স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, বঙ্গবন্ধু কখনো বিশ্বাস করেননি তাকে বাঙালিরা হত্যা করতে পারে। এখনো বিদেশে গেলেও আমাদের শুনতে হয়, যে তোমারা সেই জাতি, যারা তোমাদের জাতির পিতাকে হত্যা করেছো।
বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) দুপুরে রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটরিয়ামে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর সাথে মনে পড়ে বঙ্গবন্ধু মাতার কথা। তিনি বিভিন্নভাবে বঙ্গবন্ধুকে সাহায্য করতেন। অনেক ইতিহাস বঙ্গমাতাকে নিয়ে। যা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বললেও শেষ হবে না।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আগস্ট মাস, শোকের মাস। আমার পরিচিত একজন বললেন রাস্তায় এত আর্মি কেন? কিন্তু বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি, কিছু সময় পরে শুনলাম মেজর ডালিম বলছে সেই ভয়ানক কথা। এর কিছুক্ষণ পরে দেখলাম আমার বাসার পিছনে রক্ষীবাহিনীর সদর দপ্তরের সামনে দুইটি ট্যাঙ্ক দাঁড়িয়ে রয়েছে। তখনও আসল ঘটনা বুঝতে পারিনি। যখন এই নৃশংস ঘটনা শুনলাম তখন মনে হলো আমরা মুক্তিযোদ্ধারা কি বেঁচে আছি?
আসাদুজ্জামান খান বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার সাথে কারা জড়িত সেটা আমাদের ভালো করে জানতে হবে। বঙ্গবন্ধু হত্যায় কুশীলবদের চিহ্নিত করতে হবে। কারা এই ঘটনা নেপথ্যে থেকে সহযোগিতা করেছেন। কারা এর উপকারভোগী সেটা আমাদের জানতে হবে। বঙ্গবন্ধুর হত্যার আগে ছোট ছোট অনেক ইঙ্গিত পেয়েছি। কিন্তু তখন আমরা বুঝিনি। সবগুলো যদি যোগ করি তাহলে ভয়ানক একটা সর্বনাশ আসছিল সেটা আমরা বুঝতে পারিনি।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কোনদিন বিশ্বাস করতেন না, যে বাঙালিরা তাকে হত্যা করতে পারে। তাই হয়েছিল। তাও দেখতে হয়েছিল। একটু হলেও প্রশান্তি হয়েছে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা যেদিন ফিরেছিলেন। তার ফিরে আসায় আমরা ঘুরে দাঁড়ানোর আশা করেছিলাম। সেটাই হয়েছে। আমরা হৃদয়ে ধারণ করতাম বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার হবে। আমরা সেটা দেখে যেতে পেরেছি। এখনো যারা পলাতক আছে তাদের চিহ্নিত করেছি। আশা করি ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করবো।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে বেঁচেছিলেন বলেই আমরা বাংলাদেশকে হৃদয়ে ধারণ করতে পারি। প্রধানমন্ত্রী দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গেলে মানুষ তাঁকে দেখতে আসেন। বলেন শেখের বেটি এসেছেন।
তিনি বলেন, ২১ আগস্ট আবারও হত্যার প্রচেষ্টা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে ২১ বার হত্যার চেষ্টা করেছে। আমরা যা দেখেছি ২১ আগস্ট এর হামলায় বোমার পর বোমা ফুটিয়েও তারা যা চেয়েছিল সেটি পারেনি। আমাদের নেতা-কর্মীরা মানবঢাল করে সেটি ঠেকিয়ে দিয়েছে। তারপর মনে হয় আমাদের কপালের কালো দাগ মুছতে পারিনি।
মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সদস্য শেখ কবির হোসেন বলেন, রাজাকাররা নয় বরং বাঙালিদের সহযোগিতায় সাম্রাজ্যবাদ বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে৷ বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হলো কেন, কারণটা কী? খালি কী রাজাকাররা হত্যা করছে? আমি বিশ্বাস করি না। আপনারা হয়তো করতে পারেন। আমাদের বড় বড় লেখকরা বা বড় বড় পণ্ডিতরা মনে করতে পারে। আমি বিশ্বাস করি, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে অন্য কারণে। সাম্রাজ্যবাদ তাকে হত্যা করেছে বাঙালিদের সাপোর্ট নিয়ে।
