথাড়ি ছুড়িকাঘাত করে বৃদ্ধ রফিক মিয়াকে, রশি দিয়ে বেধে ফেলে তার সহধর্মীনিকেও। উদ্দেশ্য মাদক সেবন করার জন্য ঘরের টাকা পয়সা ও স্বর্ণালংকার লুট করা।
রূপগঞ্জ থানায় মামলা হলেও পরে মামলাটির তদন্তভার চলে আসে ডিবি পুলিশের কাছে। দীর্ঘদিন তদন্ত করে ক্লু-লেস রফিকুল ইসলাম হত্যা মামলার এমই ভয়ঙ্কর তথ্য প্রকাশ করলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা সংস্থা (ডিবি)। জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) তরিকুল ইসলামের সার্বিক সহযোগীতায় ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. হাফিজুর রহমান এই মামলা তদন্ত করে। এর আগে চলতি বছরের ২০জুন রূপগঞ্জ থানায় নিহতের ছেলে বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
রফিক হত্যা মামলার প্রায় চার মাস পর, তথ্য প্রযুক্তি মাধ্যমে ও বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমে মামলার অন্যতম আসামী মেহেদী দেওয়ান(২২)কে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশ। রবিবার (২৩ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১০টায় রূপগঞ্জ উপজেলার ভায়লা বাজার এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত মেহেদী দেওয়ান রূপগঞ্জ উপজেলার পাচাইখা এলাকার মো. সুজন দেওয়ানের ছেলে। তথ্যটি লাইভ নারায়ণগঞ্জকে নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) মো. তরিকুল ইসলাম।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. তরিকুল ইসলাম জানায়, নেশার টাকার জন্যই পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয় রফিকুল ইসলামকে। হত্যাকারীরা জানতো রফিকুল ইসলামের স্ত্রীর শরীরে সবসময় গহনা পরা থাকে। আর নেশার টাকা জোগাড় করতেই মাদকসেবীরা এ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করে। এ সময় হত্যাকারীরা হাতে থাকা স্বর্ণের চুরি, গলার চেইন, হাতের আংটি, কানের দুল, যার আনুমানিক বাজার মূল্য ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। এরপর পালিয়ে যায় তারা। কিন্তু রুপালী বেগম তাদের কাউকেই চিনতে পারেনি।
তিনি আরও জানান, ২৪ অক্টোবর বিজ্ঞ আদালতে গ্রেপ্তারকৃত আসামি মেহেদী দেওয়ান তার অপরাপর সহযোগিদের নাম ঠিকানা প্রকাশ পূর্বক ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত অপরাপর আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য চলছে অভিযান।