নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের তাজপুর এলাকায় স্ত্রী ও সন্তানের কথা গোপন রেখে এক জর্ডান প্রবাসী নারীকে প্রতারণার মাধ্যমে বিয়ে করার পরে সেই ঘটনা ধামাচাপা দিতে এবার দ্বিতীয় স্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রথম স্ত্রীকে দিয়ে মামলা দায়ের করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে প্রতারক স্বর্ণকার অজিত চন্দ্র পালের বিরুদ্ধে।
দ্বিতীয় স্ত্রী প্রবাসী অঞ্জলী রানী ও তার স্বজনদেরকে কিশোর গ্যাং আখ্যা দিয়ে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছে প্রতারক স্বর্ণকার অজিত চন্দ্র পালের প্রথম স্ত্রী মালতি রানী পাল। এমনকি দায়েরকৃত মামলায় প্রতারক স্বর্ণকার অজিত চন্দ্র পাল অঞ্জলী রানীকে বিয়েই করেনি বলে দাবি করেছে মালতি রানী পাল। অথচ দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে বৈবাহিক সমস্ত কাগজপত্রসহ বিয়ের সময়কার তোলা ছবিও সংরক্ষিত রয়েছে।
জানা গেছে, চলতি বছরের ২৮ মার্চ নারায়ণগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে বাদি হয়ে একটি পিটিশন মামলা (নং ১৭১/২৪) দায়ের করেন প্রবাসী অঞ্জলী রানী। এতে বিবাদী করা হয় বন্দর থানাধীন বারপাড়া তাজপুর এলাকার বিষ্ণুপদ পাল ও অর্পনা রানী পালের পুত্র স্বর্ণকার অজিত চন্দ্র পাল, অজিত চন্দ্র পালের প্রথম স্ত্রী মালতী পাল ও পুত্র অংকন পাল।
মামলায় অঞ্জলী রানী উল্লেখ করেন বিবাদীগণ হারমাইদ, উশৃঙ্খল, যৌতুক লোভী, নারী নির্যাতনকারী ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাহীন। স্বর্ণকার অজিত চন্দ্র পাল নিজের বিয়ের কথা গোপন করে প্রবাসী অঞ্জলী রানীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন করে। পরবর্তীতে বাদীনি কর্মের তাগিদে বিদেশে অবস্থান করেন। বাদীনি বিদেশে থাকাবস্থায় অজিত চন্দ্র পাল বাদীনির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতো।
পরবর্তীতে বাদীনি বিগত ২০২৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি বিদেশ থেকে বাংলাদেশে আসলে স্বর্ণকার অজিত চন্দ্র পাল এয়ার পোর্টে যাইয়া অঞ্জলী রানীরকে নিয়ে আসে। পরবর্তীতে আরও কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর অজিত চন্দ্র পাল অঞ্জলী রানীরকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয়। বাদীনি অঞ্জলী রানীর ১টি পুত্র সন্তান রয়েছে।
উক্ত সন্তান সহ তাকে বিয়ে করার কোন আপত্তি নাই বললে অঞ্জলী রানী অজিত চন্দ্র পালের কথায় বিশ্বায় করে বিগত ২০২৩ সালের ৫ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ নোটারী পাবলিক কার্যালয়ে এসে উভয় পক্ষের সম্মতিতে এবং স্বাক্ষীদের সম্মুখে হলফনামার মাধ্যমে বিয়ে হয় এবং গঙ্গাপুর কালী মন্দিরের পুরোহিতের মাধ্যমে বিবাহ কার্য্য সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে বিয়ের পর অজিত চন্দ্র পাল লাঙ্গলবন্দ এলাকায় বাসা ভাড়া করে সংসার করতে থাকে।
সংসার করতে থাকাবস্থায় অজিত চন্দ্র পাল তার স্বর্ণের দোকানে ব্যবসার করার জন্য অঞ্জলী রানীর নিকট বিদেশ থেকে আনা ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং ৫ ভরি ওজনের স্বর্ণ দেওয়ার জন্য বলে।
অঞ্জলী রানী সংসারের সুখের কথা চিন্তা করিয়া ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং ৫ ভরি ওজনের স্বর্ণ স্বামী অজিতকে দিয়ে দেন। পরবর্তীতে কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর অজিত চন্দ্র অঞ্জলী রানীর নিকট থেকে আরও টাকা চাইলে সে বলে তার কাছে কোন টাকা নাই।
পরবর্তীতে অঞ্জলী রানী জানতে পারে যে, অজিত চন্দ্র পাল বিবাহিত এবং তাহার স্ত্রী ও ছেলে সন্তান রহিয়াছে। পরবর্তীতে ২০২৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি রাতে স্বর্ণকার অজিত চন্দ্র পাল অঞ্জলী রানীর কাছে আরো ৫ লাখ টাকা অঞ্জলী রানীর পিত্রালয় হইতে যৌতুক নিয়ে দেওয়ার জন্য বলিলে সে কোন টাকা দিতে পারবে না বললে অজিতসহ এজাহারভুক্ত অন্য আসামিরা এলোপাথারী ভাবে মারধর করতে থাকে।