শেখ কবির বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন বিশ্ব আজ দুই ভাগে বিভক্ত। এক ভাগের শোষিত, নির্যাতিত নিষ্পেষিত অবহেলিত মুক্তিকামী। আরেক দিকে শ্বাসিত, সাম্রাজ্যবাদ। আমি শোষিতদের পক্ষে। এই যে কথাটা বলেন একটা হুমকি দিছিলেন তিনি, তারপর বাংলাদেশ যে স্বাধীন হলো তখন সাম্রাজ্যবাদ দেখলো গেরিলা ট্রেনিং, কোনো ধরনের ট্রেনিং না দিয়ে ভালোবাসা দিয়ে একটা দেশকে স্বাধীন করলো মানুষের ভালোবাসা দিয়ে। আমরা যুদ্ধ করেছি। ভারতের সহযোগিতা আমরা পেয়েছি। বঙ্গবন্ধু হয়তো তাদেরকে বলেছিলেন সহযোগিতা করতে। ভারতের সাহায্য এবং আমাদের মনোবল দিয়েই আমরা যুদ্ধ করেছি।
শেখ কবির বলেন, মানুষকে বঙ্গবন্ধু ভালোবাসতেন। তখন সাম্রাজ্যবাদ দেখলো যে ভালোবাসা দিয়ে যদি একটা দেশকে স্বাধীন করতে পারে তাহলে সে বিশ্বকে যেকোনো সময় সাম্রাজ্যবাদকে নাড়া দিতে পারে বিধায় তারা হিসাব করে দেখলো একে হত্যা করা দরকার। এতেই সাম্রাজ্যবাদ রাজাকারদের সাথে হাত মিলালো।
আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, বঙ্গবন্ধু ভালোবাসা দিয়ে মানুষকে স্বাধীনতার যুদ্ধে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। তিনি ভালোবাসা দিয়েই দেশকে স্বাধীন করেছিলেন। যেভাবে ব্রিটিশদের কাছ থেকে একটি কথিত স্বাধীনতা পেয়েছি। কিন্তু এরপর একটি দল বলা শুরু করলো মুসলিমদের ভাষা বাংলা হতে পারে না। পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকরা বলা শুরু করলো উর্দু ভাষায় লিখতে হবে। পাকিস্তান আমলে জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় কারাগারে কাটিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু দেশের মানুষ সারাজীবন ভালোবেসে গেছেন। তিনি মনে করতেন মানুষকে বিকশিত করার জন্য একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের দরকার। তাই তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনের সংগ্রাম করেছেন। এমন কি বঙ্গবন্ধুর সন্তানরা তাকে চিনতে পারতেন না। কারণ দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে কারাগারে ছিলেন।
আইজিপি আরও বলেন, আমরা স্মার্ট পুলিশ গড়ে তুলতে চাই। প্রধানমন্ত্রী আমাদের লজিস্টিকসহ সবকিছু দিয়েছেন। ইতোমধ্যে আমরা সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ নির্মূল করতে কাজ করছি। এ দেশ থেকে জঙ্গিবাদ দমন ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বিনিয়োগবান্ধব সৃষ্টি করেছি। ফলে মানুষের আয় বেড়েছে। দেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বাজেট বেড়েছে ১২ গুণ। প্রতিটি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আবারও বাংলাদেশ পেছনের দিকে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। যেকোনো অপচেষ্টাকে রুখে দিতে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটনোর চেষ্টা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. মনিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক, র্যাব মহাপরিচালক এম খুরশীদ আলম।