দীর্ঘদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে নির্যাতিত শত শত বাংলাদেশী নারী শ্রমিকদের দেশে ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি হতদরিদ্র ও অসহায় পরিবারের মৃত. প্রবাসী শ্রমিকদের লাশ সরকারি খরচে দেশে ফিরিয়ে এনে পরিবারের কাছে পৌঁছে দেয়ার মত মানবিক কাজ করে যাচ্ছেন সাহসী নারী সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি। এরই সূত্র ধরে ২৩ জুলাই প্রথম প্রহরে কার্গো বিমানের একটি ফ্লাইটে করে পটুয়াখালির হতদরিদ্র আব্দুর রশিদ মৃধার ছেলে জহিরুল ইসলামের লাশ দেশে এসে পৌঁছায়।
জানা গেছে, ২৩ জুলাই (বুধবার) ভোর রাত ৪টা ২৫ মিনিটে কার্গো বিমানের BS382 ফ্লাইট যোগে ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায় রিয়াদে সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত. জহিরুল ইসলামের লাশ। লাশটি তার পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেয়ার পাশাপাশি দাফনকার্য সম্পাদনে সহযোগিতায় লাশ বহনের জন্য সরকারি ফ্রি এম্বুলেন্স সেবার ব্যবস্থাও করে দেন প্রীতি।
এসময় দাফন কাফনের প্রয়োজনে মৃত. জহিরুলের পরিবারের হাতে ৩৫০০০ টাকার চেক তুলে দেয়া হয়।
এসময় তার সাথে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক কাউসার সরকার, সাংবাদিক সাব্বির শেখ ও মৃতের পরিবার।
সৌদির রিয়াদ থেকে দূতাবাস কর্মকর্তা মো. আরশাদ জানান, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি আমাদের একাধিক দূতাবাস কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে জানান, গত ৩০ জুন রিয়াদের হাইল নামক স্থানে মো. জহিরুল ইসলাম (পাসপোর্ট নং- A03016593) সড়ক দূর্ঘটনায় মারা গেছেন। মৃতদেহটি যে করেই হোক সরকারি খরচে বাংলাদেশে পাঠানোর জন্য সহযোগিতা চান তিনি। তবে কিছু আইনি জটিলতা থাকায় আমরা তাকে দ্রুত এ ব্যাপারে সহযোগিতা করতে পারছিলাম না। তবে তিনি একজন সাহসী নারী, তিনি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড সহ বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করে সকল আইনী জটিলতার সমাধান করে মৃতদেহটি দ্রুত দেশে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন এবং আমি এবং আমার টিম যথাসাধ্য তাকে এই মানবিক কাজে সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি।
সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি বলেন, ২০২৩ সালের ৩ জানুয়ারি কর্মসংস্থানের খোঁজে সৌদিতে পাড়ি জমায় পটুয়াখালির হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান জহিরুল ইসলাম। মৃত্যুকালীন সময়ে তিনি তার কর্মস্থল থেকে পলাতক ছিলেন। তার কোনো নিয়োগকর্তা ছিল না। এমনকি সৌদিতে তার লাশ বাংলাদেশে পাঠানোর বিশাল খরচ বহন করার মত কেউ ছিল না। নারায়ণগঞ্জের পাগলা বৈরাগীবাড়ি এলাকার ভাড়াটিয়া মৃতের হতদরিদ্র পরিবারটি যখন লোকমুখে শুনে আমার কাছে আসেন এবং কান্নাজড়িত কণ্ঠে তাদের সন্তানকে শেষবার দেখার জন্য অনুরোধ করেন, তখন আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারি ৩০ জুন সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত হবার পর মৃতদেহটি হাইল বাগা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে রাখা আছে। তবে নিয়োগকর্তা না থাকা, কর্মস্থল থেকে পলাতক থাকা সহ মৃত্যু নিয়ে বড় ধরনের একটি আইনী জটিলতা থাকায় খুব সহজে মৃতদেহটি দেশে সম্ভব ছিল না। তাছাড়া প্রতিদিন অসংখ্য বাংলাদেশী প্রবাসী নারী-পুরুষ কর্মী মারা যাচ্ছেন সৌদিতে। সবার লাশ সরকারি খরচে দেশে পাঠানোর মত ফান্ড সরকারের থাকে না। এছাড়া সবাই এই সিস্টেমগুলোই জানে না। তবে শেষ পর্যন্ত জহিরুলের মায়ের কাছে তার বুকের ধনকে শেষবারের মত দেখার সুযোগ করে দিতে পেরেছি, সৃষ্টিকর্তার কাছে লাখো কোটি শোকরিয়া এবং রিয়াদ দূতাবাস সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের সকল কর্মকর্তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আসলে তারা সবাই সরকারি চাকরি করেন ঠিকই, কিন্তু তাদের মাঝে দেশপ্রেম আছে বলেই তারা আমাকে কাজটিতে ঐকান্তিক সহযোগিতা করেছেন।
প্রীতি আরও বলেন, পরবর্তীতে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করব মৃত. জহিরুলের হতদরিদ্র পরিবারকে আর্থিক অনুদান আদায় করে দিতে।
উল্লেখ্য, প্রবাসে নানা কারণে নিহত রেমিটেন্স যোদ্ধাদের মৃতদেহ সরকারি খরচে দেশে আনা সহ মানবিক এই নারী সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি এ পর্যন্ত সৌদিসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে নির্যাতিত অসংখ্য নারী কর্মীদের দেশে ফিরিয়ে এনেছেন। পাশাপাশি প্রবাসীদের কর্মক্ষেত্রে নানা ধরনের সমস্যায় তিনি বরাবরই তাদের পাশে থেকে সহযোগিতা করে আসছেন। বিশেষ করে তিনি প্রবাসী নারী শ্রমিকদের পারিশ্রমিকসহ কর্মস্থলে তাদের অধিকার আদায় ও তাদের কল্যাণে দীর্ঘদিন ধরে ব্যক্তিগতভাবে কাজ করে চলেছেন।