ভারতে নিখোঁজ ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ-সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের সন্ধান মেলেনি ৪ দিনেও। তার অবস্থান শনাক্তে ভারতের পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
সংসদ-সদস্যের সর্বশেষ অবস্থান ও পরিবারের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করছে তারা।
অন্যদিকে কলকাতার বারইনগর থানায় করা জিডির সূত্র ধরে সে দেশের পুলিশ তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে। তবে চার দিনেও তাকে উদ্ধারে কোনো আশার খবর না পেয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা। তারা নানাভাবে আনারের সন্ধান পেতে চেষ্টা চালাচ্ছেন।
জানা গেছে, চিকিৎসা ও এক বন্ধুর মেয়ের বিয়েতে অংশ নেওয়ার কথা বলে গত ১২ মে ভারত যান সংসদ-সদস্য আনার। সেখানে তিনি পশ্চিমবঙ্গের বিধাননগর এলাকায় বন্ধু শ্রী গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। পরের দিন ডাক্তার দেখানোর কথা বলে ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। সেদিন সন্ধ্যায় বন্ধু গোপালকে ম্যাসেজ করে বিশেষ কাজে দিল্লি যাচ্ছেন বলে জানান।
এরপর ১৫ মে সকালে দিল্লি পৌঁছে গেছেন জানিয়ে আরেকটি মেসেজ করেন। একই মেসেজ পরিবারের সদস্য ও ব্যক্তিগত সহকারীকে (পিএ) পাঠান। ১৬ মে সকালে পিএকে ফোনও করে। কিন্তু পিএ ফোন রিসিভ করতে পারেননি। এরপর থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তার আর সাড়া পাওয়া যায়নি।
ঢাকায় গোয়েন্দা পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্ট জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, তাকে খুঁজে পেতে ভারতের তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। তার অবস্থান শনাক্তে আমরা তার সর্বশেষ অবস্থানসহ মুঠোফোনের অনন্য তথ্য বিশ্লেষণ করছি।
এছাড়া তার পরিবারে সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে ও রাজনৈতিক সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে নিখোঁজের সম্ভ্যাব্য কারণ খোঁজার চেষ্টা করছি।
এদিকে, ভারত থেকে এমপির ভাতিজা সাইমন সাংবাদিকদের বলেন, চাচার সন্ধানে শনিবার ভারতে এসেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। কলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের সহায়তায় তার অবস্থান জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এদিকে ভারত যেতে ভিসার আবেদন করেছেন সংসদ-সদস্য আনারের কন্যা মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন ও ব্যক্তিগত সহকারী আব্দুর রউফ। সোমবার এমপির ব্যক্তিগত সহকারী আব্দুর রউফ এ তথ্য জানান।
তিনি যুগান্তরকে বলেন, চরম দুর্দিনে তিনি ভারতে অবস্থান করতেন। গোপাল দাদারা তাকে আশ্রয় দিয়েছিল। ২০ থেকে ২৫ বছরের সম্পর্ক তাদের। ভারত থেকেও তারা বাংলাদেশে এলে তার বাড়িতেই আসেন। তিনিও ভারতে গেলে ওখানেই বেশিরভাগ সময় থাকেন। তাদের সঙ্গে সংসদ-সদস্যের পারিবারিক সম্পর্ক। তিনি সেখানে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন। তাকে ফিরে পাওয়ার সব চেষ্টা করছি আমরা।
সংসদ-সদস্য আনারের সেজো ভাই ইমান আলী যুগান্তরকে বলেন, আমার ভাইটা সুস্থভাবে ফিরে আসবে সেই অপেক্ষায় আছি। ভারত যাওয়ার আগে সে বলেছিল, চারদিন থাকব। এরপর এসে ঢাকায় চলে আসব। ডাক্তার দেখাব আর এক বন্ধুর মেয়ের বিয়ে সেখানে যাব। কিন্তু তার নিখোঁজের খবরের এতদিন পার হলেও আমরা তাকে ফিরে পাওয়ার কোনো আশার আলো দেখছি না।
এদিকে ভারতে করা জিডিতে সংসদ-সদস্যের বন্ধু বলেছেন, আনার ১২ মে আমার বাড়িতে আসার পরের দিন দুপুর ১.৪১ মিনিটে ডাক্তার দেখানোর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে যান। যাবার সময় বলে যান, আমি দুপুরে খাব না। সন্ধ্যাবেলা ফিরে আসব এবং যাবার সময় নিজে গাড়ি ডেকে বিধান পার্ক কলকাতা পুলিশ স্কুলের সামনে থেকে গাড়িতে উঠে চলে যান। তারপর উনি সন্ধ্যে বেলা না ফিরে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করে জানায়, আমি বিশেষ কাজে দিল্লিতে চলে যাচ্ছি এবং পৌঁছে ফোন করব। তোমাদের ফোন করার দরকার নেই।
তিনি ১৫ মে সকাল ১১.২১ মিনিটে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করে জানান, আমি দিল্লি পৌঁছালাম, আমার সঙ্গে ভিআইপিরা আছে। ফোন করার দরকার নেই। এই একই মেসেজ নিজের বাড়িতে এবং পিএ (এমপির ব্যক্তিগত সহকারীকে) ফরোয়ার্ড করেন। এরপর থেকে তার আর কোনো হদিস মিলছে না।