নারায়ণগঞ্জের আলোচিত-সমালোচিত সন্ত্রাসী ও বিএনপি নেতা জাকির খান বিদেশী পিস্তলসহ গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) ভোরে রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তারের পর এ তথ্য নিশ্চিত করেছে র্যাব-১১-এর অধিনায়ক তানভীর মাহমুদ পাশা।
তানভীর মাহমুদ পাশা জানান, তিনি জানান, জাকিরের নামে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে পলাতক ছিলেন। সম্প্রতি দেশে ফিরে আত্মগোপন করেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। কোন এলাকা থেকে জাকিরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা সংবাদ সম্মেলনে জানানো হবে বলে জানান তিনি।
জাকির খান ইন্টারপোলের রেড নোটিশপ্রাপ্ত বলে কিছু সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তবে ইন্টারপোলের সাইটে রেড নোটিশের তালিকায় যে ৬২ জন বাংলাদেশি আছেন, তাদের মধ্যে নেই জাকির।
এ বিষয়ে র্যাব কর্মকর্তা তানভীর জানান, তারাও সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকে জাকির খান ইন্টারপোলের রেড নোটিশে আছেন বলে শুনেছেন। এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রকৃত তথ্য পাওয়া যাবে।
সূত্রমতে, ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর জাকির খানের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে প্রভাবশালী নাসিম ওসমানের বিরোধ বাধে। পরে জাকির খান বিএনপি নেতা কামালউদ্দিন মৃধার নেতৃত্বে ১৯৯৪ সালে বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৯৫ সালে দেওভোগ এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী দয়াল মাসুদকে শহরের সোনার বাংলা মার্কেটের পেছনে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে শহরে পরিচিত পান জাকির।
১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকারের শেষ দিকে শহরের খাজা সুপার মার্কেটে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় হওয়া মামলায় ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড পেয়ে কারাগারে যান জাকির খান, কিন্তু রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমায় তিনি মুক্ত হন। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মতিন চৌধুরীর নাতি হিসেবে শহরে পরিচিত হয়ে ওঠেন জাকির।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার ৭ মাসের মাথায় কাশীপুর বাংলাবাজার এলাকায় এক ঠিকাদারের কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগে করা মামলায় দ্বিতীয় দফায় জাকির খানের ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয়। আওয়ামী লীগের আমলে প্রায় ৪ বছর কারাগারে ছিলেন জাকির।
১৯৯৯ সালে স্বল্প সময়ের জন্য কারামুক্ত হয়ে জাকির খান জেলা ছাত্রদলের সভাপতির পদ পেয়ে যান। আওয়ামী লীগের শাসনামলের শেষ দিকে ২০০০ সালে শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জ থেকে টানবাজার ও নিমতলী যৌনপল্লি উচ্ছেদ করলে জাকিরের পরিবারের আর্থিক মেরুদণ্ড ভেঙে যায়। ২০০১ সালে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিশাল গাড়িবহর নিয়ে অস্ত্রের মহড়া করে আবার কারাবন্দি হন জাকির। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পরও প্রায় ৫ মাস তিনি কারাবন্দি ছিলেন। ২০০৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকারের ছোট ভাই তৎকালীন বিএকেএমইএর সহসভাপতি সাব্বির আলম খন্দকার খুন হন। ওই মামলার প্রধান আসামি ছিলেন জাকির খান। মামলার পর থেকে বিদেশে পলাতক ছিলেন তিনি।