রুদ্রবার্তা২৪.নেট: নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার পশ্চিম তল্লা এলাকার বাইতুস সালাত জামে মসজিদে ভয়াবহ গ্যাস বিস্ফোরণে ৩৪ জনের প্রাণহানির ঘটনায় মামলা করেছিল পুলিশ। মামলার তদন্ত শেষে অভিযোগপত্রও আদালতে দাখিল করা হয়েছে। তবে ঘটনার এক বছরেও শুরু হয়নি বিচারকাজ। এদিকে স্বজনহারা পরিবারগুলোতে এখনও শোকের পরিবেশ বিরাজ করছে। তদন্তকারী সংস্থা সিআইডির তদন্তে তিতাস, ডিপিডিসি ও মসজিদ কমিটির লোকজনের দায়িত্বে গাফিলতির বিষয়টি সামনে আসলেও সুষ্ঠু বিচার পাবেন কিনা তা নিয়ে সন্দিহান নিহতদের স্বজনরা।
গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর ছিল শুক্রবার। দিন পেরিয়ে রাত পৌনে নয়টার দিকে মসজিদে এশারের ফরজ নামাজ শেষে অতিরিক্ত নামাজ আদায় করছিলেন মুসুল্লিরা। এমন সময় ঘটে ভয়াবহ বিস্ফোরণ। ভয়াবহ এই বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, তার শিশু সন্তানসহ ৩৪ জন। আহত হন আরও কয়েকজন। এই ঘটনায় জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস, তিতাস, ডিপিডিসসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থা কয়েকটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত প্রতিবেদনে বিস্ফোরণের কারণ হিসেবে মসজিদের অবকাঠামো নির্মাণে ত্রæটি, অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ, তিতাসের গ্যাস লাইনে লিকেজের বিষয়টি উঠে আসে। মসজিদের অভ্যন্তরে জমে থাকা গ্যাস ও বিদ্যুতের শর্টসার্কিট থেকে সৃষ্ট স্ফুলিঙ্গ থেকেই এই ধরনের ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এই ঘটনায় দায়ের করা পুলিশের মামলায় মসজিদ কমিটির সভাপতি, তিতাস ও ডিপিডিসির সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকজন গ্রেফতার হন। ঘটনার পরপরই তিতাসের ৮ কর্মকর্তা ও কর্মচারী সাময়িক বরখাস্ত হলেও পরবর্তীতে তাদের চাকুরিতে বহাল করা হয়।
গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর এই মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) আদালতে দাখিল করে তদন্তকারী সংস্থা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। অভিযোগপত্রে মসজিদ কমিটির সভাপতি সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল গফুরকে প্রধান করে ২৯ জনকে আসামি করা হয়। তবে সরকারি কর্মকর্তাদের আসামি করার েেত্র সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমতি না পাওয়ায় এই মামলায় গ্রেফতার তিতাসের ৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অভিযোগপত্রে আসামির তালিকায় সংযুক্ত করা হয়নি।
সিআইডি নারায়ণগঞ্জের তৎকালীন পুলিশ সুপার নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেছিলেন, অভিযোগপত্রে মসজিদ কমিটির সভাপতিসহ ২৬ জন, ডিপিডিসির একজন আউসোর্সিং মিটার রিডার ও দুই জন স্থানীয় বিদ্যুৎ মিস্ত্রিকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া তিতাস গ্যাস কোম্পানির ৮ জনকেও অভিযুক্তের তালিকায় রাখা হয়েছে। তবে তা অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়নি। তাদের নাম সংযুক্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপরে কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কর্তৃপরে অনুমোদন পাওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে। তবে গত ৮ মাসেও সেই সম্পূরক অভিযোগপত্র আর দাখিল করা হয়নি। ফলে শুরু হয়নি বিচারকাজ।
বিস্ফোরণের কারণ হিসেবে সিআইডি অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছিল, মসজিদ কমিটির সঠিকভাবে মসজিদ পরিচালনায় অবহেলা, অব্যবস্থাপনা, উদাসীনতা, সঠিকভাবে রনাবেন না করা, কারিগরি দিক বিবেচনা না করে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ ঝুঁকিপূর্ণভাবে লাগানো, গ্যাসের উপস্থিতি পেয়েও মুসল্লীদের জীবনের নিরাপত্তার কথা না ভেবে তাৎনিক ব্যবস্থা না নেয়া। এছাড়া ডিপিডিসির মিটার রিডিং কালেক্টর ও ইলেক্ট্রিশিয়ানদের মসজিদে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া এবং ঝুঁকিপূর্ণভাবে মসজিদের অভ্যন্তরে বিদ্যুতের যন্ত্রপাতি স্থাপন করার কথাও উল্লেখ করেছে সিআইডি। তিতাস গ্যাস কোম্পানির লোকজনের দায়িত্বে অবহেলার কথাও উল্লেখ ছিল অভিযোগপত্রে। গ্যাস লাইনের সঠিকভাবে তদারকি ও পাইপের লিকেজ মেরামত না করা এবং গ্যাস লাইন ঝুঁকিপূর্ণভাবে স্থাপন ও স্থানান্তর করার কারণে এই ভয়াবহ অগ্নিকান্ড সংঘটিত হয়েছে। তদন্তে এসবের স্যাপ্রমাণ পেয়েছে বলে উল্লেখ করে সিআইডি।
মসজিদ খোলার অনুমতি
বিস্ফোরণের পর থেকে মসজিদটিকে নামাজ আদায়ের জন্য অনুপযুক্ত হিসেবে ঘোষণা করে সিলগালা করা হয়। চলতি বছরের গত ২০ আগস্ট মসজিদটি খুলে দেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন করে স্থানীয় এলাকাবাসী। তারা মসজিদটি দ্রæত খুলে দেওয়ার দাবি তোলেন। প্রায় এক বছরের মাথায় গত ২৯ আগস্ট মসজিদ নামাজের জন্য খোলার অনুমতি দেয় জেলা প্রশাসন। তবে মসজিদে একাধিক দরজা রাখার ব্যবস্থা, আপাতত এসি ব্যবহার না করা, বিদ্যুতের প্যানেল বোর্ড মসজিদ ভবনের বাইরে অথবা বারান্দায় বসানো, প্রতি ৩ মাস পর পর অনুমোদিত প্রকৌশলী, এবিসি লাইসেন্সপ্রাপ্ত টেকনিশিয়ান দ্বারা পরীা করে রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করা ও স্থানীয় বিদ্যুৎ বিভাগ কর্তৃক মসজিদের বিদ্যুৎ সংক্রান্ত সকল কার্যক্রমের সঠিকতা নিশ্চিত করাসহ ছয়টি শর্ত পূরণ সাপেে মসজিদ খোলার অনুমতি দেয় প্রশাসন। তবে মসজিদের সংস্কারকাজ সম্পন্ন না হওয়ায় এখন পর্যন্ত নামাজের আয়োজন করা যায়নি।
মসজিদে ভয়াবহ গ্যাস বিস্ফোরণ ও হতাহতের ঘটনার এক বছর পূর্তিতে শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জোহর নামাজ শেষে পশ্চিম তল্লা এলাকায় মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে। মসজিদ কমিটি ও স্থানীয় লোকজন এই আয়োজন করেছে।