যানজট নিরসনে ছয় লেনে উন্নতীকরণ করা হচ্ছে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড। সোয়া আট কিলোমিটার দৈর্ঘ্যে সড়কটির কাজ শুরু হলেও প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বর্জ্য। সড়কের পাশর্^বর্তী ময়লার ভাগার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ। রীতিমত এই ময়লার বাগাড়ের কারণে থমকে যাচ্ছে সড়ক প্রশস্ত করণের কাজ।
নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের তথ্যমতে, সড়কটি প্রায় ১২৯ ফুট প্রশস্থ হবে। সড়কটি ৬ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৪৪৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এ প্রকল্পের কাজে এনডিই-টিবিএল-এইচটিবিএল-জেভি নামক যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে গত ৯ ফেব্রুয়ারি সড়ক ও জনপথ অধিদফতর চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত।
সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সূত্রে জানা যায়, লিংকরোডের নিকটবর্তী সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের গৃহস্থালি বর্জ্য সড়কে অপসারণ করা হয়। সড়কের একাধিক স্থানে রয়েছে বর্জ্য না ফেলার নির্দেশনা সংযুক্ত বিলবোর্ড। নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর বর্জ্য ফেলা বন্ধ করতে বর্জ্য সংগ্রহের ভ্যান আটক করলে ভ্যান চালকেরা তাদের ইউনিয়ন ও সিটির বর্জ্য সংগ্রহকারী বলে পরিচয় দেন। এদিকে সমস্যার সমাধানে উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের সাথে একাধিক সভা হলেও হয়নি সমস্যার সমাধান।
সড়কের দুইপাশে কয়েকবছর যাবৎ একটানা বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। সাইনবোর্ড থেকে চাষাঢ়া পর্যন্ত সড়কের পাশর্^বর্তী অধিকাংশ স্থানে বর্জ্য ফেলা হয় বিধায় বর্জ্য অপসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বর্জ্য অপসারণের কিছু দিনের মধ্যেই পুনরায় ভরাট হচ্ছে।
রোববার (১৯ সেপ্টেম্বর) সরজমিনে দেখা যায়, সড়কের বিভিন্ন অংশে চলছে নির্মাণ কাযক্রম। সড়কের দুইপাশে উচ্ছেদ সহ ড্রেনেজ ব্যবস্থার কাজ চলমান। কিন্তু সাইনবোর্ড থেকে ফতুল্লা স্টেডিয়ামের অবস্থা যেই সেই। সড়কের দুইপাশে বর্জ্য, চারিদিকে দূর্গন্ধ। সড়কটি জেলায় প্রবেশের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। প্রতিদিন শত শত যানবাহন এই সড়কে যাতায়াত করে। সড়কের কাজ শুরু হওয়ায় বেড়েছে যানজট। নির্দিষ্ট মেয়াদে প্রকল্পের কাজ শেষ না হলে ভোগান্তি বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন যাত্রীরা। তবে বর্জ্য ফেলা বন্ধ না হলে সড়কের কাজ নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হবে না বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংকরোডের পাশেই রয়েছে জেলার একাধিক গুরুত্বপূর্ন স্থাপনা। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জেলা ও দায়রা জজ আদালত, সিভিল সার্জন অফিস, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, পিবিআই অফিস, জেলা কারাগার, বিজিবি-৬২, পরিবেশ অধিদফতর, মাদক নিয়ন্ত্রন অধিদফতর, এলজিইইডি অফিস, জেলা পরিষদ, যুব উন্নয়ন অধিদফতর, গণপূর্ত অধিদফতর, পাসপোর্ট অফিস, বিআরটিএ অফিসসহ রয়েছে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করেন। পরিত্যক্ত বর্জ্য ও যানজটে দূর্ভোগে রয়েছেন স্থানীয়রা।
ভুক্তভোগী পথচারী মাহাবুবুর রহমান বলেন, রাস্তার কাজ শুরু হলে যানজট সাধারনত বাড়ে কিন্তু বর্জ্য থাকলে কাজ শেষ হতে দেরি হবে। আর আমাদের ভোগান্তি বাড়বে। ময়লার দূর্গন্ধ সে তো আছেই।
জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের স্থায়ী ডাম্পিং গ্রাউন্ড না থাকায় দৈনিক উৎপাদিত আবর্জনা ২০১৭ সাল থেকে ১৮নং ওয়ার্ডস্থ আলামিন নগরের পতিত জায়গায় ফেলা হয়। এছাড়া ফতুল্লা স্টেডিয়ামের রোজ গার্ডেন এ্যাপারেনস প্রতিষ্ঠানে পিছনের খালি জায়গায় ইউনিয়নের অস্থায়ী ডাম্পিং স্পট করা হয়েছে। অর্থ প্রদানের বিনিময়ে কিছু সংখ্যক বর্জ্য সংগ্রহকারীরা এখানে বর্জ্য অপসারণ করে। তবে এখনো সড়কের পাশ্ববর্তী সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের বর্জ্য সড়কে ফেলা হয় বলে জানান নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপদ বিভাগ।
নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন লিংক রোডের প্রকল্পে বিষয়ে আক্ষেপ করে বলেন, আমরা আর কত বর্জ্য সড়াবো? আমরা তো অস্থির হয়ে গিয়েছি। আমরা বর্জ্য সড়াই, তারা বর্জ্য ফেলে। একাধিকবার বর্জ্য না ফেলার নির্দেশনা দিয়েছি। মন্ত্রণালয়ে সড়কের বর্জ্য সম্পর্কে একাধিকবার কথা হয়েছে, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সভা হয়েছে। কোন সমাধান হয়নি। আমরা বর্জ্য সংগ্রহকারীদের ভ্যান আটক করেছিলাম। তারা জানিয়েছে, তারা সড়ক নিকটবর্তী সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করে।
এ বিষয়ে স্থানীয় সাংসদ শামীম ওসমান বলেছিলেন, বর্জ্য কি আমি ফেলি? বর্জ্য মনে হয় আমি বাড়ি থেকে এনে ফেলি! সিটি করপোরেশনও তাদের বর্জ্য ফেলা সম্পর্কে অস্বীকার করে। তাহলে বর্জ্য গুলো কারা ফেলে, এটাই প্রশ্ন এখন আমার কাছে।
প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন আরো বলেন, আমরা এই বর্জ্যরে উপর সড়ক করব না, করলে সড়ক নষ্ট হয়ে যাবে।