সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:২৭ পূর্বাহ্ন

মুসল্লিদের ধ্বনিতে মুখরিত ইজতেমা ময়দান, রোববার আখেরি মোনাজাত

  • আপডেট সময় রবিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪, ৩.৩১ এএম
  • ৫৬ বার পড়া হয়েছে

দেশ-বিদেশের লাখো মুসল্লির ইবাদত-বন্দেগি, জিকির-আসকার, তাসবিহ-তাহলিল আর আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে মুখর টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমা ময়দান। আজ সকাল ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ইজতেমার প্রথম পর্ব। কাকরাইল জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব হাফেজ মাওলানা জোবায়ের আহমেদ মোনাজাত পরিচালনা করবেন। এতে প্রায় ৩০-৪০ লাখ দেশি-বিদেশি মুসল্লি অংশ নেবেন বলে আয়োজকরা ধারণা করছেন। এর আগে হেদায়েতি বয়ান করবেন ভারতের শীর্ষ মুরুব্বি মাওলানা ইব্রাহীম দেওলা।

এদিকে ইজতেমার দ্বিতীয় দিন শনিবার পবিত্র কোরআন-হাদিসের আলোকে গুরুত্বপূর্ণ বয়ান হয়েছে। মুসল্লিরা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় ইমান, আমল ও আখলাককে পরিপূর্ণ শুদ্ধরূপে গড়ে তুলতে শীর্ষস্থানীয় মুরুব্বিদের বয়ান শুনছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরের মধ্যেই পুরো ইজতেমা ময়দান মুসল্লিতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। তারপরও বানের পানির মতো তুরাগ তীরে ছুটছেন মুসল্লিরা। শনিবারও বাস, ট্রাক, পিকআপ, ট্রেন, নৌকা, লঞ্চ ও রিকশা-ভ্যানে মুসল্লিদের আসতে দেখা গেছে। জায়গা না পেয়ে অনেক মুসল্লি ময়দানের চারপাশের খোলা আকাশের নিচে ফুটপাত ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উড়াল সড়কের নিচে অবস্থান নিয়েছেন। ঘন কুয়াশা ও শীত উপেক্ষা করে ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল তারা।

উসমান আলীর নেতৃত্বে তোলা মিয়া, আব্দুর রশিদ, ইউসুব আলী, জালাল উদ্দিন, শামসুদ্দিন, আব্দুল মোতালেবসহ ২১ জনের একটি তাবলিগ জামাত বুধবার ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট থেকে ইজতেমা ময়দানে এসেছেন। তারা ময়দানের উত্তর পাশের টঙ্গী-কামারপাড়া রোডের ফুটপাতে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নিয়েছেন।

টাঙ্গাইল থেকে আমির মোরশিদুজ্জামানের নেতৃত্বে সাদেক আলী, সানোয়ার হোসেন, আলেক চাঁন, হাবিবুল ইসলাম, শহিদ মুন্সীসহ ১৫ সদস্যের একটি জামাত বৃহস্পতিবার রাতে ময়দানে এসেছেন। তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উড়াল সড়কের নিচে অবস্থান নিয়েছেন।

আখেরি মোনাজাতে যেসব রাস্তা বন্ধ থাকবে : আখেরি মোনাজাতকে কেন্দ্র করে শনিবার রাত ১২টার পর থেকে আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত টঙ্গী এলাকায় যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মাহবুব আলম সংবাদ সম্মেলনে জানান, রাত ১২টা থেকে আব্দুল্লাহপুর থেকে গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া বাইপাস, আব্দুল্লাহপুর থেকে কামারপাড়া রোড হয়ে টঙ্গী স্টেশন রোড পর্যন্ত সড়ক, আব্দুল্লাহপুর থেকে আশুলিয়ার বাইপাইল পর্যন্ত এবং টঙ্গী স্টেশন রোড থেকে পূবাইল মীরের বাজার পর্যন্ত সড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকবে। এছাড়া ময়মনসিংহ ও গাজীপুরগামী যানবাহনগুলো গাবতলী দিয়ে কোনাবাড়ি হয়ে এবং ময়মনসিংহ থেকে ঢাকাগামী যানবাহনগুলো ভোগরা বাইপাস দিয়ে ৩শ ফিট রাস্তা ব্যবহার করে চলাচল করবে। এ সময় এসব সড়কে কোনো পণ্যবাহী গাড়ি চলতে দেওয়া হবে না। ইজতেমা ময়দানের মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান জানান, আজ সকাল ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।

দ্বিতীয় দিন বয়ান করলেন যারা : শনিবার বাদ ফজর মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বয়ান করেন ভারতের মাওলানা আব্দুর রহমান। তার বয়ান বাংলায় অনুবাদ করেন বাংলাদেশের মাওলানা আব্দুল মতিন। বাদ জোহর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইসমাঈল গোদরা। তার বয়ান অনুবাদ করে মাওলানা নুরুর রহমান। বাদ আসর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা জুহাইরুল হাসান। তার বয়ান বাংলায় অনুবাদ করে মাওলানা জাকারিয়া। বাদ মাগরিব বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইব্রাহীম দেওলা। মাওলানা আব্দুর রহমান ইমান, আমল, আখলাক, জাহান্নাম, জান্নাত ও দাওয়াতে মেহনতের ওপর গুরুত্বপূর্ণ বয়ান করেন। তিনি বলেন, দুনিয়াতে যা কিছু আছে তাতে কোনো সফলতা নেই, দুনিয়াবি যত আসবাব আছে তা কিছুই না। সব কামিয়াবি বা সফলতা আল্লাহর হাতে। পৃথিবীতে যা আছে সবকিছুই দুর্বল ও ক্ষণস্থায়ী।

ময়দানে যৌতুকবিহীন ৭২ বিয়ে : ইজতেমা ময়দানের মূল বয়ানমঞ্চে শনিবার বাদ আসর যৌতুকবিহীন ৭২টি বিয়ে হয়েছে। কনের সম্মতিতে বর ও কনেপক্ষের লোকজনের উপস্থিতিতে এসব বিয়ে হয়েছে। বিয়েতে মোহরানা ধার্য করা হয় ‘মোহরে ফাতেমি’র নিয়মানুযায়ী। এতে মোহরানার পরিমাণ দেড়শ তোলা রূপা বা তার সমমূল্য অর্থ। বিয়ের পর নবদম্পত্তির সুখ-সমৃদ্ধি কামনা করে আল্লাহর দরবারে দোয়া করা হয়। এ সময় মঞ্চের আশপাশের মুসল্লিদের মাঝে খুরমা খেজুর ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইজতেমা ময়দানের মিডিয়া সমন্বয়কারী হাবিবুল্লাহ রায়হান।

ইজতেমায় আরও তিন মুসল্লির মৃত্যু : ইজতেমার প্রথম পর্বে আরও তিন মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার মধ্যরাত থেকে শনিবার বিকাল পর্যন্ত তারা মারা যান। মৃতরা হলেন- শেরপুর জেলা সদরের জুগনিবাগ গ্রামের মৃত সমশের আলীর ছেলে নওশের আলী (৬৫), ভোলা জেলার পরাগগঞ্জ থানার সামানদার গ্রামের বেলায়েত হোসেনের ছেলে আব্দুল কাদের (৫৫) ও নেত্রকোনা জেলা সদরের কালিয়াঝুড়ি এলাকার হোসেন আহম্মদের ছেলে স্বাধীন (৪৫)। এ নিয়ে ইজতেমায় মোট ৯ মুসল্লির মৃত্যু হলো।

সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা : টঙ্গী শহিদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল সূত্র জানায়, শনিবার বেলা ৩টা পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার ৭২৯ জন মুসল্লি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে ১৯ জনকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে এবং ৭ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পে মুসল্লিদের ভিড় : ইজতেমা ময়দানের বিদেশি নিবাসের উত্তর পাশে অলিম্পিয়া স্কুলের মাঠে স্থাপিত হামদর্দ ল্যাবরেটরিজ, ইবনে সিনা, র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র‌্যাবের ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পগুলোতে অসুস্থ মুসল্লিদের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। পেটের পীড়া, সর্দি-কাশি, জ্বর, মাথাব্যথা, উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন রোগ নিয়ে তারা বিনামূল্যে ওষুধ সংগ্রহের জন্য দাঁড়িয়েছেন।

২০ হকার আটক : ইজতেমা ময়দানের আশপাশের এলাকা থেকে ২০ জন হকারকে আটক করেছে পূর্ব থানা পুলিশ। শনিবার সকালে স্টেশন রোড, মিলগেইট, টঙ্গী-কামারপাড়া রোডে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। এরা হলেন- জাহিদ হাসান, ইয়াছিন হোসেন, রেজাউল করিম, সাজ্জাদ, বাবুল, বাবু, আব্দুল আওয়াল, আব্দুর রশিদ, জাকির হোসেন, আশরাফ আলী, বেলায়েত হোসেন, খাইরুল ইসলাম, শামসুল হক, শাহজাহান, রুবেল, আবু হানিফ। টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি মো. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, আটকদের গাজীপুর আদালতে পাঠানো হয়েছে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort