অসুস্থ মাকে নিয়ে ঢাকার হাসপাতালে যাচ্ছিলেন মেয়ে। পথিমধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় লাশ হলেন দুজনে। সোমবার দিবাগত রাত ৪টার দিকে শরীয়তপুরের জাজিরার নাওডোবা গোল চত্বরে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত মা-মেয়ে অ্যাম্বুলেন্সে ছিলেন। তারা হলেন পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার আনারসিয়া গ্রামের লতিফ মল্লিকের স্ত্রী জাহানারা বেগম (৫৫) ও মেয়ে লুৎফুন্নাহার লিমা (৩০)। তাদের সঙ্গে একই দুর্ঘটনায় আরও চার জন নিহত হয়েছেন। তারা হলেন লিমার চাচাতো ভাই ফজলে রাব্বি (২৮), বন্ধু বরিশালের আগৈলঝাড়ার মাসুদ রানা (৩০), অ্যাম্বুলেন্সচালক মাদারীপুরের মোস্তফাপুরের বাসিন্দা জিলানি মৃধা (২৮) ও সহকারী খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার রবিউল ইসলাম (২৬)।
লিমার স্বজনরা জানিয়েছেন, ২০০০ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় থাকেন আনারসিয়া গ্রামের লতিফ মল্লিক। তার মেয়ে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার লুৎফুন্নাহার লিমা ২০১০ সালে বাবার কাছে যান। এরপর থেকে ফ্লোরিডায় একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছিলেন। লিমার মা জাহানারা বরিশালের বিএম কলেজ এলাকায় এক স্বজনের বাড়িতে থাকতেন। এরই মধ্যে কিডনি রোগ ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। খবর পেয়ে গত নভেম্বর মাসে বাংলাদেশে মায়ের কাছে আসেন লিমা। মায়ের চিকিৎসা করিয়ে কিছুটা সুস্থ করে তাকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল তার।
দুই দিন আগে জাহানারা অসুস্থ হলে বরিশালের বেলবিউ ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে সোমবার তাকে ঢাকার বারডেম হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। ওই দিন রাতেই একটি অ্যাম্বুলেন্সে তাকে নিয়ে ঢাকায় রওনা হন লিমা ও তার স্বজনরা।
পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের নাওডোবা সেতু এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পেছন থেকে গ্যাস সিলিন্ডারবোঝাই ট্রাকে ধাক্কা দেয় অ্যাম্বুলেন্সটি। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন অ্যাম্বুলেন্সের ছয় আরোহী। খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান হাইওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। মঙ্গলবার সকালে লাশ শনাক্ত করে নিয়ে যান স্বজনরা।
লিমার বোন শিল্পী আক্তার বলেন, ‘লিমা দীর্ঘদিন ফ্লোরিডায় একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছিল। মায়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে দেশে এসেছিল। মায়ের চিকিৎসা করিয়ে ফ্লোরিডায় নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনায় মা-বোন দুজনকে হারালাম।’
শিল্পী আক্তারের স্বামী কামাল উদ্দিন বলেন, ‘সোমবার রাতে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় শাশুড়িকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। কিন্তু এই যাওয়া যে শেষযাত্রা হবে, আমরা কখনও ভাবিনি।’
হাইওয়ে পুলিশের ফরিদপুর সার্কেলের এএসপি মো. মারুফ হোসেন বলেন, ‘অ্যাম্বুলেন্সচালক দীর্ঘ সময় গাড়ি চালানোর কারণে ক্লান্ত থাকতে পারেন। দুর্ঘটনার সময় অ্যাম্বুলেন্সটি দ্রুত গতিতে যাচ্ছিল। পেছন থেকে গ্যাস সিলিন্ডারবোঝাই ট্রাকে ধাক্কা দিলে দুমড়েমুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই অ্যাম্বুলেন্সের থাকা ছয় জন নিহত হন। দুর্ঘটনার পর ট্রাকচালক পালিয়ে যান। ট্রাক ও অ্যাম্বুলেন্স উদ্ধার করে শিবচর হাইওয়ে থানায় রাখা হয়েছে। দুর্ঘটনার বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি আমরা। তদন্ত শেষে ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।’
এদিকে, শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত ব্যক্তিদের দাফনের জন্য ১০ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের কাছে টাকা হস্তান্তর করেন জাজিরার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান।