পড়া না পারার কারণে কওমি মাদ্রাসার ১১ বছরের এক শিশু শিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারপিট করেছেন শিক্ষক। গত রোববার শিশুটিকে পেটানো হলেও গত মঙ্গলবার বিষয়টি তার অভিভাবকেরা জানতে পারেন। এ নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় উঠলে বুধবার ওই শিক্ষককে বরখাস্ত করার ঘোষণা দিয়ে দায়সারে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।
ঘটনাটি নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলে মাদানী নগর মাদ্রাসায় ঘটেছে।
মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের আবাসিক ছাত্র সে। তার বাবা একটি তৈরী পোশাক কারখানার কর্মকর্তা। আর অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের নাম মো. সাইফুল ইসলাম।
শিশুটির বাবা বলেন, ‘শিক্ষক সাইফুল ইসলাম আমার ছেলেকে পড়া দিয়েছিল। গত ১৬ অক্টোবর আমার ছেলে ঠান্ডা ও জ্বরে আক্রান্ত ছিল তাই পড়তে পারেনি। এ কারণে এভাবে মেরেছে। এতে আমার ছেলে অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। আমরা বিষয়টি জানতাম না। কেউ আমাদের জানায়নি। গত ১৮ অক্টোবর আমার স্ত্রী মাদ্রাসায় ছেলের খোঁজ নিতে গিয়ে দেখে স্বাভাবিক ভাবে চলাচল করতে পারছে না। পরে জিজ্ঞাসা করলে পুরো ঘটনা বলেন। আমার স্ত্রী ছেলের কাপড় সরিয়ে নির্যাতনের নির্মমতা দেখতে পেয়ে সেখানেই জ্ঞান হারান। পরে ছেলেকে নিয়ে কাঁচপুরের বাসায় এসেও কয়েকবার জ্ঞান হারান।’
নির্যাতনের শিকার শিশুটি কথা বলতে গিয়ে জড়িয়ে যাচ্ছিলেন। চোখে মুখে এখনও ভয় স্পষ্ট। নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে বার বার থেমে যাচ্ছিলেন।
তারপরেও শিশুটি বলেন, ‘আমাকে মারা হয়েছে। মাঝে মাঝেই তারা এভাবে মারে। আমার মতো আরও অনেকে আগেও মেরেছ। তারা বলতে নিষেধ করেছে।’
নির্যাতনের শিকার ওই শিক্ষার্থীর বাবা বুধবার বিকালে মাদ্রাসাটিতে যান। খবর পেয়ে সংবাদ সংগ্রহের জন্য ছুটে যান বেশ কয়েক জন সাংবাদিক। নির্যাতনের ওই ঘটনায় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ শিশুটির বিষয়ে তেমন কোন প্রদক্ষেপ না নিলেও পুরোটা সময় সাংবাদিকদের ম্যানেজ করতে তৎপর ছিল।
নির্যাতনের এই ঘটনা নিয়ে জানতে চাইলে দায়সারা বক্তব্য দিয়ে মাদানী নগর মাদরাসার হেফজ বিভাহের ভারপ্রাপ্ত প্রধান আবুল ফাত্তাহ বলেন, ঘটনাটি তাদের অজানা ছিল। মঙ্গলবারই প্রথম তারা ঘটনাটি জানতে পারেন। পরে বুধবার অভিযুক্ত শিক্ষক সাইফুল ইসলামকে বরখাস্ত করে মাদরাসা থেকে বের করে দেওয়া হয় বলে তিনি জানান।
তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীর পরিবার যদি কোন আইনী পদক্ষেপ নেন তাহলে এতে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ সহায়তা করবেন।’