নিজেস্ব প্রতিবেদক: ক্ষমতার লোভ তার কখনোই নেই! নিজে থেকে নির্বাচন করতে চান না। জনগনের চাপে নির্বাচন করেন। মানুষের সেবা করার জন্য। তার কাছে দল মত নেই। সব সমান। নিজের নামে কোন ব্যাংক একাউন্টও নেই! নেই সোনা গয়না! মেয়র হিসেবে সরকার থেকে যা বেতন পান সেই টাকা দান করে দেন বিভিন্ন ধর্মীয় ও উন্নয়ণমূলক কাজে। বিভিন্ন সভা সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই এসব দাবি করে আসছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভী। এসব কথা শুনে অনেকেই ভাবতে পারেন, এমন একজন মহিয়সী রাজনৈতিক নেত্রী দেশের কোথাও হারিকেন দিয়েও খুঁজে পাওয়া যাবেনা। যিনি জীবন যৌবন সব উৎসর্গ করে দিয়েছেন নগরবাসীর সেবা আর উন্নয়ণে। সূদূর নিউজিল্যান্ড থেকে ছুটে এসে ১৮ বছর ধরে নগরবাসীর সেবায় বিলিয়ে দিয়েছেন নিজেকে। মানুষের সেবা করতে করতে স্বপ্নের বিদেশের নাগরিকত্বও ত্যাগ করেছেন বলে শোনা যায়। এতোদিন এসব বিশ^াস করেই নগরবাসীর অকুন্ঠ সমর্থন আর ভালোবাসায় এগিয়ে চলছিলেন সিটি মেয়র আইভী। কিন্তু হঠাৎ করেই ব্যাপক আলোচনায় চলে আসে মেয়র আইভীর পরিবারের নবনির্মিত বিলাস বহুল বাড়ী। অনেকে এর নাম দিয়েছে ‘হোয়াইট হাউজ’। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, নারায়ণগঞ্জে যে কটি বিলাসবহুল বাড়ী রয়েছে তারমধ্যে মেয়রের ‘হোয়াইট হাউজ’ এখন ফাষ্ট। মেয়র বলে কথা। এমন বাড়ী না হলে কি চলে। তবে নগরবাসীর মাঝে প্রশ্ন উঠেছে যার ব্যাংক একাউন্ট নেই, তার পরিবারের এমন বিলাসবহগুল বাড়ী করার টাকার উৎস কি? আর যেসব কথা তিনি প্রকাশ্যে বলেছেন, তার কিছুই নেই। সেগুলো কি রাজনৈতিক বুলি মাত্র?
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে মেয়র পদে লড়েন আইভী। ওই সময়ে তিনি মোট আয় দেখিয়েছিলেন ১৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে ২৬ হাজার ১৭৫ টাকা কর দিয়েছেন। নিজের সম্পত্তি হিসেবে তিনি পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ১৪ শতাংশ কৃষিজমির কথা উল্লেখ করেছেন। ওই সময়ে হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেছেন, বাবার বাড়িতে তিনি বসবাস করেন এবং তার খরচ তার স্বামী বহন করেন। তার দুই ছেলের লেখাপড়ার খরচও স্বামী দেন। তার কোনও বাড়ি বা ফ্ল্যাট নেই। কোনও ব্যবসাও নেই। ব্যাংকে শেয়ার বা সঞ্চয়পত্র নেই। অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে ব্যাংকে ১০ লাখ টাকা জমা রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। নির্বাচনের খরচ হিসেবে তিনি ওই ১০ লাখ টাকা দেখিয়েছেন। মেয়র হিসেবে তিনি এ টাকা সম্মানী হিসেবে পেয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন।
এদিকে সর্বশেষ ২০১৬ সালে এসে তার সম্পত্তি বেড়েছে দ্বিগুন। নির্বাচন উপলক্ষে দেওয়া হলফনামায় আইভী উল্লেখ করেছেন, মেয়র হিসেবে তিনি বছরে বেতন পান ১১ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। চিকিৎসাশাস্ত্রে পড়াশোনা করা আইভী তার শিক্ষাগত যোগ্যতার ঘরে লিখেছেন ডক্টর অব মেডিসিন (এমডি)। আইভীর কোনও ব্যক্তিগত গাড়ি নেই। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ টাকা ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা অর্থের পরিমাণ ১৫ লাখ ২১ হাজার ৪৭১ টাকা। স্বর্ণ ও অন্য অলংকার ২ লাখ ৬০ হাজার টাকার। ইলেট্রনিক সামগ্রী ২ লাখ টাকার। আসবাবপত্র ১ লাখ ৯৩ হাজার টাকার। স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে যৌথ মালিকানার ১১২ শতাংশ অকৃষি জমির ৮ ভাগের ১ ভাগের মালিক। আইভী পরিবারকে ১৭ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন। আইভীর মোট সম্পদের পরিমাণ দেখিয়েছেন ৪২ লাখ টাকা।
২০১৬ সালের নির্বাচনের ৪ বছর পর হঠাৎ করেই আলোচনায় আসে মেয়র আইভীর পরিবারের বিলাসবহুল বাড়ী ‘চুনকা কুটির’। যা ‘হোয়াইট হাউজ’ নামে সমধিক পরিচিত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই বিলাসবহুল বাড়ীর ছবি ভাইরাল হয়। অনেকেই মন্তব্য করেন, আইভী প্রায়ই বলেন, তার ক্ষমতার লোভ নেই, টাকার লোভ নেই। ব্যাংকে কোন একাউন্ট নেই। স্বর্ণ নেই। তাহলে ৪ বছরে কি তিনি ‘আলাদিনের চেরাগ’ পেয়েছেন।
সম্প্রতি এক ব্যক্তি তার ফেইজবুক একাউন্টে জলাবদ্ধতায় দাঁড়ানো এক ব্যক্তির ছবি পোষ্ট করেন। ওই পোস্টে লিখেছেন, ‘নারায়ণগঞ্জের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী যে প্রাসাদে বাস করেন সেই রকম প্রাসাদ দেশের প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, বিরোধী দলের নেত্রী এদের এ রকম প্রাসাদ নেই বাংলাদেশে। মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর প্রাসাদের নাকের ডগায় ডিএন রোড। এই ডিএন রোডে বসবাস করেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের ২৬ বছরের সাধারণ সম্পাদক দায়িত্ব পালনকারী অ্যাডভোকেট খোকন সাহা। অ্যাডভোকেট খোকন সাহা নারায়ণগঞ্জ জেলা জজ কোর্টের একজন ঝানু উকিল। সামান্য বৃষ্টি হলেই এ এলাকা ডুবে যায়। নিচু ঘর-বাড়িগুলি ডুবে যায়। ডুবে যায় অ্যাড. খোকন সাহার টিনের বাড়ি।’