ফতুল্লায় বুড়িগঙ্গা নদীতে তেলবাহী ট্রলারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দানা বাঁধছে রহস্য। এ ঘটনায় হতাহতদের সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর দেয়া তথ্যে রয়েছে গড়মিল। আহতের সংখ্যা, নিখোঁজ ব্যক্তির পরিণতি এমনকি নিহতের মরদেহ সম্পর্কে সংস্থাগুলো থেকে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন রকম তথ্য।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ঘটনার সময় এম.ভি মনপুরা নামের ওই ট্রলারে মাঝি ও মিস্ত্রিসহ মোট পাঁচ জন ছিলেন। তাদের মধ্যে খোকন নামে একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয় আগুন নিয়ন্ত্রণের পরপরই। স্থানীয়দের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে বাকিরা তাহলে কোথায়?
বৃহস্পতিবার দুপুরে কথা হয় ওই ট্রলারের মাঝি বারেকের সাথে। তিনি বলেন, আমরা পাঁচ জন ছিলাম। এর মধ্যে খোকনের মরদেহ পাওয়া গেছে, আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে কামাল নামে একজনকে। এছাড়া আরেক কর্মচারি বাবুল বাড়ি ফিরে গেছে। কিন্তু এখনও খোঁজ মেলেনি ফখরুল মিস্ত্রির।
নিহত খোকনের বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক ফখর উদ্দিন আহমেদ বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণের পর একজনের মরদেহ পাওয়া গিয়েছিল। পরে ওই মরদেহ ফতুল্লা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
নিখোঁজ ব্যক্তির বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, নিখোঁজের বিষয়ে আমাদের কেউ বলেনি। তবে, গতকাল স্থানীয়রা বলছিলো নিখোঁজের কথা। ট্রলারটি ডুবে গেছে। বিআইডব্লিউটিএ যদি সেটা উদ্ধার করে তাহলে জানা যাবে তার মধ্যে কোনো মরদেহ আছে কিনা।
এ বিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তাসলিম উদ্দিন বলেন, একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া এখনও একজন নিখোঁজ রয়েছেন। ওই ঘটনায় মেঘনা ডিপো কর্তৃপক্ষ একটি সাধারণ ডায়েরী করেছে।
এসময় উদ্ধারকৃত মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা। তবে, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (২৭ জুন দুপুর) ওই মরদেহ নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শেখ ফরহাদ বলেন, ফতুল্লার তেলের ট্রলারে অগ্নিকাণ্ডে নিহত একজনের মরদের আমাদের মর্গে আছে। এখনও ময়নাতদন্ত হয়নি। ময়নাতদন্তের পরে বিস্তারিত বলা যাবে।
এদিকে এ ঘটনায় আহতের সংখ্যা নিয়ে দেয়া সংস্থাগুলোর তথ্যেও গড়মিল পাওয়া গেছে। ফতুল্লা থানা পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস এবং ট্রলারের মাঝি বারেক এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন ওই ঘটনায় আহত একজন চিকিৎসাধীন আছেন। তবে, আহত সেই ব্যক্তি কোন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন সে বিষয়ে নিশ্চিত কোন তথ্য দিতে পারেননি তারা।
ইতোমধ্যে এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. সাকিব আল রাব্বি বলেন, ওই ঘটনায় একজন মারা গেছেন। এছাড়া আহত একজন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে এবং অপর একজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
এছাড়া আরও একজন সুস্থ আছেন বলে জানালেও তাৎক্ষণিকভাবে তাদের নাম জানাতে পারেননি তিনি।
একজন নিখোঁজ থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে সাকিব আল রাব্বি আরও বলেন, একজন মৃত, দুজন আহত ও একজন সুস্থ সহ আমরা মোট চারজনকে আইডেন্টিফাই করতে পেরেছি। নিখোঁজ থাকার কথা আমরাও শুনেছি। তবে, এ বিষয়ে কমপ্লিট কোনো তথ্য এখনও পাইনি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান মো. সাকিব আল রাব্বির কথার সূত্র ধরে ঢাকা মেডিকেল ও বার্ন ইউনিটে খোঁজ নেয় এই প্রতিবেদক। ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) বাচ্চু মিয়া বলেন, ওই ঘটনায় আহত কেউ ঢামেকে বা বার্ন ইউনিটে আসেনি। শুনেছি একজন পুড়ে মারা গিয়েছে, তার মরদেহও ঢামেকে আসেনি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমআরএ) সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বাবু জানান, ওই ঘটনায় হতাহতদের কেউ ঢামেক বা বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন থাকার তথ্য তাদের কাছেও নেই।
এ বিষয়ে কথা বলতে মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের ফতুল্লা ডিপোর ইনচার্জ শেখ জিয়াউল হকের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করে এমনকি ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, বুধবার (২৬ জুন) দুপুর ১টার দিকে ফতুল্লায় বুড়িগঙ্গা নদীতে তেলের ড্রামবাহী ওই ট্রলারে আগুন লাগে। এতে ট্রলারে থাকা ৮৬ ড্রাম পেট্রোল ও ৭০ ড্রাম ডিজেল একের পর এক বিস্ফোরিত হতে থাকে।
বিস্ফোরণের শব্দে মসজিদ, বাসাবাড়ি ও থানাসহ আশপাশের এলাকা কেঁপে উঠে। পরে ফায়ার সার্ভিসের দশটি ইউনিটের চেষ্টায় দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।