শ্বাসরোধে হত্যা করার চেষ্টা করে। এসময় যৌতুক বাবদ টাকা না দিলে অঞ্জলীকে নিয়ে সংসার করবে না বলে হুমকী দিয়ে চলে যায় অজিত চন্দ্র পাল। এরপর অঞ্জলী বন্দর বাঘবাড়ি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।
গত ২০ এপ্রিল বন্দর থানায় একটি জিডি (নং ৮৪৮) দায়ের করেন অঞ্জলী রানী। এতে তিনি উল্লেখ করেন, মামলা দায়ের করার কারণে বিবাদী অজিত চন্দ্র পাল তার বোনের বাড়িতে গিয়ে মামলা তুলে নিতে হুমকী ধমকী দিচ্ছে। মামলা তুলে না নিলে প্রাণনাশের হুমকীও দেয়।
এদিকে গত ২৫ এপ্রিল বন্দর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আবু বকর সিদ্দিক নারায়ণগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলার প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই প্রতিবেদন তিনি স্বর্ণকার অজিত চন্দ্র পালের বিরুদ্ধে বাদিনী অঞ্জলী রানীর কাছ থেকে নগদ ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা ও ৫ ভরি স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নেয়া এবং দাবিকৃত ৫ লাখ টাকা যৌতুক না দেয়ায় প্রবাসী অঞ্জলী রানীকে নির্যাতনের সত্যতা পেয়েছেন বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন।
গত ১৫ মে বন্দর থানায় আরো একটি জিডি (নং ৬৬০) দায়ের করেন অঞ্জলী রানী। এতে তিনি উল্লেখ করেন, মামলা দায়ের করার কারণে অজিত চন্দ্র পালের পুত্র অংকন পাল বিবাদী অঞ্জলী রানীকে অপহরণ ও গুমের হুমকী দেয়। মামলা তুলে না নিলে বিবাদী প্রাণনাশের হুমকীও দেয়।
এদিকে সর্বশেষ গত ২৪ মে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে কিছু লোকদের সঙ্গে নিয়ে অঞ্জলী রানীর বোনের বাড়িতে যায় স্বর্ণকার অজিত ও তার পুত্র অংকন। মামলা তুলে না নিলে প্রবাসী অঞ্জলী রানীকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দিবে বলেও হুমকী দেয়া হয়।
এদিকে ওই ঘটনার পরে গত ৩০ মে প্রতারক স্বর্ণকার অজিত চন্দ্র পালের দ্বিতীয় স্ত্রী মালতি রানী পাল বাদি হয়ে নারায়ণগঞ্জ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। যাতে বিবাদী করা হয়েছে অজিত চন্দ্র পালের দ্বিতীয় স্ত্রী অঞ্জলী রানী (৩৩), অঞ্জলীর আত্মীয় স্বপন রাজবংশী (৫০), স্বপনের পুত্র সনজিৎ রাজবংশী, সৌরভ রাজবংশীকে।
মামলায় আসামিদের সন্ত্রাসী, দাঙ্গাবাজ, কিশোরগ্যাং হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এছাড়া ওই মামলায় অজিত চন্দ্র পালকে অঞ্জলী রানী বিয়ে করার চেষ্টা করছে । অথচ বিগত ২০২৩ সালের ৫ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ নোটারী পাবলিক কার্যালয়ে এসে অজিত চন্দ্র পাল ও অঞ্জলী রানী উভয় পক্ষের সম্মতিতে এবং স্বাক্ষীদের সম্মুখে হলফনামার মাধ্যমে বিয়ে হয় এবং গঙ্গাপুর কালী মন্দিরের পুরোহিতের মাধ্যমে বিবাহ কার্য্য সম্পন্ন করেন।
পরবর্তীতে বিয়ের পরী অজিত চন্দ্র পাল অঞ্জলী রানীকে নিয়ে লাঙ্গলবন্দ এলাকায় বাসা ভাড়া করে সংসার করিতে থাকে। এছাড়া মামলায় বাদি মালতী রানী পালকে মারধর, শ্লীলতাহানি ও তলপেটে লাথি মারার মতো মিথ্যা অভিযোগও করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী প্রবাসী অঞ্জলী রানী।
এ বিষয়ে প্রবাসী অঞ্জলী রানী বলেন, বিদেশ থেকে ফিরে সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে সুখের আশায় অজিতকে বিয়ে করেছিলাম। কিন্তু সে প্রতারণার মাধ্যমে আমার কাছ থেকে স্বর্ণের দোকানে বিনিয়োগের কথা বলে নেয়া টাকা ও স্বর্ণালংকার ফেরত চাইলে অজিত, তার ১ম স্ত্রী ও সন্তান মিলে আমাকে মারধর করেছে। আমার কষ্টে উপার্জিত সকল অর্থ সম্পদ হাতিয়ে নিয়ে আমাকে নি:স্ব করে দিয়েছে।
এখন উল্টো তার প্রথম স্ত্রীকে দিয়ে মিথ্যা মামলা করিয়ে হয়রানি করছে। অজিতের ফুফাতো ভাই সঞ্জয়, পাশের দোকানদার রনি রাজবংশী ও অজিতের বন্ধু হাশেম আমাকে বিভিন্ন মাধ্যমে মামলা তুলে নিতে হুমকী ধমকী দিচ্ছে। আমি এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারসহ উর্ধ্বতনদের কাছে সুবিচার চাই। আমি প্রতারক অজিত চন্দ্র পাল ও তার পরিবারের বিচার চাই। আমি আমার কষ্টে উপার্জিত সকল অর্থ সম্পদ ফেরত চাই।
এসব বিষয়ে জানতে স্বর্ণকার অজিত চন্দ্র পালের মুঠোফোনে কল করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।