দীর্ঘ ৩০ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। মামলা জটিলতার কারনে তিন দশক পর ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষনায় ফতুল্লা ইউনিয়ন বাসীর মাঝে স্থানীয় নির্বাচনের গুরুত্ব অনেকটাই বেশী।
সর্বক্ষেত্রে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করলেও অনেকটাই একপক্ষীয়। তফসিল ঘোষনার পরপর প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে ১৫/২০ জন করে মেম্বার প্রার্থী হিসেবে সামাজিক যেগাযোগ মাধ্যমে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
অপর দিকে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছাড়া অন্যদের ভোটে তেমন আগ্রহ নেই। নৌকা প্রতীক পেতে বর্তমান চেয়ারম্যানসহ ফতুল্লা ইউনিয়নে সরকারদলীয় শীর্ষ স্থানীয় পাঁচ নেতার নাম শোনা যাচ্ছে।
সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন- বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান স্বপন, জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফতুল্লা থানার যুবলীগের সভাপতি মীর সোহেল আলী, ফতুল্লা থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফাইজুল ইসলাম, ফতুল্লা থানা আওামীলীগের যুগ্ম-সম্পাদক ও থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ফরিদ আহম্মেদ লিটন, ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সদস্য ও ছাত্রলীগ সভাপতি হাজী আবু শরিফুল হক।
নৌকার প্রতীক পেতে এই পাঁচ শীর্ষ নেতার মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে। সম্প্রতি বিএনপি এই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেওয়ায় শাসক দলের মনোনয়নকেই ভোটে জেতার নিশ্চয়তা মনে করা হচ্ছে। তাই নির্বাচনের মাঠে ভোটের চেয়ে বেশি লড়াই নৌকা পেতে।
এদিকে একাধিক সূত্রে জানা যায়, তৃনমুল আওয়ামীলীগের চাওয়া ও সাধারণ ভোটারদের প্রত্যাশা হিসেবে এবারের নির্বাচনে জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফতুল্লা থানার যুবলীগের সভাপতি মীর সোহেল আলী, ফতুল্লা থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফাইজুল ইসলামের মধ্যে যে কোন একজন আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পাবেন।
তফসিল ঘোষনার বেশ কিছুদিন পূর্ব থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের অনুসারীরা নিজ নিজ নেতার যোগ্য প্রার্থী হিসেবে নানা পোস্ট দিয়েছেন। আর তফসিল ঘোষনার সাথে সাথেই মেম্বার প্রার্থী হিসেবে বিভিন্ন পেশার ব্যক্তিরা আগ্রহ প্রকাশ করে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দিচ্ছেন।
তথ্যা মতে, সবশেষ ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন হয়েছিলো ১৯৯২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারী। সেই নির্বাচনের পর থেকে ফতুল্লা ইউনিয়ন (ইউপি) পরিষদের নির্বাচন আর হয়নি। যে কারণে স্থানীয় এলাকাবাসিকে বিভিন্ন সমস্যা পোহাতে হচ্ছে।
জনগণের ভোটে জনপ্রতিনিধি হিসেবে একজন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার কথা থাকলেও ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদবাসি তাদের পছন্দের একজন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারছেন না প্রায় গত ২৯ বছর যাবৎ।
ফতুল্লা ইউনিয়র পরিষদের নির্বাচনটি সীমানা প্রাচীরের মামলার কারনে ২৯ বছর যাবৎ বন্ধের ফলে স্থানীয় এলাকার ভোটারগণ বঞ্চিত হচ্ছেন তাদের ভোটাধিকার থেকে।
১৯৯৪ সালে সীমানা নিয়ে সমস্যা হলে কদর আলী নামক এক ব্যাক্তি ১৯৯৬ সালে মামলা দায়ের করেন। ২০১৬ সালের ২২ মার্চ উচ্চ আদালত সীমানা প্রাচীর নির্ধারনের মামলাটি খারিজ করে দেয়। এছাড়া হানিফ মাতবর নামক অপর এক ব্যক্তি ২০০২ সালে আদালতে একটি রিট পিটিশন মামলা দায়ের করেন।
পিটিশন মামলাটি খারিজ হয় ২০১৬ সালে। মামলার খারিজ কোর্ট অর্ডার হয় ২০১৬ সালের ২২ মার্চ এবং অফিস অর্ডার হয় আগষ্ট মাসের ৮ তারিখ।
ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদবাসী ১৯৯২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারীর নির্বাচনের পর অদ্যাবধি কোন নির্বাচনী আমেজ পায়নি। তাই সরকার কর্তৃক স্থানীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণায় ফতুল্লাবাসীর মাঝে দেখা গেছে ভিন্ন আমেজ। আসন্ন ইউপি নির্বাচনে বিএনপির কোন প্রার্থীর নাম এখনো শোনা যাচ্ছেনা।
তবে সরকারদলীয় আওয়ামীলীগের অনেকেই নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের আশা প্রকাশ করলে ও সরকারদলীয় প্রভাবশালী শীর্ষ স্থানীয় ওই দুই নেতা মীর সোহেল ও ফাইজুলের মধ্যেই মূল লড়াই হবে। তবে প্রকাশ্যে কেউ মুখ না খুললেও মনোনয়ন পেতে ইতোমধ্যেই জোড় লবিং শুরু করে দিয়েছেন তারা। কেউ কেউ আবার নিজ সমর্থকদের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন ফতুল্লা ইউনিয়নের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান স্বপন। ১৯৯৩ সালের সর্বশেষ নির্বাচনে প্রয়াত চেয়ারম্যান নূর হোসেন নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি মারা গেলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে লুৎফর রহমান স্বপন দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি বর্তমানে অনেকটাই অসুস্থ। এবার তিনি নির্বাচন করবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ হিসেবে স্থানীয়রা জানায় গত এক মাস পূর্বে জুম্মা নামাজের সময় তিনি ফতুল্লা বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে নিজ অসুস্থতার কথা জানিয়ে আগামী ইউপি নির্বাচনে যোগ্য নেতা মনোনিত করার আহবান জানান।
তবে তার এই ঘোষণাকে কেউ কেউ নির্বাচনে অংশ গ্রহণের কৌশল মনে করছেন। সাধারণ মানুষের সহানুভূতি বা সাধারন ভোটারদের কাছে টানার জন্য তিনি এ কৌশল অবলম্বন করেছেন। অপরদিকে তার এই ঘোষণার পর নতুন হিসেব ছকতে শুরু করেছেন কেউ কেউ। যাই হউক না কেনো খুব সহজেই যে নৌকা প্রতীক পেয়ে তিনি নির্বাচন করবেন তা কিন্তু নয়।
নৌকা প্রতীক নির্বাচন করার আশায় ইতোমধ্যেই লবিং শুরু করেছেন জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফতুল্লা থানার যুবলীগের সভাপতি মীর সোহেল আলী। তার সমর্থকরাও তার পক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ ব্যানার ফেস্টুন করে প্রচারনা শুরু করে দিয়েছেন।
ফতুল্লা থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফাইজুল ইসলাম ও নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার জন্য দীর্ঘদিন থেকে বিভিন্ন সামাজিক কাজ করে যাচ্ছেন । তার অনুসারীরা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারনা চালাচ্ছেন।
ফতুল্লা থানা আওামীলীগের যুগ্ম-সম্পাদক ও থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ফরিদ আহম্মেদ লিটনও নৌকা প্রতিকে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার জন্য বেশ কিছুদিন ধরেই কাজ করে যাচ্ছেন। তার সমর্থকরাও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ব্যানার, ফেস্টুন করে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন।
ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সদস্য ও ছাত্রলীগ সভাপতি হাজী আবু শরিফুল হক ও চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেতে বিভিন্ন সামাজিক কাজ করছেন একই সাথে ব্যানার- ফ্যাস্টুন করে প্রচার চালাচ্ছেন।
তবে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের আর্শীবাদ যার উপর থাকবে তিনিই হতে পারেন ফতুল্লা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান।