যমুনায় হঠাৎ পানি বৃদ্ধির কারণে বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে অনেকেই ভিটেবাড়ি হারিয়ে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নিয়েছেন বাঁধের পাশে।
বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) দুপুরের পর থেকে ভাঙন দেখা দেয়। যা বিকেলে তীব্র আকার ধারণ করে। মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে বলা হয়েছে, ভাঙন ঠেকাতে ইতিমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে জিও ব্যাগ এবং জিও টিউব ফেলা হচ্ছে।
নদীগর্ভে বাড়িঘর হারানো রওশন আরা বেগম বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পরে মেয়ে জামাইয়ের সঙ্গে থাকতাম। কিন্তু নদীগর্ভে বাড়িঘর বিলীন হয়ে যাওয়ার পরে এখন চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছি। পরিবারের সবাই খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছি।
আব্দুল মালেক নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, সব কিছু সাজানো গোছানো ছিল। মুহূর্তের মধ্যে যমুনা আমার সব খেয়ে ফেলেছে। বাড়ির সামনে প্রায় দুই-আড়াই বিঘা সম্পদ ছিল, এখন কিছুই নেই।
সালমা বেগম নামের এক নারী বলেন, বাড়িঘর শুধু দেবে যাচ্ছিল। জিনিসপত্র যে গুছিয়ে বের করব, সেই সময়টুকুও দেয়নি। মুহূর্তের মধ্যেই সবকিছু নদীগর্ভে চলে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. হুমায়ুন কবির বলেন, কামালপুর ইউনিয়নের ইছামারা, টিটুর মোড়, ফকিরপাড়া, খোকার মোড় এলাকার মোট ১২০০ মিটার এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় টুকরো টুকরো ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, বগুড়ার মোট ৪৫ কিলোমিটার নদীর তীর। এর মধ্যে ১৯ কিলোমিটার পর্যন্ত ব্লক দিয়ে কাজ করা আছে। এই ১৯ কিলোমিটারে কোনো ভাঙন নেই। যে জায়গাগুলোতে অরক্ষিত আছে সেখানেই পানি আক্রমণ করছে। বাকিগুলো ব্লক দিয়ে কাজ করার জন্য একটি প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে দেওয়া আছে।
যেসব জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে সেখানে আগে থেকে কোনো প্রতিরোধক ব্যবস্থা নিয়েছিলেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, নদী ভাঙনের তো পূর্বাভাস নেই। কোন জায়গা ভাঙবে সেটা তো ওইভাবে জানা যায় না। তারপরেও আজ প্রায় ১০ কিলোমিটার জায়গা সার্ভে করে দেখেছি। কোথাও কোনো সমস্যা আছে কিনা সেটা দেখছি। মনিটরিং করছি।
প্রকৌশলী মো. হুমায়ুন কবির বলেন, আমাদের পর্যাপ্ত জিও ব্যাগ মজুদ আছে। ভাঙন এলাকায় সেসব ফেলছিও। কিন্তু পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করার পরে হঠাৎ ম্যাসিভ আকার ধারণ করল। বিগত ১০ বছরেও এলাকাবাসী এমন ভাঙন দেখেনি।
ভাঙন রোধে কি ধরণের ব্যবস্থা নিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা ২৫০ কেজি বালু ভর্তি জিও ব্যাগ, ৬ মিটার লম্বা এবং ১.২৫ মিটার চওড়া বালু ভর্তি জিও টিউব ব্যবহার করছি।
নদীর পানি বিপৎসীমার কত সেন্টিমিটার উপরে আছে এবং পানি বৃদ্ধি কতদিন অব্যাহত থাকতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নদীর পানি এখন বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২-৩ দিন পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে।
কামালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাছেদুজ্জামান রাসেল বলেন, মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে শতাধিক পরিবারের বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আরও প্রায় দুইশ পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আশ্রয়হীনদের ইউনিয়ন পরিষদের পাশে দড়িপাড়ায় থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সবুজ কুমার বসাক বলেন, ফায়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আমরা উদ্ধার কাজ শুরু করেছি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাদের সবধরনের সহযোগিতা করা হবে।