বন্দরের উত্তরাঞ্চলের মূর্তিমান আতঙ্ক মনিরুজ্জামান মনু (৪২) কে প্রকাশ্যে গুলি ও নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যাকান্ডের ঘটনার ৬ দিন পর মামলার অন্যতম আসামি নুরুল (২৫) কে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১১।
গ্রেপ্তারকৃত নুরুলকে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) দুপুরে আদালতে প্রেরণ করেছে পুলিশ। এরআগে বুধবার (১২ জুন) রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নরসিংদী জেলার ঘোড়াশাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত নুরুল বন্দর থানার মুরাদপুর এলাকার আব্দুল মালেক মিয়ার ছেলে।
জানাগেছে, গত শুক্রবার (৭ জুন) বেলা সাড়ে ১১ টায় বন্দর থানার নাসিক ২৭ নং ওয়ার্ড মুরাদপুর এলাকায় প্রকাশ্যে নৃংশস হত্যাকান্ডের ঘটনাটি ঘটে।
এ ব্যাপারে শনিবার (৮ জুন) সকালে নিহত মনুর স্ত্রী সাবিনা বেগম বাদী হয়ে ১৫ জনের নাম উল্লেখ্য করে বন্দর থানায় এ হত্যা মামলা দায়ের করেন। গ্রেপ্তারকৃত আসামি নুরুল হত্যা মামলার ১২ নং আসামী।
জানা গেছে, দেড় যুগে পূর্বে নিহত মনু’র বড় ভাই আবুল পুলিশের ক্রসফায়ারে নিহত, বাবুল আক্তার ও ছোট ভাই নূরুজ্জামান নুরা, বড় দুই বোন নিলুফা ও রেহেনা এবং মা ফুলমতি, পিতা কামালউদ্দিন প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীদের হাতে নির্মমভাবে খুন হয়েছেন।
মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা কামতাল তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর সাব্বির রহমান বলেন, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এক সপ্তাহ আগে গত শুক্রবার বেলা ১১ দিকে মনিরুজ্জামান মনু সোনারগাঁও কুতুবপুর মামীর জানাজা শেষে মদনপুর মুরাদপুর নিজ বাড়িতে অবস্থান করছিল।
এ সময় একই এলাকার আসামিরা মনুকে ঘর থেকে বাহির করে প্রথমে মাথায় গুলি করে উঠানে ফেলে দিয়ে লোহা দিয়ে পিটিয়ে নৃশংস ভাবে হত্যা করে।
এ ঘটনা নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনায় মামলা হওয়ার পর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার রাতে নরসিংদী ঘোড়াশাল এলাকায় আসামি নুরুলের অবস্থান করছে নিশ্চিত হয়ে অভিযান চালিয়ে মামলার ১২ নং আসামি নুরুল (২৫)কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে আসামি নুরুলকে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়। মামলার অন্যান্য আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যহত রয়েছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত দেড় যুগ ধরে ধারাবাহিক ভাবে নিহত মনুর বড় ভাই বাবুল আক্তার ,ছোট ভাই নূরুজ্জামান নুরা ও বড় দুই বোন নিলুফা, রেহেনাসহ চার ভাইবোন প্রতিপক্ষ শীর্ষ সন্ত্রাসী সুরুত আলী বাহিনীর হাতে খুন হয়েছেন।
এক সময়ের বন্দর থানার তালিকাভূক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী কামরুজ্জামান কামু দীর্ঘদিন জেল খেটে জামিনে বের হওয়ার পর তার স্বাভাবিক মৃত্যু হলেও হত্যাসহ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে একাধিক মামলার আসামি মনুর বড় ভাই আবুল পুলিশের ক্রসফায়ারে নিহত হন।
এক দেড় বছরের ব্যবধানে তিন ভাই ও দুই বোন হত্যাকান্ডের শিকার হওয়ার পর থেকে মনু এলাকা ছেড়ে কাপাসিয়া বিয়ে করে শ্বশুর বাড়িতে বসবাস করতেন। সম্প্রতি স্থানীয় গার্মেন্টের ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ ও আবারে মনিরুজ্জামান মনু এলাকায় একক আদিপত্য বিস্তার লাভের চেষ্টা করলে প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসী গ্রুপের প্রধান মনির, টিটু ও মিঠুর সঙ্গে দ্বন্দ বাধে।
গত বৃহস্পতিবার পাশ্ববর্তী সোনারগাঁও উপজেলার কাঁচপুর ইউপির কুতুবপুর এলাকায় মনু তার মামীর জানাজায় অংশ নেয়। শুক্রবার সকালে মনু মুরাদপুর নিজ বাড়িতে আসেন।
এমন খবর পেয়ে প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীরা গুলি ছুড়তে ছুড়তে বাড়িতে ঢুকে । পরে স্ত্রী-ছেলে-মেয়ে ও দুই ভাগনির সামনে থেকে মনুকে ঘরের গেইটের তালা ভেঙ্গে টেনে হেঁচড়ে বের করে প্রথমে মাথায় গুলি করে উঠানে ফেলে দেয়।
পরে মোফাজ্জল নামে এক ভাড়টিয়া সন্ত্রাসী মাথায় বসে থাকে অন্যান্যরা পিটিয়ে নৃংশস ভাবে হত্যা করে লাশ ফেলে রেখে যায়। নৃশংস ওই হত্যাকান্ডের প্রত্যক্ষদর্শী নিহত মনুর ৮ বছরের শিশু কন্যা ১৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ধারণ করে। পরে ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
এর আগে নিহত মনুর মা ফুলমতি বেগম ও পিতা কামালউদ্দিন খুন হয়েছিলেন প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসী বাহিনীর হাতে। নিহত মনুর ৫ ভাইয়ের মধ্যে কামু, নুরা, আবুল ও বাবুল চার ভাই ও দুই বোন একের পর হত্যাকান্ডের শিকার হলেও পরিবারের শেষ প্রদীপ মনিরুজ্জামান মনু অবশেষে প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হয়েছেন। ক্রসফায়ারে নিহত আবুল মিয়ার দুই মেয়ে এবং নিহত মনুর এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।